জয়পুর, 12 অগস্ট: ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাজস্থান ৷ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় ৷ বিপন্ন হয়েছে জনজীবন ৷ জলে ডুবে এবং বাড়ি ধসের মতো পৃথক ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে 23 জন প্রাণ হারিয়েছেন । এর মধ্যে ভারতপুরে 7, জয়পুরে 5, ঝুনঝুনুতে 3, করৌলিতে 2, উদয়পুরে 2, বাঁশওয়ারা বেওয়ার 1, যোধপুর 1 এবং কেকরিতে 1 জনের মৃত্যু হয়েছে ।
হাওয়া অফিস পূর্ব রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে এবং আরও কয়েকটি অংশে আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে । রাজ্যের সাতটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতার মধ্যে সোমবার জয়পুর, জয়পুর গ্রামীণ, করৌলি, গঙ্গাপুর সিটি, সাওয়াই মাধোপুর, দৌসা এবং ভরতপুরের স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে । এ দিকে পূর্ব রাজস্থানে অবিরাম বৃষ্টি চলছে ।
জানা গিয়েছে, সর্বশেষ যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি হল জয়পুরের কানোটা বাঁধে ৷ যেখানে রবিবার পাঁচ যুবকের জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে । পরে তাঁদের দেহগুলি উদ্ধার হয় ৷ অ্যাসিস্টেন্ট পুলিশ কমিশনার (এসিপি) মুকেশ বলেন, "ছয় যুবক কানোটা বাঁধে পিকনিক করতে এসেছিল । তাঁরা সবাই স্নানের জন্য জলে নেমেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে পাঁচজন ভেসে যায় । তাঁদের মধ্যে একজন কোনওরকমে নিজের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয় ৷"
স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ) এবং সিভিল ডিফেন্স দলগুলি অভিযান চালিয়ে দেহগুলি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় । পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম হল- হর্ষ নাগোরা (20), বিনয় মীনা (22), বিবেক মহর (22), অজয় মহর (22) এবং হরকেশ মীনা (24) । নিহত যুবকদের মধ্যে তিনজন শাস্ত্রী নগরের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে ৷ একজন দাদি কা ফটকের এবং একজন নাই কি থাডির বাসিন্দা ।
ভরতপুরে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যু:রবিবার আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনায় ভরতপুরে নদীতে স্নান করতে গিয়ে একই পরিবারের সাতজনের ডুবে গিয়েছেন । তাঁদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান জারি রয়েছে ৷ এ দিকে শ্রীনগর গ্রামের আট যুবক ভরতপুরের বনগঙ্গা নদীতে স্নান করছিলেন । জানা গিয়েছে, পা পিছলে একের পর এক গভীর জলে পড়ে ডুবে যান তাঁরা । নিহতরা হলেন পবন সিং জাটভ (20), সৌরভ জাটভ (18), গৌরব জাটভ (16), ভূপেন্দ্র জাটভ (18), শান্তনু জাটভ (18), লক্ষ্মী জাটভ (20) এবং পবন জাটভ (22) ।
চারটি জেলায় স্কুল বন্ধ:বৃষ্টি বিপর্যস্ত রাজস্থানের পরিস্থিতির পর্যালোচনা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা প্রশাসনের উচ্চপ্রদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন ৷ বৃষ্টিতে চারটি জেলা সাওয়াই মাধোপুর, করৌলি, ভরতপুর এবং দৌসার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৷ ওই জেলার সমস্ত স্কুল সোমবার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । রবিবার মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে ত্রাণ বিলি করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ পাশাপাশি আগামিদিনের জন্য হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি । ভজনলাল শর্মা বলেন,"যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরিয়ে আনতে হবে ।"
হাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত 24 ঘণ্টায় রাজ্যের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে করাউলিতে, প্রায় 400 মিমি অর্থাৎ 16 ইঞ্চি । এছাড়াও, টঙ্কের নিওয়াইতে 137 মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, করৌলির শ্রী মহাবীর জিতে 118 মিমি বৃষ্টি হয়েছে, বারানে 115 মিমি বৃষ্টি হয়েছে, সিকরাইতে 108 মিমি বৃষ্টি হয়েছে এবং রাজধানী জয়পুরে প্রায় 100 মিমি অর্থাৎ 4 ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছে । এ দিকে করৌলির হিন্দাউনে 93 মিলিমিটার বৃষ্টির পর স্বস্তি বোধ করেছে মানুষ । তবে গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে জল জমার কারণে নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি এখনও বিরাজ করছে ।
সোমবারও রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ৷ যার জন্য সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর । হাওয়া অফিস ভরতপুর, সাওয়াই মাধোপুর, দৌসা, করৌলি, আলওয়ার জেলার কোথাও কোথাও বজ্রবিদ্যুত-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে । একই সঙ্গে জয়পুর, বুন্দি, টঙ্ক, সিকর, নাগৌর, ঝুনঝুনু, বারান, কোটা, ভিলওয়ারা জেলায় মাঝারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে । আগামী 5 দিন জয়পুর, ভরতপুর, আজমির ও কোটা বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর ।
জরুরি নম্বর