নয়াদিল্লি, 16 এপ্রিল: কাজ নেই ৷ দিন দিন দেশে বাড়ছে বেকারত্বের হার ৷ বিরোধীদের এমন অভিযোগের মাঝেই এবার দেশবাসীর জন্য সুখবর বয়ে নিয়ে এল সাম্প্রতিক রিপোর্ট ৷ 2028 সালের মধ্যে ভারতে বেকারত্বের হার 97 বেসিস পয়েন্টে কমে আসবে ৷ এমনই সম্ভাবনা কথা উঠে এসেছে রিপোর্টে ৷ কারণ এই সময়ের মধ্যে দেশের অর্থনীতি 5 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছতে পারে, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে ৷
মঙ্গলবার থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) তার ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট আউটলুক 2030 রিপোর্টে বলেছে, বেকারত্বের হার 2024 সালে 4.47 শতাংশ থেকে কমে 2028 সালে 3.68 শতাংশে নামবে বলে অনুমান করা হয়েছে । ভারতের চাকরির বাজার পরিবর্তন হচ্ছে ৷ কারণ দেশ কোভিড-19 অতিমারীর পরে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে । দেশে জনসংখ্যার মধ্যে তরুণদের গড় বয়স 28.4 বছর ৷ এরাই অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের চাবিকাঠি হয়ে উঠবে ৷
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, 2026-27 সালের মধ্যে ভারতের 7.8 শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ জিডিপি বৃদ্ধির এই হারের সঙ্গেই ভারত 5-ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে ৷ শক্তিশালী ব্যক্তিগত খরচ এবং সরকারি বিনিয়োগের দ্বারা এই ধরনের বৃদ্ধি সম্ভব হবে ৷ 2024 সালে ভারতের জিডিপি মাত্র 4 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের নীচে থাকবে বলে অনুমান করা হয়েছে ।
ওআরএফ প্রেস বিবৃতিতে বলেছে, তাদের রিপোর্টটি এমন খাতগুলিকে চিহ্নিত করেছে যেগুলি দেশের 600 মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা ৷ 18-35 বছর বয়সি লোকদের উচ্চাকাঙ্খী হিসাবে বিবেচনা করে ৷ কারণ এই খাতগুলি সামনের বছরগুলিতে বৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসাবে কাজ করতে পারে । প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে ভারত যখন তার 5 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্যে পৌঁছবে তখন সামগ্রিক কর্মসংস্থান 22 শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, যেখানে বেকারত্ব 2028 সালের মধ্যে 97 বেসিস পয়েন্ট কমে যেতে পারে ৷
বিশেষ করে পরিষেবা খাতে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে চলেছে ৷ প্রতিটি ইউনিটের পরিষেবা আউটপুট বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য 0.12 শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে । রিপোর্টে দশটি বিশেষ করে উচ্চ-সুযোগপূর্ণ সাব-সেক্টরকে পরিষেবার ক্ষেত্রে একত্রিত করা হয়েছে । এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল পরিষেবা, আর্থিক পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য, আতিথেয়তা, ভোক্তা খুচরা, ই-কমার্স এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সম্পর্কিত পরিষেবা । দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি হল গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার, এবং এমএসএমই (ছোট ব্যবসায়ী) এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ।
পরিষেবা খাতে মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য উপায়ও রয়েছে । তাই নারীদের দক্ষতা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে আরও অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন ৷ রিপোর্টে এমনই যুক্তি দেওয়া হয়েছে । তবে ভারতে উৎপাদন খাতের ক্ষেত্রে অনুমানগুলি অতটা আশা যোগাচ্ছে না ৷ ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি বৃদ্ধি, ভারতের প্রতিযোগিতামূলক ব্যয় কাঠামো এবং মেক ইন ইন্ডিয়ার মতো ফ্ল্যাগশিপ স্কিমের মাধ্যমে দেশে জিনিসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই খাতে কর্মসংস্থানের তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না ৷
ওআরএফের ডিরেক্টর ও রিপোর্টের একজন লেখক নীলাঞ্জন ঘোষ বলেছেন, "পরবর্তী প্রজন্মের ভালো উদ্যোগগুলিকে উৎসাহিত করতে হবে, যা কর্মসংস্থান বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পানল করবে । একটি নতুন শ্রেণির উদ্যোক্তা চাকরির ক্ষেত্র সৃ্ষ্টি করতে পারে ৷ ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে প্রসারিত করতে পারে, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে পারে এবং যুবদের অংশগ্রহণকে উন্নীত করতে পারে ৷ কিন্তু আমাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রগুলিতে লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে না ৷ সকলে সমান সুযোগ পাবে ৷"
আরও পড়ুন:
- অগস্টে এক বছরে সর্বোচ্চ বেকারত্ব দেখেছে দেশ
- জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার বেড়ে 22.1 শতাংশ
- বাংলায় বেড়েছে কর্মসংস্থান, পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি ডেরেকের