ETV Bharat / bharat

বনভূমি দখল, তৈরি করেছেন রাস্তাও ! কাঠগড়ায় জগনের মন্ত্রী - PEDDIREDDI RAMACHANDRA REDDY

29 জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দক্ষিণের জনপ্রিয় সংবাদপত্র ইনাডু অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রীর মুখোশ খুলে দিয়েছে । প্রতিবেদনের সঙ্গে রইল ভিজিল্যান্স ডিপার্টমেন্টের দেওয়া প্রমাণ ৷

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
কাঠগড়ায় জগনের মন্ত্রী (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 11, 2025, 9:35 PM IST

অমরাবতী, 11 ফেব্রুয়ারি: কাঠগড়ায় পেড্ডিরেড্ডি রামচন্দ্র রেড্ডি ৷ অন্ধ্রপ্রদেশের এই জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াইএস জগনমোহন রেড্ডির ঘনিষ্ট বলে পরিচিত ৷ জগনের নেতৃত্বাধীন পূর্বতন রাজ্য মন্ত্রিসভায় কার্যত 'সেকেন্ড ইন কম্যান্ড' ছিলেন তিনি ৷ এবার তাঁর বিরুদ্ধেই উঠেছে অন্যায়ভাবে বনাঞ্চল আত্মসাৎ করার অভিযোগ ৷ অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার বনভূমি দখলের অভিযোগের বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স কমিশনের প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখছে ।

জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময় ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার এবং বিভিন্ন সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কুখ্যাতি রয়েছে রামচন্দ্র রেড্ডির । দুর্নীতিতে শিরোনামে থাকতেন তিনি ৷ এবার অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের ভিজিল্যান্স শাখা চিত্তুর জেলার পুলিচের্লা মণ্ডলের মঙ্গলমপেট সংরক্ষিত বনাঞ্চলে 104 একর জমিতে খামার তৈরির জন্য পেড্ডিরেড্ডিকে অভিযুক্ত করেছে । রেকর্ড অনুযায়ী, গ্রাম সীমানায় 295 এবং 296 নম্বর জরিপে মাত্র 23.69 একর জমি অবস্থিত । কিন্তু ভিজিল্যান্স বিভাগ তদন্তে খুঁজে পেয়েছে, প্রাক্তন মন্ত্রী 77.54 একর জমি যোগ করে নিজের জন্য একটি বিশাল খামার তৈরি করেছিলেন, যার মোট পরিমাণ 104 একর ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

ভিজিল্যান্স শাখা আরও অভিযোগ করেছে, পুরো জমির চারপাশে শক্ত বেড়া দেওয়া । সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া রিপোর্টে ভিজিল্যান্স শাখা জানিয়েছে, ওয়াইএসআরসিপি নেতা তাঁর পদের অপব্যবহার করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন । তিনি শুধু বনভূমি দখল করেননি, বরং সরকারি তহবিল দিয়ে খামারে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তাও তৈরি করেছিলেন ।

29 জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দক্ষিণের জনপ্রিয় সংবাদপত্র ইনাডু অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রীর মুখোশ খুলে দিয়েছে । পেড্ডিরেড্ডি রামচন্দ্র রেড্ডি এবং তাঁর পরিবারের করা দুর্নীতির সমস্ত প্রমাণ রয়েছে ওই প্রতিবেদনে । রামচন্দ্র রেড্ডির অবশ্য দাবি, তিনি তাঁর কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে জমিটি অধিগ্রহণ করেছেন । তিনি ‘অন্যায্য উপায়ে জমি অধিগ্রহণ’কে মান্যতা দেওয়ার জন্য জানিয়েছিলেন যে জরিপ নম্বর 295 এবং 296-এ মোট জমির পরিমাণ 75.74 একর ৷ 1968 সালের বন গেজেটেও একই কথা উল্লেখ করা হয়েছিল । তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কিছু কাগজপত্রও দেখিয়েছিলেন ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

