মালদা, 3 জানুয়ারি: একসময় মালদা জেলায় তৃণমূল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ একা ঘাসফুলের ঝাণ্ডা হাতে পথে পথে ঘুরে বেরিয়েছেন দুলাল সরকার ৷ পরবর্তী সময়ে দলীয় কোন্দলে ব্যকফুটে চলে যান তিনি ৷ মৃত্যুর পর তাঁরই নাম দলীয় নেতৃত্বের মুখে ৷ প্রত্যেকে বলছেন, এ এক অপূরণীয় ক্ষতি৷ যে বা যারা তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল, তাদের খুঁজে বের করতেই হবে ৷ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ৷
স্থানীয়রা বলছেন, জেলার রাজনীতিতে দুলালবাবু ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্র ছিলেন ৷ তিনি প্রকাশ্যেই দলের সমালোচনা করতেন৷ তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে বিরোধীদের বিঁধতেন ৷ আবার সেই বিরোধী নেতা-নেত্রীদের সঙ্গেই হেসে কথা বলতেন ৷ একসময় ভবানী মোড় থেকে রেল স্টেশন ছাড়িয়ে সুকান্তপল্লিতে রাজত্ব করত সমাজবিরোধীরা ৷ সন্ধের পর মানুষজন ওই এলাকায় যেতে ভয় পেত ৷ তিনি সেই সমাজবিরোধীদের বোতলবন্দি করে রেখেছিলেন ৷
এলাকার বাসিন্দাদের আরও বক্তব্য, একদিকে তিনি ছিলেন গরিব-দরদী৷ অন্যদিকে তাঁকে জমি মাফিয়া বলেও সম্বোধন করতেন অনেকে ৷ এমন একজন দুঁদে রাজনীতিবিদের এই মৃত্যুর ঘোর থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারছেন না মানুষজন ৷ একই পরিস্থিতি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বেরও ৷
শাসক দলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলছেন, “এই ঘটনায় দলের অপূরণীয় ক্ষতি হল ৷ বাবলাদা তৃণমূলস্তর থেকে জেলাস্তর পর্যন্ত দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ৷ সবসময় মানুষের কথা বলতেন ৷ দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন ৷ সেই বাবলাদা এভাবে চলে যাওয়াটা দলের পক্ষে বিশাল ক্ষতি ৷ এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে, আমরাও তা বুঝতে পারছি না ৷ কিন্তু এই ঘটনার পিছনে কার মাথা ছিল, আমরা সেটাই জানতে চাই ৷ পুলিশ তাকে খুঁজে বের করুক ৷”
মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের বক্তব্য, “আমরা এক অভিভাবককে হারালাম ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম দিন থেকে ছিলেন তিনি ৷ মালদা জেলায় দলকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ দলের জেলা সভাপতি ছিলেন ৷ 1995 সাল থেকে তিনি টানা কাউন্সিলর ৷ একবারও ভোটে হারেননি ৷ সদাহাস্যময় এই মানুষটির এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না ৷ শত্রুর সঙ্গেও হাসিমুখে কথা বলতেন ৷ তাঁর মৃত্যুতে দলের অপূরণীয় ক্ষতি হল ৷ মালদার ইতিহাসে এমন নৃশংস খুন আগে কখনও ঘটেনি ৷ আমরা চাই, এই ঘটনার পিছনে থাকা মূল মাথাটা বেরিয়ে আসুক ৷ নইলে আগামিদিনে এমন আরও ঘটনা ঘটতে পারে ৷”
রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম নুরের কথায়, “এই ঘটনা আমরা এখনও মানতে পারছি না ৷ ঘটনার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে ৷ পুলিশকে সেটা খুঁজে বের করতে হবে ৷ বাবলাদা ছিলেন আমার অভিভাবকের মতো ৷ কোনও সমস্যায় পড়লেই তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতাম ৷ তাঁর মৃত্যু দলের কাছে বড় ধাক্কা ৷ এই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না ৷”
দুলালবাবুর সঙ্গে প্রায় একই সময়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব ৷ তাঁর কথায়, “বাবলার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল ৷ কলকাতা যাওয়া বা আসার পথে সময় পেলে ওর বাড়ি যেতাম ৷ খাওয়া সারতাম ৷ এই ঘটনার পিছনে যে বড় চক্রান্ত রয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ৷ পুলিশ সেটা দেখছে ৷ তবে ওর মৃত্যু মালদা জেলা তৃণমূলে এক অপূরণীয় ক্ষতি ৷”
জেলা কংগ্রেসের অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক মোস্তাক আলম বলেন, “শুধু রাজনীতিবিদ নয়, একজন সমাজকর্মী হিসাবে জেলায় পরিচিত ছিলেন বাবলা সরকার ৷ তিনি মানুষকে সাহায্য করতেন ৷ একসময় আমরা একসঙ্গে রাজনীতি করেছি ৷ পরে সে তৃণমূলে যোগ দেয় ৷ গতকাল ঘটনাটি শুনে আমরা হতবাক হয়ে যাই ৷ ওর এভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছি না ৷ ওর এভাবে চলে যাওয়া জেলার রাজনীতিতে বড় ক্ষতি ৷ কিন্তু এই ঘটনার রিং মাস্টার কে, সেটা পুলিশকে খুঁজে বের করতেই হবে ৷”
বিজেপি নেতা তথা উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মুর মন্তব্য, “শুধু একজন রাজনীতিবিদ কিংবা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসাবেই নয়, মানুষ বাবলা সরকারকে একজন ভালো মানুষ হিসাবে চিনত ৷ কেউ কোনও সাহায্যের আবেদন নিয়ে গেলে তিনি তাঁকে ফেরাতেন না ৷ দীর্ঘদিন রাজনীতি করার সুবাদে প্রতিটি দলের নেতা ও নেত্রীদের সঙ্গেই তাঁর ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল ৷ প্রত্যেকের সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলতেন ৷ এমন একজন মানুষর এভাবে অকালে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না ৷ তাঁর মৃত্যুতে জেলার রাজনীতিতে একটা শূন্যস্থান তৈরি হল ৷”