ETV Bharat / international

দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মহাত্মার আদর্শে অনুপ্রাণিত আধুনিক বিশ্ব - MAHATMA GANDHI DEATH ANNIVERSARY

মহাত্মা গান্ধির প্রয়াণ দিবস 'শহিদ দিবস' হিসাবে পালিত হচ্ছে ৷ বিশ্বজুড়ে ভাবনা-চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বহু মানুষ ৷ রইল চারজনের কথা ৷

Legacy of Mahatma Gandhi across the world
মহাত্মা গান্ধির প্রয়াণ দিবসে 'শহিদ দিবস' (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 30, 2025, 10:59 PM IST

নয়াদিল্লি, 30 জানুয়ারি: জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধির 77তম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার ৷ দেশের সীমা ছাড়িয়ে এদিন তাঁকে স্মরণ করছে সারা বিশ্ব ৷ কারণ, তাঁর ভাবনাচিন্তা ও দর্শন ভারত ভূখণ্ড পেরিয়ে অন্য দেশগুলিকেও প্রভাবিত করেছে ৷

মহাত্মার সত্য ও অহিংসার পথে চলার দর্শন পৃথিবীজুড়ে সেইসব মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, যাঁরা নিপীড়নের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার, সাম্য এবং মুক্তির লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ৷ আজ, তাঁর প্রয়াণ দিবসে সেরকম চারজনের কথা স্মরণ করছে ইটিভি ভারত ৷

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ ৷ সমাজে বর্ণবৈষম্যবাদের শিকার আমেরিকার বহু অশ্বেতাঙ্গ নাগরিক ৷ তাঁদের সমানাধিকারের জন্য লড়ছেন এক তরুণ ব্যাপটিস্ট মন্ত্রী । নাম মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ৷ মহাত্মা গান্ধিকে তিনি দেখেননি ৷ কিন্তু তাঁর কথায় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র নিজের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা পেলেন ৷ যেন তাঁর জন্যই কথাগুলি বলেছেন মহাত্মা ৷ চিরাচরিত পড়াশোনার সময় মার্টিন লুথার গান্ধির বিষয়ে জনতে পারেন ৷ অন্ধকারের মধ্যে তাঁকে আলো দেখালেন ভারতের এই স্বাধীনতা সংগ্রামী ৷ পরে তিনি মহাত্মার সম্পর্কে বলেছিলেন, "আমাদের অহিংস সামাজিক বদলের যে প্রযুক্তি, তার আলো দেখিয়েছিলেন গান্ধিই ৷" আদর্শ ভালোবাসার প্রতিফলন তিনি খুঁজে পেলেন মহাত্মা গান্ধির সত্যাগ্রহের মধ্যে ৷ ভালোবাসা সেখানে প্রতিশোধে বিশ্বাস করে না ৷ সেখানে সত্যের শক্তি দিয়ে নিপীড়িতদের বাঁচিয়ে তোলে ভালোবাসা ৷ ওয়াশিংটনে 'দ্য মন্টোগোমারি বাস বয়কট' মিছিলটি ছিল গান্ধির অহিংস আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত ৷

নেলসন ম্যান্ডেলা

দক্ষিণ আফ্রিকার শসিত মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাও মহাত্মা গান্ধির ভাবাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন ৷ জীবনের প্রথম দিকে আইনজীবী ও সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় গান্ধির অহিংস আন্দোলনের ভাবাদর্শের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় ৷ মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধিও দক্ষিণ আফ্রিকায় আইনজীবী হিসাবেই তাঁর জীবন শুরু করেছিলেন ৷ সেখানেই তিনি বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অহিংস পন্থা অবলম্বন করেছিলেন ৷

অশ্বেতাঙ্গদের সমানাধিকারের লড়াইয়ে নেলসন ম্যান্ডেলার পথ মহাত্মা গান্ধির থেকে কিছুটা আলাদা ছিল ৷ ম্যান্ডেলা মহাত্মার অহিংস আন্দোলনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতাকে পছন্দ করতেন ৷ কিন্তু পাশাপাশি তিনি এও বিশ্বাস করতেন যে বর্ণবৈষম্যবাদের নিষ্ঠুর নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও বাস্তবিক করে তুলতে হবে ৷ তিনি একসময় বলেছিলেন, "গান্ধি সবসময় আমার অনুপ্রেরণার উৎস। কিন্তু আমি জানতাম আমাদের সংগ্রামটাকে অন্য পথে পরিচালিত করতে হবে ৷"