অন্যদিকে ভিজিল্যান্স বিভাগ তাঁর এই দুর্নীতির বিপক্ষে সাতটি প্রমাণ তুলে ধরেছে ৷ যা প্রমাণ করে যে রামচন্দ্র রেড্ডি মঙ্গলমপেট বন এলাকায় বনভূমি দখল করেছেন । ভিজিল্যান্স অফিসাররা রাজস্ব বিভাগের ওয়েবসাইটের ডিজিটাল ইতিহাস, রোর, এনকাম্বারেন্স সার্টিফিকেট, বিক্রয় সংক্রান্ত দলিল, মিউটেশন ইতিহাস, ড্রোনের মাধ্যমে তোলা ছবি এবং গুগল আর্থ টাইমলাইন ছবি তুলে ধরেছেন । ভিজিল্যান্স অফিসাররা জানিয়েছেন, উল্লিখিত দু’টি জরিপ নম্বরে জমির মূল পরিমাণ ছিল মাত্র 23.69 একর ৷ রামচন্দ্র রেড্ডি এবং তাঁর পরিবারের বিক্রয় দলিল অনুসারে জমির পরিমাণ ছিল 45.80 একর । অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের ওয়েবল্যান্ড ওয়েবসাইট অনুসারে, জমির পরিমাণ ছিল 77.54 একর । জমির 10-1 আদাঙ্গাল (একটি রাজস্ব দলিল) জমির পরিমাণ 86.65 একর বলে দেখানো হয়েছে । মোট 104 একর জমি বেড়া দেওয়া হয়েছে ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

ভিজিল্যান্স বিভাগের উপস্থাপিত 7টি প্রমাণ:

নির্বাচনী হলফনামায় উল্লিখিত ন্যায্য আদাঙ্গল মিথ্যাচার: পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর ছেলে মিঠুন রেড্ডি তাদের নির্বাচনী হলফনামায় বলেছেন যে তাঁদের 295 এবং 296 নম্বর জরিপের জমি ছিল 75.74 একর । 1905 থেকে 1920 সালের মধ্যে পরিচালিত জমি জরিপ অনুসারে, 295 নম্বর জরিপের জমির পরিমাণ ছিল 17.69 একর এবং 296 নম্বর জরিপের পরিমাণ ছিল 6 একর । সব মিলিয়ে 23.69 একর । মূল সরকারি রেকর্ড অনুসারে, জমির প্রকৃতি শুষ্ক জমি ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

পাকালা সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে নিবন্ধিত বিক্রয় দলিল: 45.80 একর পাকালা সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে নিবন্ধিত বিক্রয় দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে । তবে, 295 এবং 296 নম্বর জরিপের জমির প্রকৃত পরিমাণ ছিল 23.69 একর । পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর আত্মীয়স্বজন মিলে একটি বিক্রয় দলিল নিবন্ধন করিয়েছিলেন ৷ যেখানে উল্লেখিত জরিপ নম্বরগুলিতে জমির পরিমাণ 45.80 একর বলে উল্লেখ করা হয়েছিল । দু’টি জরিপ নম্বরকে উপবিভাগে ভাগ করা হয়েছিল । নিবন্ধিত নথি নম্বর 2346/2000 অনুযায়ী, পেড্ডিরেড্ডি লক্ষ্মী দেবী 29 ডিসেম্বর, 2000 সালে জনৈক দেসিরেড্ডি মাঙ্গাম্মার কাছ থেকে 295/1এ জরিপ নম্বরে 15 একর জমি কিনেছিলেন । নিবন্ধিত নথি নম্বর 2347/2000 অনুসারে, পেড্ডিরেড্ডি ইন্দিরাম্মা 29 ডিসেম্বর, 2000 সালে দেসিরেড্ডি শ্রীরামুলু রেড্ডির কাছ থেকে 10.80 একর জমি কিনেছিলেন । পেড্ডিরেড্ডি মিঠুন রেড্ডি 1 জানুয়ারি, 2001 সালে দেসিরেড্ডি চেঙ্গা রেড্ডির কাছ থেকে 295/1সি জরিপ নম্বরে অবস্থিত 10 একর জমি কিনেছিলেন । এটি 2/2001 নম্বর বিক্রয় দলিলের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছিল । প্রথমে 295 নম্বর জরিপে মাত্র 17.69 একর জমি থাকলেও, পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর পরিবার একই নম্বর থেকে 36.69 একর জমি অধিগ্রহণ করেন । এর অর্থ হল, একই জরিপে অতিরিক্ত 19 একর জমি দেখানো হয়েছে । 296 নম্বর জরিপে মাত্র 6 একর জমি ছিল । তবে 1 জানুয়ারি, 2001 তারিখে নিবন্ধিত বিক্রয় দলিল নম্বর 2/2001 অনুসারে, পেড্ডিরেড্ডি ইন্দিরাম্মা ডিজাইরেড্ডি সর্বেশ্বর রেড্ডির কাছ থেকে 9.11 একর জমি কিনেছিলেন । অর্থাৎ 296 নম্বর জরিপে মূল জমির অতিরিক্ত 3.11 একর জমি নিবন্ধিত ছিল । ভিজিল্যান্স বিভাগের তথ্য অনুসারে, ওয়েবল্যান্ড ওয়েবসাইটে 45.8 একর জমি 77.54 পর্যন্ত জরিপ করা হয়েছে ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

