নয়াদিল্লি, 11 ফেব্রুয়ারি: ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম থেকে তথ্য না-মোছার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ মঙ্গলবার ইভিএম সংক্রান্ত একটি মামলায় নির্বাচন কমিশনকে এই নির্দেশ দেয় দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বিশেষ বেঞ্চ ৷
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) এবং নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী সর্ব মিত্তার ইভিএম মেশিনের পুড়ে যাওয়া মেমরি ও সিম্বল লোডিং ইউনিটগুলি পরীক্ষা করে দেখার আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের করে দেশের শীর্ষ আদালতে ৷ সেই মামলার শুনানিতে এদিন নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে 15 দিনের মধ্যে জবাব তলব করেছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ ৷ মামলার পরবর্তী শুনানি 3 মার্চ ৷
এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রবীণ আইনজীবী মনিন্দর সিংকে নির্দেশ দেয়, "কোনও তথ্য মুছবেন না এবং নতুন করে তথ্য লোড করবেন না ৷ ইভিএম পরীক্ষা করে দেখা হবে ৷"
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এডিআর-এর হয়ে এদিন আদালতে সওয়াল-জবাব করেন প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ৷ তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) অনুযায়ী শুধুমাত্র মক পোলের সময় ইভিএম-এর পরীক্ষা করা হয় ৷ তিনি জোর দেন, তাঁর মক্কেল চান কেউ ইভিএম-এর সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যারগুলি পরীক্ষা করে দেখুন, এই মেশিনের মাধ্যমে বাইরে থেকে কোনও কারসাজি করা যায় কি না ৷
এই সময় বেঞ্চ প্রশ্ন করে, একবার ভোটগণনা হয়ে গেলে মেশিনের পেপার ট্রেলটি বের করে নেওয়া হয় নাকি, তা মেশিনের মধ্যেই থাকে ? এর উত্তরে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, পেপার ট্রেলটির সেখানেই থাকার কথা ৷
গত বছরের 26 এপ্রিল ইভিএম-এর বদলে পুরনো ব্যালট পেপারের পদ্ধতিতে ভোট পরিচালনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ সেই মামলার রায়ে আদালত জানিয়েছিল, ইভিএম মেশিনগুলি সুরক্ষিত ৷ বুথ দখল বা মেশিনের কারচুপির তত্ত্ব উড়িয়েই দিয়েছিল শীর্ষ আদালত ৷
তবে নির্বাচনে পরাজিত ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে লিখিত আবেদন জানাতে পারেন, যাতে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে ইভিএম-এর 5 শতাংশের মধ্যে যে মাইক্রো-কন্ট্রোলার চিপগুলি লাগানো রয়েছে তা পরীক্ষা করা যায় ৷ এর জন্য যাবতীয় খরচ দিতে হবে ওই প্রার্থীকেই ৷
সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল 2024 সালের 1 মে থেকে সিম্বল লোডিং ইউনিটগুলিকে সিল করে রাখতে হবে ৷ একটি পাত্রের মধ্যে সুরক্ষিত করে রাখতে হবে এবং সেগুলি ইভিএম-এর সঙ্গে স্ট্রংরুমে রাখতে হবে ৷ ভোটের ফল ঘোষণার পর অন্ততপক্ষে 45 দিন পর্যন্ত সেগুলি রাখতে হবে ৷
একটি নতুন আবেদনে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এডিআর জানানয়, 2024 সালে ইভিএম-ভিভিপ্যাট মামলায় শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছিল ৷ এদিকে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম-গুলি যাচাই করে দেখার এসওপি সেই রায় মেনে করা হয়নি ৷
এরপর বেঞ্চ জানায়, রায়ে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা আবশ্যিক নয় ৷ কিন্তু অন্ততপক্ষে ইভিএম প্রস্তুতকারণ সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে ইভিএম-গুলি পরীক্ষা করানো উচিত ৷ দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, "আমরা যেটা বলতে চেয়েছিলাম যে, ভোট মিটে যাওয়ার পর কেউ যদি দাবি করে যে, একজন ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে তাঁর উপস্থিতিতে ইভিএম-গুলি পরীক্ষা করা হোক ৷ পুড়ে যাওয়া মেমরি বা মাইক্রোচিপসে কোথাও কারচুপি করা হয়নি তো ? তাহলে কেন তথ্য মুছে ফেলবেন ?"
তিনি আরও বলেন, "আপনারা কীভাবে কোনও কিছু রিলোড করেন, সেই পদ্ধতির বিস্তারিত আমরা জানতে চাই না ৷ তথ্য মুছবেন না, কোনও তথ্য রিলোড করবেন না ৷ শুধু কেউ একজন এসে পরীক্ষা করে যাচাই করে দেখুন ৷" এই পরীক্ষা করার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে দুই বিচারপতির বেঞ্চ ৷ কারণ, নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয় যে একটি ইভিএম পরীক্ষা করতে 40 হাজার টাকা দিতে হবে ৷ আদালত বলে, "এটা অত্যন্ত বেশি, 40 হাজার থেকে দামটা কমান ৷"
বেঞ্চ বলে, "আইনজীবী সিং (নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী) জানাচ্ছেন, যে একটি ছোট হলফনামা দিয়ে তারা ব্যাখ্যা করবে কী পদ্ধতিতে কাজ হয় ৷ তিনি আরও জানিয়েছে, কোনও তথ্য মোছা বা সংশোধন করা হবে না ৷"