কলকাতা, 15 জানুয়ারি: সাম্প্রতিক অতীতে মালদা নিয়ে বারবার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে । বুধবার দক্ষিণ 24 পরগনার ফলতায় সেবাশ্রয় প্রকল্পের পরিদর্শনে গিয়ে সেই অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখেই পড়তে হল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে । সেখানে কোনও রাখঢাক না-করে দলে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে তা মেনে নিলেন তিনি । একইসঙ্গে, দলীয় কর্মীদের বার্তা দিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের সিপিএমের মতো ভুল করলে চলবে না ।
এদিন মালদা নিয়ে সাংবাদিকদের চোখাচোখা প্রশ্নের মুখে করতে হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে । এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "মালদার দুলাল সরকারের ঘটনায় তৃণমূলের একজন গ্রেফতার হয়েছেন । 34 বছরের সিপিএমের জমানায় সিপিমের কোনও নেতা গ্রেফতার হয়েছেন ? গুজরাতে বিজেপির কোনও নেতা কখনও গ্রেফতার হন ? প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তদন্ত তদন্তের মতো এগোবে । কেউ কোনও অপরাধ করলে ছাড় পাবে না । এটা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন । অপরাধীর কোনও জাত, ধর্ম হয় না । আগামী দিনেও ব্যবস্থা নেব ।"
তাঁর আরও সংযোজন, "সরকার কোনও গণৎকার বা জ্যোতিষ নয়, যে আগে থেকে জেনে আটকানো যাবে । একটা ঘটনা ঘটার পরে রাজ্য প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ । মালদহে দুলাল সরকার খুনের পরে দোষীরা ধরা পড়েছে ।"
অভিষেকের কথায়, "অপরাধ তো অনেক জায়গায় হয় । বিজেপির কত লোক তো কত কিছু করেছে । বিজেপি নেতার ছেলে কৃষকদের গাড়ি চাপা দেওয়ার পরেও বাবা টিকিট পেয়েছে । উন্নাওয়ের এমএলএ ধর্ষণ করেও দলে ছিলেন । ব্রিজভূষণ সিং শ্লীলতাহানি করেছেন, বিজেপি আড়াল করেছে । ভুলে যাচ্ছেন সিপিএমের অত্যাচার ? বানতলা, নেতাই, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম - ভুলে যাচ্ছেন ? কিন্তু আমরা অপরাধের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স । দলীয় শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে কেউ নয় । নিচুতলার কর্মী বা আমি - সবাই একই নিয়ম মেনে চলি । তাই বলছি, সবাইকে বিনয়ী হতে হবে । মানুষের কাছে যেতে হবে । অহঙ্কারের কোনও জায়গা নেই ।"
একইসঙ্গে, এদিন দলের অভ্যন্তরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েও সরব হয়েছেন অভিষেক । এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি জানান, "দল বড় হলে এ ধরনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব স্বাভাবিক । গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সব জায়গাতেই থাকে । তবে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে কখনওই যাঁরা দলকে দুর্বল করতে চান তাঁদের রেয়াত করা হবে না ।"
অভিষেকের কথায়, "গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সব জায়গায় থাকে । পরিবারেও ঝগড়া থাকে । একটা এত বড় রাজনৈতিক দল । লক্ষের উপর দলের পদাধিকারী । এত বড় পরিবার । সেখানে দু'চারজনের মধ্যে মতবিরোধ, মতভেদ, মনোমালিন্য থাকতেই পারে । এটা স্বাভাবিবক । এটা পরিবার, সংসারের নিয়ম । তবে তার মানে এই নয় যে, আমি যা ইচ্ছে করে বেড়াব । যদি কেউ দলকে দুর্বল করতে চায় তার বিরুদ্ধে আগেও দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি ব্যবস্থা নিয়েছে, আগামীদিনেও নেবে । কেউ কোনও অপরাধ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে ।"
তিনি আরও বলেন, "দলের শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে কেউ নয় । বুথস্তরের কর্মীকেও দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে । আমাকেও দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে । যারা ভাববে আমরাই সর্বেসর্বা-কেউকেটা, তাদের তৃণমূলে স্থান নেই । যারা ভাবছে এলাকা দখল করে দল চালাব, তাদের কপালে বিপদ আছে । এই একই ভুল সিপিএম করত । একই ভুল অন্য জেলায় বিজেপি করেছে ।"