রাজস্ব বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত ওয়েবল্যান্ড পোর্টাল: পেড্ডিরেড্ডি 295 এবং 296 নম্বর জরিপ থেকে 45.80 একর জমি নিবন্ধিত পেয়েছিলেন ৷ যেখানে মূলত মাত্র 23.69 একর জমি ছিল ৷ রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে মোট জমির পরিমাণ 77.54 একর বলে উল্লেখ করেছেন । পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর আত্মীয়রা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিজেদের মালিকানাধীন জমির পরিমাণ জরিপ করেছেন । এর অর্থ তাঁরা ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত 53.65 একর জমি তাঁদের নামে চিহ্নিত করেছেন ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

10-1 আদাঙ্গাল বনভূমি পৈতৃক জমি হিসেবে দাবি করা হয়েছে: 10-1 আদাঙ্গাল অনুসারে, 77.54 একর জমি পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর পরিবারের হাতে ছিল । এর মধ্যে 40.91 একর জমি ক্রয়কৃত জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে । বাকি জমি পৈতৃক জমি, উইলকৃত জমি বা মালিকানাধীন জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে । নিবন্ধিত বিক্রয় দলিল অনুসারে, মোট ক্রয়কৃত জমি ছিল 45.80 একর । কিন্তু 10-1 আদাঙ্গাল অনুসারে, পরিবারটি 40.9 একর জমি কিনেছিল । বাকি জমি পৈতৃক জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে । মঙ্গলমপেট গ্রামের মানচিত্র অনুসারে, জরিপ নম্বর 295 এবং 296 দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গ্রাম থেকে 3 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । দু’টি জরিপ নম্বরের জমি দু’টি ভিন্ন স্থানে অবস্থিত । এটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

গুগল আর্থ ম্যাপ বলছে 86.65 একর জমি দখল করা হয়েছে: গুগল আর্থ ম্যাপ এবং মাঠ পরিদর্শনের পর আধিকারিকদের তৈরি মানচিত্র বলছে, পেড্ডিরেড্ডি পরিবার 104 একর জমির চারপাশে বেড়া দিয়েছে ৷ যেখানে জরিপ নম্বর 295 এবং 296-তে জমির প্রকৃত পরিমাণ মাত্র 23.69 একর । বন কর্মকর্তা এবং ‘পঞ্চায়েত’ জরিপকারীর সহায়তায় ভিজিল্যান্স অফিসারদের একটি দল জমিটি পরিদর্শন করে । গুগল আর্থ স্থানাঙ্কের সাহায্যে দেখা যাচ্ছে, বেড়াটি 104 একর জমির চারপাশে । কিন্তু 10-1 আদাঙ্গাল দেখাচ্ছে যে জমির পরিমাণ 86.65 একর । এর অর্থ হল জরিপ নম্বরে থাকা 23.69 একর ছাড়াও 62.96 একর জমি পরিবার দাবি করছে । ফলে এটা নিশ্চিত যে পেড্ডিরেড্ডি রামচন্দ্র রেড্ডি এবং তাঁর আত্মীয়রা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন । মেলা আদাঙ্গাল বলছে, দু’টি জরিপ নম্বরে জমির পরিমাণ ছিল মাত্র 23.69 একর । কিন্তু নিবন্ধিত বিক্রয় দলিলে জমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে 45.80 একর । 10-1 আদাঙ্গলে জমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে 86.65 একর । প্রায় 104 একর জমিতে বেড়া দেওয়া হয়েছিল । এর অর্থ হল তাঁরা 86.65 একর বনভূমি দখল করেছে । সরকারি জমি রক্ষা করার জন্য বন ও রাজস্ব আধিকারিকরাও রামচন্দ্র রেড্ডির জমি দখলের সময় নীরব দর্শক ছিলেন ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