এই লড়াইয়ে ম্যান্ডেলার জীবনের 27টি বছর কারাগারের অন্ধকারে কেটে গিয়েছে ৷ কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও তিনি কখনও গান্ধির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি ৷ জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি বিভক্ত রাষ্ট্রকে সত্য ও ক্ষমার মাধ্যমে জুড়তে চেয়েছিলেন, যা ছিল গান্ধির বিশ্বাস ৷ প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলার জমানা ছিল সুবিচার ও সমানাধিকারের প্রতি দায়বদ্ধ ৷ ম্যান্ডেলার মধ্যে বিশ্ব শুধু একজন নেতাকেই দেখেনি, তাঁর মধ্যে স্বয়ং গান্ধি বেঁচে ছিলেন, যিনি ঘৃণা ও বিভাজন মুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখতেন ৷

মালালা ইউসুফজাই

একবিংশ শতাব্দীতে নিপীড়নের ধরনটা বদলেছে ৷ তবে এযুগেও গান্ধির আদর্শেই লড়াই চলছে ৷ পাকিস্তানের ছোট্ট মেয়ে মালালা ইউসুফজাই বিশ্বাস করতেন, মানুষের মনে আলো পৌঁছানো সম্ভব শিক্ষার দ্বারাই ৷ তাঁকে তালিবানরা গুলি করে ৷ গুরুতর জখম হওয়ায় তাঁকে ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন ৷ এখন তিনি বিশ্বে সাহসিকতা ও লিঙ্গসাম্যের জ্বলন্ত প্রতীক ৷ মহাত্মা গান্ধি বরাবরই মানুষের অন্তরাত্মার জাগরণে শিক্ষার উপর জোর দিয়েছেন ৷ সেই একই পথে চলেছেন মালালাও ৷ তাঁর বিখ্যাত উক্তি, "একটি শিশু, একজন শিক্ষক, একটি বই এবং একটি পেন, পৃথিবী বদলে দিতে পারে ৷"

হিংসা আর হুমকির মুখে তাঁর স্বর আরও জোরালো হয়ে উঠেছিল ৷ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল মালালার প্রতিবাদী মনন ৷ তিনি বিশ্বাস করতেন, আলোচনা ও শিক্ষার মধ্যে দিয়েই পরিবর্তন আনা সম্ভব ৷ এটাই আধুনিক সত্যাগ্রহ ৷ পাকিস্তানের ছোটো গ্রাম থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ পর্যন্ত মালালা ইউসুফজাইয়ের এই যাত্রাপথ প্রমাণ করে যে মহাত্মা গান্ধি অতীতে সীমাবদ্ধ নেই ৷ যাঁদের মধ্যে একট আরও সুন্দর বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার সাহস আছে, তাঁদের হৃদয়ে জীবন্ত মহাত্মা গান্ধি ৷

সিজার চাভেজ

মেক্সিকো-আমেরিকার শ্রমিক নেতা সিজার চাভেজ ৷ ক্যালিফোর্নিয়ায় কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের নেতা হিসাবে তাঁর উত্থান ৷ যেখানে শ্রমিকদের দিন কাটে চরম দারিদ্রতা আর নিষ্পেষণে ৷

সমাজে বদল আনতে হলে যা দরকার, তা গান্ধির অহিংস আন্দোলনের আদর্শের মধ্যে খুঁজে পেলেন সিজার ৷ তিনি মহাত্মার আন্দোলনের ধরনগুলি খুব ভালো করে খুঁটিয়ে পড়েছিলেন ৷ সেখান থেকেই অনশন, বয়কট এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করে মানুষের নজর কাড়ার কৌশলগুলি জানতে পারেন ৷ পরে তা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের আন্দোলনে প্রয়োগ করেন ৷

1965 সালের 'দ্য ডেলানো গ্রেপ স্ট্রাইক' হয়েছিল, যা পাঁচ বছর ধরে চলেছিল ৷ এই আন্দোলন সরকারের নজর কেড়েছিল ৷ সেখানে তিনি অহিংস, শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে আন্দোলন চালিয়ে যান ৷ তিনি বিশ্বাস করতেন, কোনও কারণে ক্ষতি করার বদলে তা সহ্য করার মধ্যেই প্রকৃত শক্তি লুকিয়ে থাকে ৷

1968 সালে চাভেজের অনশন চলেছিল 25 দিন ধরে ৷ মহাত্মা গান্ধির ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি অনশন করেছিলেন ৷ তাঁর আন্দোলনের ফলেই পরবর্তীকালে ইউনাটেড ফার্ম ওয়ার্কার্স (ইউএফডব্লিউ) ইউনিয়ন গঠিত হত ৷ এর ফলে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য সদর্থক পরিবর্তন হয় ৷

