নয়াদিল্লি, 11 নভেম্বর: রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা যথেষ্ট উদ্বেগজনক ৷ সেই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট সোমবার স্পষ্ট করেছে, দূষণমুক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার ৷ এটি সংবিধানের 21 নম্বর ধারার দ্বারা সুরক্ষিত। কোনও ধর্মই এমন কার্যকলাপকে উৎসাহিত করে না যা দূষণ সৃষ্টি করে। দীপাবলির সময় দিল্লিতে আতশবাজির উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে ব্যর্থতার জন্য শীর্ষ আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই প্রশ্নই করেছে ।
বিচারপতি অভয় শ্রীনিবাস ওকা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের সামনে বিষয়টি উঠে আসে। দিল্লিতে বায়ুদূষণ সম্পর্কিত একটি মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করেছে আদালত। দিল্লি এবং তার আশপাশের এলাকায় খড় পোড়ানোর বিরুদ্ধে পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশজুড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের পরীক্ষা করার সময় সুপ্রিম কোর্ট এই মন্তব্য করেছে।
বিচারপতি ওকা বলেন, "দূষণমুক্ত পরিবেশে বসবাসের অধিকার প্রতিটি নাগরিকের একটি মৌলিক অধিকার, যা সংবিধানের 21 নং অনুচ্ছেদ দ্বারা সুরক্ষিত । প্রাথমিকভাবে, আমরা মনে করি যে কোনও ধর্মই দূষণ সৃষ্টি করে এমন কোনও কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করে না ৷ যদি স্রোতে গা ভাসিয়ে পটকা পোড়ানো হয়, তা নাগরিকদের স্বাস্থ্যের মৌলিক অধিকারকেও প্রভাবিত করে ।"
বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে সরকারের আইনজীবী বলেছেন, দিল্লি প্রশাসন সমস্ত পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করার পরে সারা বছর ধরে পটকা ফাটানোর নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ওকার কথায়, "আমরা 25 নভেম্বরের আগে (একটি) উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিচ্ছি । দিল্লি পুলিশ কমিশনারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। 25 নভেম্বরের আগে হলফনামা, বাজির উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য দিল্লি পুলিশের গৃহীত পদক্ষেপগুলি কার্যকর করা হোক ৷"
বেঞ্চ এনসিআরের মধ্যে থাকা রাজ্যগুলিকে তাদের বাজি উৎপাদন, সঞ্চয়স্থান, বিক্রয় এবং আতশবাজি ফাটা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে বলেছে। সমস্ত রাজ্যকে 25 নভেম্বরের আগে জবাব দিতে হবে বলে জানিয়েছে বেঞ্চ।
শুনানির সময়, বেঞ্চ মৌখিকভাবে মন্তব্য করে, কেউ যদি 21 ধারার অধীনে আতশবাজি পোড়ানোর অধিকার দাবি করে তবে সেই ব্যক্তির উচিত আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মামলা করা। রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি বলেছেন, দীপাবলি ছাড়াও অন্যান্য অনুষ্ঠান রয়েছে। সেখানেও বাজি ফাটে । এই প্রশ্নের উত্তরে বেঞ্চের পাল্টা জানতে চায়, তাহলে নিষেধাজ্ঞা শুধু দীপাবলিতেই সীমাবদ্ধ কেন ? এরপরই নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয় ।
কেন্দ্রের আইনজীবী বেঞ্চের সামনে যুক্তি দিয়েছিলেন, দিল্লি সরকার দশেরার ঠিক দু'দিন পরে 14 অক্টোবর বাজি ফাটানো নিয়ে নির্দেশ জারি করেছিল। তার আগে কিছুই করা হয়নি । এরপর বেঞ্চ জানতে চেয়েছে কবে পর্যন্ত বাজি সংক্রান্ত লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ? এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের কৌঁসুলি বলেছেন, "আমাদের লাইসেন্স দিতে হবে কারণ 14 অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল ।"
বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে, আতশবাজি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে, দিল্লি সরকার অসহয়তা দেখিয়েছে। দিল্লি পুলিশকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বেঞ্চ বিস্মিত হয়েছিল কেন দিল্লি সরকার 14 অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বিলম্ব করেছে ৷ এটা সম্ভব যে এর আগে অনেকেই আতশবাজি মজুত করে রেখেছিলেন । শীর্ষ আদালত, এভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করাকে নিছক চোখে ধুলো দেওয়া বলে অভিহিত করে ৷ রাজধানীতে আতশবাজি নিষেধাজ্ঞা ব্যাপকভাবে কার্যকর করতে এবং শুধুমাত্র কাঁচামাল বাজেয়াপ্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য প্রশ্নের মুখে পড়ে দিল্লি পুলিশ ৷
বেঞ্চ দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে বাজি ফাটানোয় নিষেধাজ্ঞার আদেশ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষকে অবিলম্বে অবহিত করতে নির্দেশ দিয়েছে । বেঞ্চ বলেছে, "আমরা দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে একটি বিশেষ সেল গঠন করার নির্দেশ দিই যাতে পটকা ফাটানো নিষিদ্ধ নিশ্চিত করা যায়..."।