বনভূমিতে রাস্তা: গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর চাপ প্রয়োগ রাস্তা তৈরির জন্য । 18 অগস্ট, 2022 সালে গেজেট নম্বর 1195 অনুসারে, মঙ্গলমপেট-কোঠাপেট গ্রামের কাছে গঙ্গাম্মাগুদি থেকে ইয়েউকাদুনিপেন্তা এসটি কলোনি পর্যন্ত 5 কিলোমিটার দীর্ঘ স্থায়ী রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল । রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নান্নুভারিপল্লে গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে এই অঞ্চলটি আসে, যার দ্বারা এই মর্মে একটি প্রস্তাব পাস করানো হয়েছিল । এই প্রস্তাবের সুযোগ নিয়ে একটি ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পৌঁছনোর জন্য জনসাধারণের অর্থ দিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল ।

আরও পড়ুন

অমরাবতী, 11 ফেব্রুয়ারি: কাঠগড়ায় পেড্ডিরেড্ডি রামচন্দ্র রেড্ডি ৷ অন্ধ্রপ্রদেশের এই জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াইএস জগনমোহন রেড্ডির ঘনিষ্ট বলে পরিচিত ৷ জগনের নেতৃত্বাধীন পূর্বতন রাজ্য মন্ত্রিসভায় কার্যত 'সেকেন্ড ইন কম্যান্ড' ছিলেন তিনি ৷ এবার তাঁর বিরুদ্ধেই উঠেছে অন্যায়ভাবে বনাঞ্চল আত্মসাৎ করার অভিযোগ ৷ অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার বনভূমি দখলের অভিযোগের বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স কমিশনের প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখছে ।

জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময় ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার এবং বিভিন্ন সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কুখ্যাতি রয়েছে রামচন্দ্র রেড্ডির । দুর্নীতিতে শিরোনামে থাকতেন তিনি ৷ এবার অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের ভিজিল্যান্স শাখা চিত্তুর জেলার পুলিচের্লা মণ্ডলের মঙ্গলমপেট সংরক্ষিত বনাঞ্চলে 104 একর জমিতে খামার তৈরির জন্য পেড্ডিরেড্ডিকে অভিযুক্ত করেছে । রেকর্ড অনুযায়ী, গ্রাম সীমানায় 295 এবং 296 নম্বর জরিপে মাত্র 23.69 একর জমি অবস্থিত । কিন্তু ভিজিল্যান্স বিভাগ তদন্তে খুঁজে পেয়েছে, প্রাক্তন মন্ত্রী 77.54 একর জমি যোগ করে নিজের জন্য একটি বিশাল খামার তৈরি করেছিলেন, যার মোট পরিমাণ 104 একর ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

ভিজিল্যান্স শাখা আরও অভিযোগ করেছে, পুরো জমির চারপাশে শক্ত বেড়া দেওয়া । সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া রিপোর্টে ভিজিল্যান্স শাখা জানিয়েছে, ওয়াইএসআরসিপি নেতা তাঁর পদের অপব্যবহার করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন । তিনি শুধু বনভূমি দখল করেননি, বরং সরকারি তহবিল দিয়ে খামারে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তাও তৈরি করেছিলেন ।