মহাত্মা গান্ধির প্রভাবে সমাজ সংস্কারকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৷ তাঁর ভাবনা বিশ্বজুড়ে নাগরিক অধিকার, পরিবেশের প্রতি সুবিচার এবং শান্তি রক্ষায় উৎসাহ জুগিয়েছে ৷ আমেরিকায় সিজার চাভেজের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে মায়ানমারে গণতন্ত্রের দাবিতে আন সান সু কি'র সংগ্রাম- সর্বত্রই অগণিত মানুষের মধ্যে গান্ধির ভাবাদর্শ বেঁচে রয়েছে, যাঁরা অহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন ৷

নয়াদিল্লি, 30 জানুয়ারি: জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধির 77তম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার ৷ দেশের সীমা ছাড়িয়ে এদিন তাঁকে স্মরণ করছে সারা বিশ্ব ৷ কারণ, তাঁর ভাবনাচিন্তা ও দর্শন ভারত ভূখণ্ড পেরিয়ে অন্য দেশগুলিকেও প্রভাবিত করেছে ৷

মহাত্মার সত্য ও অহিংসার পথে চলার দর্শন পৃথিবীজুড়ে সেইসব মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, যাঁরা নিপীড়নের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার, সাম্য এবং মুক্তির লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ৷ আজ, তাঁর প্রয়াণ দিবসে সেরকম চারজনের কথা স্মরণ করছে ইটিভি ভারত ৷

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ ৷ সমাজে বর্ণবৈষম্যবাদের শিকার আমেরিকার বহু অশ্বেতাঙ্গ নাগরিক ৷ তাঁদের সমানাধিকারের জন্য লড়ছেন এক তরুণ ব্যাপটিস্ট মন্ত্রী । নাম মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ৷ মহাত্মা গান্ধিকে তিনি দেখেননি ৷ কিন্তু তাঁর কথায় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র নিজের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা পেলেন ৷ যেন তাঁর জন্যই কথাগুলি বলেছেন মহাত্মা ৷ চিরাচরিত পড়াশোনার সময় মার্টিন লুথার গান্ধির বিষয়ে জনতে পারেন ৷ অন্ধকারের মধ্যে তাঁকে আলো দেখালেন ভারতের এই স্বাধীনতা সংগ্রামী ৷ পরে তিনি মহাত্মার সম্পর্কে বলেছিলেন, "আমাদের অহিংস সামাজিক বদলের যে প্রযুক্তি, তার আলো দেখিয়েছিলেন গান্ধিই ৷" আদর্শ ভালোবাসার প্রতিফলন তিনি খুঁজে পেলেন মহাত্মা গান্ধির সত্যাগ্রহের মধ্যে ৷ ভালোবাসা সেখানে প্রতিশোধে বিশ্বাস করে না ৷ সেখানে সত্যের শক্তি দিয়ে নিপীড়িতদের বাঁচিয়ে তোলে ভালোবাসা ৷ ওয়াশিংটনে 'দ্য মন্টোগোমারি বাস বয়কট' মিছিলটি ছিল গান্ধির অহিংস আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত ৷

নেলসন ম্যান্ডেলা

দক্ষিণ আফ্রিকার শসিত মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাও মহাত্মা গান্ধির ভাবাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন ৷ জীবনের প্রথম দিকে আইনজীবী ও সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় গান্ধির অহিংস আন্দোলনের ভাবাদর্শের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় ৷ মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধিও দক্ষিণ আফ্রিকায় আইনজীবী হিসাবেই তাঁর জীবন শুরু করেছিলেন ৷ সেখানেই তিনি বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অহিংস পন্থা অবলম্বন করেছিলেন ৷

অশ্বেতাঙ্গদের সমানাধিকারের লড়াইয়ে নেলসন ম্যান্ডেলার পথ মহাত্মা গান্ধির থেকে কিছুটা আলাদা ছিল ৷ ম্যান্ডেলা মহাত্মার অহিংস আন্দোলনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতাকে পছন্দ করতেন ৷ কিন্তু পাশাপাশি তিনি এও বিশ্বাস করতেন যে বর্ণবৈষম্যবাদের নিষ্ঠুর নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও বাস্তবিক করে তুলতে হবে ৷ তিনি একসময় বলেছিলেন, "গান্ধি সবসময় আমার অনুপ্রেরণার উৎস। কিন্তু আমি জানতাম আমাদের সংগ্রামটাকে অন্য পথে পরিচালিত করতে হবে ৷"

এই লড়াইয়ে ম্যান্ডেলার জীবনের 27টি বছর কারাগারের অন্ধকারে কেটে গিয়েছে ৷ কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও তিনি কখনও গান্ধির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি ৷ জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি বিভক্ত রাষ্ট্রকে সত্য ও ক্ষমার মাধ্যমে জুড়তে চেয়েছিলেন, যা ছিল গান্ধির বিশ্বাস ৷ প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলার জমানা ছিল সুবিচার ও সমানাধিকারের প্রতি দায়বদ্ধ ৷ ম্যান্ডেলার মধ্যে বিশ্ব শুধু একজন নেতাকেই দেখেনি, তাঁর মধ্যে স্বয়ং গান্ধি বেঁচে ছিলেন, যিনি ঘৃণা ও বিভাজন মুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখতেন ৷

