পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ভারতের ইতিহাসে ভালো-খারাপের মেলবন্ধনের সাক্ষী '25 জুন' - Conundrum of June 25

The Conundrum of June 25: স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের ইতিহাসে একাধিক খারাপ সময় যেমন এসেছে ৷ তেমনি ভালো সময়ও দেখেছে দেশবাসী ৷ তেমনই একটি তারিখ হল 25 জুন ৷ যে তারিখটি ভারতের ইতিহাসে 'ভালো' ও 'খারাপ'-এর মেলবন্ধনের সাক্ষী ৷

Kapil Dev
1983’র বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে কপিল দেব ৷ (ফাইল চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 25, 2024, 10:43 PM IST

কলকাতা, 25 জুন: ভারতের ক্যালেন্ডারে 25 জুন বেশ গুরুত্বপূর্ণ! এর একদিকে যেমন আনন্দ ও গর্ব রয়েছে, ঠিক উল্টোদিকে রয়েছে, জরুরি অবস্থার লজ্জা ৷ 25 জুন, 1975 সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ সরকারিভাবে প্রথমবার সংবিধানের 352 ধারা লাগু করেছিলেন ৷ অর্থাৎ, দেশের 'আভ্যন্তরিণ অস্থিরতা'র পরিবেশে 'জরুরি অবস্থা' ঘোষণা করেছিলেন ৷ এই সময়টি স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায় বলে পরিচিত ৷ 1977 সালের 21 মার্চ পর্যন্ত, টানা দু’বছর জরুরি অবস্থা জারি ছিল দেশে ৷

21 মাসের সেই জরুরি অবস্থার সময়ে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধির ডিক্রি জারি করে শাসন ও পৈশাচিক নানা আদেশ, সকল ভারতীয় জন্য মেনে নেওয়া কঠিন ছিল ৷ সেই সময়ে নির্বাচন বাতিল করা হয়েছিল ৷ নাগরিক অধিকারক পদদলিত হওয়া এবং গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যমকে প্রতিপদে 'সেনসর' করা হচ্ছিল সরকার কর্তৃক ৷ এর ফলে সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়ে যায় ৷ সেই জরুরি অবস্থার 50 তম বর্ষের একদিন আগে, ফের একবার তারিখটি মনে করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷

তাঁর নেতৃত্বাধীন তৃতীয় এনডিএ সরকারের প্রথম অধিবেশন শুরুর একদিন আগে, 24 জুন 'জরুরি অবস্থা'র সেই লজ্জার কথা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী ৷ সেই সঙ্গে দেশ জুড়ে ফের একবার পুরনো সেই ক্ষত তাজা হয়ে উঠল ৷ সোমবার নরেন্দ্র মোদি তাঁর তৃতীয় এনডিএ সরকারের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগে বলেন, "আগামিকাল 25 জুন ৷ 50 বছর আগে এই তারিখটিতে ভারতের সংবিধানে একটা কালো দাগ লেগেছিল ৷ আমরা চেষ্টা করে চলেছি, যাতে সেই দাগ ভারতের সংবিধানে ফের না লাগে ৷"

তবে, 25 জুন দিনটি ভারতের ক্যালেন্ডারে শুধুমাত্র কালো দাগ হিসেবে উল্লেখিত ছিল 8 বছরের জন্য ৷ অর্থাৎ, 1983 সাল পর্যন্ত ৷ কিন্তু, কপিল দেবের নেতৃত্বে 1983 সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রথমবার প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপ জয়, 25 জুনের যন্ত্রণাকে আনন্দের রূপ দিয়েছিল ৷ সেই গর্বের বিশ্বকাপ 2011 সালে ভারত ফের একবার নিজেদের নামে করেছিল ৷ কিন্তু, 1983’র সেই জয়ের একটা আলাদাই জায়গা ছিল, আছে এবং থাকবে প্রত্যেক ভারতীয় মনে ৷ প্রত্যেক ক্রীড়া প্রেমী ভারতীয়ের মনে সেই দিনটি খোদাই করা রয়েছে ৷

ওই একটি দিনের পর বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের স্থান এক অন্য পর্যায়ে চলে গিয়েছিল ৷ ক্রিকেট খেলিয়ে প্রতিটি দেশের নজরে ভারতের গুরুত্ব বেড়েছিল ৷ সুনীল গাভাসকর, কপিল দেব এবং মহিন্দর অমরনাথদের দিকে নজর ঘুরে গিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটের ৷ পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই সময়ের গর্বের লাইন-আপের বিরুদ্ধে জয়, ভারতের স্থান বিশ্ব ক্রিকেটে সবার উপরে তুলে দিয়েছিল ৷ ক্লাইভ লয়েড, ভিভিয়ান রিচার্ডস, গর্ডন গ্রিনিচ, ডেসমন্ড হেনেস, ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নারস, অ্যান্ডি রবার্টস এবং মাইকেল হোল্ডিং, যে নামগুলি শুনলেই বিশ্বের প্রত্যেক ক্রিকেটারের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যেত ৷

সেই সময় ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যঙ্গের শিকার হওয়া কপিল দেব, প্রায় একার হাতে ভারতীয় ক্রিকেটকে অন্ধকার থেকে বের করে এনেছিলেন ৷ ভারতে 'ক্রিকেট' সংস্কৃতির সমাপ্তি থেকে, তাকে এক নতুন পথ দেখিয়ে, সমগ্র ক্রিকেট বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিলেন তিনি ৷ সেই উত্থান ভারতকে আজ ক্রিকেট বিশ্বের 'সুপার পাওয়ার' তৈরি করেছে ৷ ভারত 1984 সালে শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ জিতেছিল ৷ এর পরপরই 1985 সালে রথম্যানস কাপ এবং বেনসন অ্যান্ড হেজেস ওয়ার্ল্ড সিরিজ জয় ৷ যেখানে রবি শাস্ত্রী চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়ন (টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়) হিসেবে প্রথম ভারতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে অডি গাড়ি পুরস্কার পেয়েছিলেন ৷

এখান থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের মান অনেকটাই উপরে উঠে যায় ৷ ইংল্যান্ডের বাইরে প্রথমবার বিশ্বকাপ আয়োজিত হয় ভারতের মাটিতে 1987 সালে (রিল্যায়েন্স কাপ) ৷ তাই 25 জুন তারিখটা ভারতের জন্য খুবই বিশেষ ৷ সে ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি যে কোনও বিষয়কে বেছে নিতে পারেন- ভালো বা খারাপ, যা খুশি ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details