29 জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দক্ষিণের জনপ্রিয় সংবাদপত্র ইনাডু অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রীর মুখোশ খুলে দিয়েছে । পেড্ডিরেড্ডি রামচন্দ্র রেড্ডি এবং তাঁর পরিবারের করা দুর্নীতির সমস্ত প্রমাণ রয়েছে ওই প্রতিবেদনে । রামচন্দ্র রেড্ডির অবশ্য দাবি, তিনি তাঁর কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে জমিটি অধিগ্রহণ করেছেন । তিনি ‘অন্যায্য উপায়ে জমি অধিগ্রহণ’কে মান্যতা দেওয়ার জন্য জানিয়েছিলেন যে জরিপ নম্বর 295 এবং 296-এ মোট জমির পরিমাণ 75.74 একর ৷ 1968 সালের বন গেজেটেও একই কথা উল্লেখ করা হয়েছিল । তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কিছু কাগজপত্রও দেখিয়েছিলেন ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

অন্যদিকে ভিজিল্যান্স বিভাগ তাঁর এই দুর্নীতির বিপক্ষে সাতটি প্রমাণ তুলে ধরেছে ৷ যা প্রমাণ করে যে রামচন্দ্র রেড্ডি মঙ্গলমপেট বন এলাকায় বনভূমি দখল করেছেন । ভিজিল্যান্স অফিসাররা রাজস্ব বিভাগের ওয়েবসাইটের ডিজিটাল ইতিহাস, রোর, এনকাম্বারেন্স সার্টিফিকেট, বিক্রয় সংক্রান্ত দলিল, মিউটেশন ইতিহাস, ড্রোনের মাধ্যমে তোলা ছবি এবং গুগল আর্থ টাইমলাইন ছবি তুলে ধরেছেন । ভিজিল্যান্স অফিসাররা জানিয়েছেন, উল্লিখিত দু’টি জরিপ নম্বরে জমির মূল পরিমাণ ছিল মাত্র 23.69 একর ৷ রামচন্দ্র রেড্ডি এবং তাঁর পরিবারের বিক্রয় দলিল অনুসারে জমির পরিমাণ ছিল 45.80 একর । অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের ওয়েবল্যান্ড ওয়েবসাইট অনুসারে, জমির পরিমাণ ছিল 77.54 একর । জমির 10-1 আদাঙ্গাল (একটি রাজস্ব দলিল) জমির পরিমাণ 86.65 একর বলে দেখানো হয়েছে । মোট 104 একর জমি বেড়া দেওয়া হয়েছে ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

ভিজিল্যান্স বিভাগের উপস্থাপিত 7টি প্রমাণ:

নির্বাচনী হলফনামায় উল্লিখিত ন্যায্য আদাঙ্গল মিথ্যাচার: পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর ছেলে মিঠুন রেড্ডি তাদের নির্বাচনী হলফনামায় বলেছেন যে তাঁদের 295 এবং 296 নম্বর জরিপের জমি ছিল 75.74 একর । 1905 থেকে 1920 সালের মধ্যে পরিচালিত জমি জরিপ অনুসারে, 295 নম্বর জরিপের জমির পরিমাণ ছিল 17.69 একর এবং 296 নম্বর জরিপের পরিমাণ ছিল 6 একর । সব মিলিয়ে 23.69 একর । মূল সরকারি রেকর্ড অনুসারে, জমির প্রকৃতি শুষ্ক জমি ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