মালালা ইউসুফজাই

একবিংশ শতাব্দীতে নিপীড়নের ধরনটা বদলেছে ৷ তবে এযুগেও গান্ধির আদর্শেই লড়াই চলছে ৷ পাকিস্তানের ছোট্ট মেয়ে মালালা ইউসুফজাই বিশ্বাস করতেন, মানুষের মনে আলো পৌঁছানো সম্ভব শিক্ষার দ্বারাই ৷ তাঁকে তালিবানরা গুলি করে ৷ গুরুতর জখম হওয়ায় তাঁকে ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন ৷ এখন তিনি বিশ্বে সাহসিকতা ও লিঙ্গসাম্যের জ্বলন্ত প্রতীক ৷ মহাত্মা গান্ধি বরাবরই মানুষের অন্তরাত্মার জাগরণে শিক্ষার উপর জোর দিয়েছেন ৷ সেই একই পথে চলেছেন মালালাও ৷ তাঁর বিখ্যাত উক্তি, "একটি শিশু, একজন শিক্ষক, একটি বই এবং একটি পেন, পৃথিবী বদলে দিতে পারে ৷"

হিংসা আর হুমকির মুখে তাঁর স্বর আরও জোরালো হয়ে উঠেছিল ৷ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল মালালার প্রতিবাদী মনন ৷ তিনি বিশ্বাস করতেন, আলোচনা ও শিক্ষার মধ্যে দিয়েই পরিবর্তন আনা সম্ভব ৷ এটাই আধুনিক সত্যাগ্রহ ৷ পাকিস্তানের ছোটো গ্রাম থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ পর্যন্ত মালালা ইউসুফজাইয়ের এই যাত্রাপথ প্রমাণ করে যে মহাত্মা গান্ধি অতীতে সীমাবদ্ধ নেই ৷ যাঁদের মধ্যে একট আরও সুন্দর বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার সাহস আছে, তাঁদের হৃদয়ে জীবন্ত মহাত্মা গান্ধি ৷

সিজার চাভেজ

মেক্সিকো-আমেরিকার শ্রমিক নেতা সিজার চাভেজ ৷ ক্যালিফোর্নিয়ায় কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের নেতা হিসাবে তাঁর উত্থান ৷ যেখানে শ্রমিকদের দিন কাটে চরম দারিদ্রতা আর নিষ্পেষণে ৷

সমাজে বদল আনতে হলে যা দরকার, তা গান্ধির অহিংস আন্দোলনের আদর্শের মধ্যে খুঁজে পেলেন সিজার ৷ তিনি মহাত্মার আন্দোলনের ধরনগুলি খুব ভালো করে খুঁটিয়ে পড়েছিলেন ৷ সেখান থেকেই অনশন, বয়কট এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করে মানুষের নজর কাড়ার কৌশলগুলি জানতে পারেন ৷ পরে তা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের আন্দোলনে প্রয়োগ করেন ৷

1965 সালের 'দ্য ডেলানো গ্রেপ স্ট্রাইক' হয়েছিল, যা পাঁচ বছর ধরে চলেছিল ৷ এই আন্দোলন সরকারের নজর কেড়েছিল ৷ সেখানে তিনি অহিংস, শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে আন্দোলন চালিয়ে যান ৷ তিনি বিশ্বাস করতেন, কোনও কারণে ক্ষতি করার বদলে তা সহ্য করার মধ্যেই প্রকৃত শক্তি লুকিয়ে থাকে ৷

1968 সালে চাভেজের অনশন চলেছিল 25 দিন ধরে ৷ মহাত্মা গান্ধির ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি অনশন করেছিলেন ৷ তাঁর আন্দোলনের ফলেই পরবর্তীকালে ইউনাটেড ফার্ম ওয়ার্কার্স (ইউএফডব্লিউ) ইউনিয়ন গঠিত হত ৷ এর ফলে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য সদর্থক পরিবর্তন হয় ৷

মহাত্মা গান্ধির প্রভাবে সমাজ সংস্কারকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৷ তাঁর ভাবনা বিশ্বজুড়ে নাগরিক অধিকার, পরিবেশের প্রতি সুবিচার এবং শান্তি রক্ষায় উৎসাহ জুগিয়েছে ৷ আমেরিকায় সিজার চাভেজের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে মায়ানমারে গণতন্ত্রের দাবিতে আন সান সু কি'র সংগ্রাম- সর্বত্রই অগণিত মানুষের মধ্যে গান্ধির ভাবাদর্শ বেঁচে রয়েছে, যাঁরা অহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.