চন্দ্রপুর, 15 ফেব্রুয়ারি: "প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথা ধরা পড়ে, কে জানে..." কবিগুরুর লেখা এই গান যে কতটা অর্থবহ তা যাঁরা প্রেমে পড়েছেন তাঁরাই জানেন ৷ তবে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে ভালোবাসার অনেক নৃশংস ঘটনা। যা আঁতকে ওঠার মতোই ৷ তবে এই সব কিছু থেকে দূরে রয়েছে মহারাষ্ট্রের এই গ্রাম ৷ যেখানে প্রেম করেই বিয়ে করা যেন এক সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে ৷ 40 বছরে এই গ্রামে প্রায় 200 জনের প্রেম পেয়েছে পরিণতি ৷ যেতে চান সেই গ্রামে?
এক গ্রামবাসী বলেন, "আমি যখন পড়াশোনা করছিলাম তখন বাড়ির পাশে থাকা একটি মেয়ের প্রেমে পড়ি ৷ তারপর আমরা বিয়ে করি ৷ দেখতে দেখতে আমাদের 27 বছর বিয়ে হয়ে গিয়েছে ৷ আমাদের দুটি সন্তান রয়েছে ৷ তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই এখন আমাদের সুখী পরিবার ৷" উল্লেখ্য, গাভাতিলার প্রদীপ খোবরাগড়ে প্রেমে পরেন সুরেখার ৷ 1997 সালে তাঁরা বিয়ে করেন ৷ চারবছর প্রেম করার পর তাঁরা বিয়ে করেন ৷ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য জানকি তেলকাপল্লিওয়ার জানান যে তাঁদের বিয়ে ভিন্ন ধর্মের ছেলের সঙ্গে হয় ৷ 2011 সালে তাঁরা প্রেম করে বিয়ে করেন ৷ এখন তাঁরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছেন ৷
মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর থেকে 50 কিলোমিটার দূরে করঞ্জি গ্রাম 'লাভ ম্যারেজ' বা প্রেম করে বিয়ের জন্যই পরিচিত ৷ গত চার দশকে গন্ডপিপারি তালুকের করঞ্জি গ্রামে 200টিরও বেশি প্রেমের বিয়ে হয়েছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ারও এই গ্রামেরই বাসিন্দা। গ্রামবাসীদের দাবি, এখানে যাঁরা বসবাস করেন তাঁদের অধিকাংশের বিয়ে হয়েছে প্রেম করেই ৷ গ্রাম পঞ্চায়েতের 11 জন সদস্যের মধ্য 6 জন যার মধ্যে রয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, তাঁদের বিয়ে প্রেম করেই হয়েছে ৷ যেখানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন প্রেম করে বিয়েকে অস্বীকার করা হয়, খুনের মতো ঘটনা ঘটে৷ সেখানে দাঁড়িয়ে এই গ্রাম উদাহরণ তৈরি করেছে ৷
তবে এই পরিবর্তন আসেনি একদিনে ৷ আগে এই এলাকাও ছিল অপরাধপ্রবণ ৷ সে সময় গ্রামের এক মহিলা পঞ্চায়েত প্রধান বিয়ে করেন ভালোবেসে ৷ পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন এক উপ-প্রধান-সহ আরও চার সদস্য ৷ ফলে গ্রামে এই ঘটনা আলোড়ন তোলে ৷ অবশেষে ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান করতে উদ্যত হন গ্রামবাসীরা ৷ ভালোবাসা ও তার পরিণতি অপরাধ নয়, সেই বার্তা ছড়াতে থাকে গ্রামের অলিতে-গলিতে ৷ যার ফলে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক-যুবক-যুবতীর প্রেম নিয়ে এলাকার মানুষ তথা সমাজের কাছে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় না ৷ ফলে যেখানে ভালোবাসা আছে, সেখানে শান্তি আসতে বাধ্য ৷ ছোট্ট একটা গ্রামে বেড়ে ওঠা প্রেমের ভুবনে একে একে ডুবতে থাকেন অনেকেই ৷
বিষয়টি আরও ভালো করে বুঝতে আটের দশের বলিউডি ছবি কেয়ামত সে কেয়ামত তাক-এর একটি গানের স্মরণ নেওয়া যেতেই পারে। লাইনটি এরকম- "প্যায়ার নে জঁহা পে রখ্খা হ্যায়, ঝুঁম কে কদম একবার/ উহি সে খুলা হ্যায় কোই রস্তা, উহি সে গিরি হ্যায় দিওয়ার..."। মানে ভালোবাসা একবার কোথায় প্রবেশ করলে সব বাধা দূর হয়। নতুন রাস্তা খোলে।