কলকাতা, 22 ডিসেম্বর: প্রতি বছরের মতো এ বছরেও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অপরাজিতা আঢ্য ও মালা সেনের নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র 'শিল্পী-অ্যান আর্ট ডে রিদিম'-এর বার্ষিক অনুষ্ঠান । এ বছরের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শাখার শিল্পীদের নিয়ে নানা পর্যায়ের নৃত্যের পাশাপাশি মহাভারত নির্ভর এক বিশেষ উপস্থাপনা উপহার দিলেন অপরাজিতা আঢ্য ও মালা সেন ।
মহাভারতে উপেক্ষিতা অর্জুন-পত্নী তথা নাগকন্যা উলূপীর জীবন নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে তুলে ধরলেন তাঁরা । নৃত্যনাট্যে উলূপীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মালা সেন ৷ সূত্রধরের চরিত্রে ছিলেন অপরাজিতা আঢ্য ৷ অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন 'শিল্পী-অ্যান আর্ট ডে রিদিম'- এর শিল্পীরা । নৃত্যনাট্যটি লিখেছেন ডক্টর অমরেশ ভট্টাচার্য, সুরারোপ ও শব্দগ্রহণে অর্ঘ্যকমল । কিন্তু হঠাৎ কেন নৃত্যনাট্যে উলূপীর আখ্যানের পরিবেশন ?
সে বিষয়ে অপরাজিতা আঢ্য বলেন, "একটা কথা ভীষণ ভাবে প্রচলিত আছে, যা নেই ভারতে, তা নেই মহাভারতে । আজ যে সারা দেশজুড়ে নারীর প্রতি অবহেলা, দলিত, নিপীড়িত মানুষের ক্রমাগত আর্তনাদ, তারা যেন সৃষ্টির আদি থেকেই একইভাবে আর্তনাদ করে গিয়েছেন । মহাভারতের অসংখ্য চরিত্র তার উজ্জ্বল প্রমাণ । উলূপী তাঁদের মধ্যে অন্যতমা ।"
তাঁর কথায়, "অর্জুনকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেও শুধুমাত্র অনার্য হওয়ার কারণে সম্মান পাননি এই নারী । নিজের অন্তিম সম্বল, সন্তান ইরাবানের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বলিদান হওয়ার পরেও তিনি কাব্যে উপেক্ষিতা বৈকি । তাঁর জন্ম গৌরব ছিল না, তাই তাঁর প্রেম, বলিদান, ইচ্ছার প্রাধান্য কেউ দেয়নি ।"
অপরাজিতার সংযোজন, "আজকের পৃথিবীতে নারী এমনিই উপেক্ষিতা, তার উপর যদি তিনি হন প্রান্তিক, তবে সেই উপেক্ষা শতগুণ বেড়ে যায় । তবে এত কিছুর পরেও উলূপীদের দমানো যায় না, তাদের ভালোবাসা কমানো যায় না কিছুতেই । আমাদের নৃত্যনাট্য সেই সমস্ত উলূপীদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য, হার না মানা উলূপী ও তাঁর মতো অসংখ্য নারীদের প্রতি এই নৃত্যনাট্য একটা মাতৃতান্ত্রিক তর্পণ বলা যায় ।"