মেদিনীপুর ও কলকাতা, 28 জানুয়ারি: কুড়ি দিনের মাথায় ফের অসুস্থ মৃত মামনি রুইদাসের নবজাতক ৷ মঙ্গলবার তাকে ভর্তি করা হল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৷ অন্যদিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়ার ঘটনায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মেদিনীপুরের তিন অসুস্থ প্রসূতির মধ্যে মিনারা বিবি ছাড়া পেলেন আজই ৷
এদিকে মৃত মামনি রুইদাসের অসুস্থ সন্তানের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, শিশুটি মায়ের দুধ ঠিকমতো না পাওয়ার জন্যই বারবার তার পেটের সমস্যা হচ্ছে ৷ সে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ৷ চলতি মাসের প্রথম দিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সদ্যোজাতের জন্ম দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন পাঁচ জন প্রসূতি ৷ তাঁদের মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায় ৷ 10 জানুয়ারি মৃত্যু হয় মামনি রুইদাসের ৷ এই ঘটনায় কাঠগড়ায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল ৷
অসুস্থ মামনি রুইদাসের সদ্যোজাত সন্তান
একই মাসে দ্বিতীয় বার জন্মের কুড়ি দিনের মাথায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হল মামনির সদ্যোজাত সন্তান ৷ গতকাল রাতে অসুস্থ হওয়ার পর তাকে প্রথমে চন্দ্রকোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ এরপর তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয় ৷ তার চিকিৎসা চলছে ৷
হাসপাতাল সূত্রে খবর, জন্মের পর থেকে মাতৃদুগ্ধ পায়নি শিশুটি ৷ তাই তার শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে ৷ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান তারাপদ ঘোষের বক্তব্য "পেটের সমস্যা হয়েছিল শিশুটির ৷ এখন সে সুস্থ ৷ বাড়ির লোককে বোঝানো হচ্ছে, যাতে বাইরের খাবার কম খাওয়ানো যায় ৷" যদিও মামনি রুইদাসের স্বামী দেবাশিস রুইদাসের অভিযাগ, "শিশুটি প্রথম থেকে অসুস্থ ছিল ৷ প্রথমবার ভর্তি করার পরে ডাক্তাররা তার চিকিৎসা করে ছেড়ে দেন ৷ আবার গতকাল অসুস্থ হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ৷ কী চিকিৎসা হচ্ছে বুঝতে পারছি না !"
গত 10 জানুয়ারি অসুস্থ পাঁচ প্রসূতির মধ্যে মামনি রুইদাসের মৃত্যু হয় ৷ এরপর বাকি তিন জন প্রসূতির অবস্থার অবনতি হওয়ায় 12 জানুয়ারি তাঁদের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ৷ এই ঘটনায় খবরের শিরোনামে চলে আসে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ৷ চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ ওঠে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ৷
মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়ার ঘটনার তদন্তে স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল তদন্ত শুরু করে ৷ পাশাপাশি তদন্তে নামে সিআইডি ৷ তদন্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে 13 জন ডাক্তারের সাসপেনশন এবং অভিযোগও দায়ের হয় ৷ যা নিয়ে পাল্টা হাইকোর্টে মামলা করেন এক জুনিয়ার ডাক্তার ৷ সেই মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন ৷
এর মধ্যে 16 জানুয়ারি অসুস্থ প্রসূতি রেখা সাউয়ের সদ্যোজাতের মৃত্যু হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৷ এর দু'দিনের মাথায় মামনির রুইদাসের সদ্যোজাত শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে ৷ তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ দু'দিন পরই তাকে ছেড়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৷ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল, মৃত প্রসূতির সদ্যোজাত সন্তান পেটের সমস্যায় ভর্তি হয়েছিল ৷ সে মাতৃদুগ্ধ পাচ্ছে না বলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ৷
এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি 3 অসুস্থ প্রসূতিদের অবস্থা
এদিকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল ছাড়া পেলেন মেদিনীপুরের এক প্রসূতি ৷ মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়ার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মিনারা বিবি ৷ পরে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ৷ আজ দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেন মিনারা বিবি ৷ তিনি এখন ভালো আছেন ৷ চিকিৎসকেরা তাঁকে বেশ কিছু বিষয়ে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ৷
মিনারা বিবির ইউরিন আউটপুট স্বাভাবিক হচ্ছিল ধীরে ধীরে ৷ প্রয়োজন অনুযায়ী ডায়ালিসিসও করা হচ্ছিল তাঁর ৷ এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে তাঁকে পুরোপুরি অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল ৷ কিন্তু তারপর অবশ্য তাঁকে সবসময় অক্সিজেন সাপোর্টে রাখতে হচ্ছিল না ৷ এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ ৷
মিনারা বিবি বাড়ি ফিরলেও এসএসকেএম হাসপাতালের মেইন ব্লক-এ এখনও ভর্তি রয়েছেন বাকি দু'জন ৷ তাঁদের মধ্যে মাম্পি সিংয়ের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে ৷ হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা 3.8 হয়ে গিয়েছে ৷ আজ তাঁকে এক ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে ৷ এন্ডোস্কোপিও করা হয়েছে ৷ সেই রিপোর্টে তাঁর পেটে আলসার ধরা পড়েছে ৷ তাঁর শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা 4 হয়েছে ৷ তাঁর ডায়ালিসিস করা হচ্ছে ৷
অন্যদিকে আরেক অসুস্থ নাসরিন খাতুনের শারীরিক অবস্থাও সঙ্কটজনক ৷ তিনি এখনও আইটিইউতে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ৷ তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বের করার ট্রায়াল চলছে ৷