পাকালা সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে নিবন্ধিত বিক্রয় দলিল: 45.80 একর পাকালা সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে নিবন্ধিত বিক্রয় দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে । তবে, 295 এবং 296 নম্বর জরিপের জমির প্রকৃত পরিমাণ ছিল 23.69 একর । পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর আত্মীয়স্বজন মিলে একটি বিক্রয় দলিল নিবন্ধন করিয়েছিলেন ৷ যেখানে উল্লেখিত জরিপ নম্বরগুলিতে জমির পরিমাণ 45.80 একর বলে উল্লেখ করা হয়েছিল । দু’টি জরিপ নম্বরকে উপবিভাগে ভাগ করা হয়েছিল । নিবন্ধিত নথি নম্বর 2346/2000 অনুযায়ী, পেড্ডিরেড্ডি লক্ষ্মী দেবী 29 ডিসেম্বর, 2000 সালে জনৈক দেসিরেড্ডি মাঙ্গাম্মার কাছ থেকে 295/1এ জরিপ নম্বরে 15 একর জমি কিনেছিলেন । নিবন্ধিত নথি নম্বর 2347/2000 অনুসারে, পেড্ডিরেড্ডি ইন্দিরাম্মা 29 ডিসেম্বর, 2000 সালে দেসিরেড্ডি শ্রীরামুলু রেড্ডির কাছ থেকে 10.80 একর জমি কিনেছিলেন । পেড্ডিরেড্ডি মিঠুন রেড্ডি 1 জানুয়ারি, 2001 সালে দেসিরেড্ডি চেঙ্গা রেড্ডির কাছ থেকে 295/1সি জরিপ নম্বরে অবস্থিত 10 একর জমি কিনেছিলেন । এটি 2/2001 নম্বর বিক্রয় দলিলের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছিল । প্রথমে 295 নম্বর জরিপে মাত্র 17.69 একর জমি থাকলেও, পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর পরিবার একই নম্বর থেকে 36.69 একর জমি অধিগ্রহণ করেন । এর অর্থ হল, একই জরিপে অতিরিক্ত 19 একর জমি দেখানো হয়েছে । 296 নম্বর জরিপে মাত্র 6 একর জমি ছিল । তবে 1 জানুয়ারি, 2001 তারিখে নিবন্ধিত বিক্রয় দলিল নম্বর 2/2001 অনুসারে, পেড্ডিরেড্ডি ইন্দিরাম্মা ডিজাইরেড্ডি সর্বেশ্বর রেড্ডির কাছ থেকে 9.11 একর জমি কিনেছিলেন । অর্থাৎ 296 নম্বর জরিপে মূল জমির অতিরিক্ত 3.11 একর জমি নিবন্ধিত ছিল । ভিজিল্যান্স বিভাগের তথ্য অনুসারে, ওয়েবল্যান্ড ওয়েবসাইটে 45.8 একর জমি 77.54 পর্যন্ত জরিপ করা হয়েছে ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

রাজস্ব বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত ওয়েবল্যান্ড পোর্টাল: পেড্ডিরেড্ডি 295 এবং 296 নম্বর জরিপ থেকে 45.80 একর জমি নিবন্ধিত পেয়েছিলেন ৷ যেখানে মূলত মাত্র 23.69 একর জমি ছিল ৷ রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে মোট জমির পরিমাণ 77.54 একর বলে উল্লেখ করেছেন । পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর আত্মীয়রা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিজেদের মালিকানাধীন জমির পরিমাণ জরিপ করেছেন । এর অর্থ তাঁরা ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত 53.65 একর জমি তাঁদের নামে চিহ্নিত করেছেন ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

10-1 আদাঙ্গাল বনভূমি পৈতৃক জমি হিসেবে দাবি করা হয়েছে: 10-1 আদাঙ্গাল অনুসারে, 77.54 একর জমি পেড্ডিরেড্ডি এবং তাঁর পরিবারের হাতে ছিল । এর মধ্যে 40.91 একর জমি ক্রয়কৃত জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে । বাকি জমি পৈতৃক জমি, উইলকৃত জমি বা মালিকানাধীন জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে । নিবন্ধিত বিক্রয় দলিল অনুসারে, মোট ক্রয়কৃত জমি ছিল 45.80 একর । কিন্তু 10-1 আদাঙ্গাল অনুসারে, পরিবারটি 40.9 একর জমি কিনেছিল । বাকি জমি পৈতৃক জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে । মঙ্গলমপেট গ্রামের মানচিত্র অনুসারে, জরিপ নম্বর 295 এবং 296 দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গ্রাম থেকে 3 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । দু’টি জরিপ নম্বরের জমি দু’টি ভিন্ন স্থানে অবস্থিত । এটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

গুগল আর্থ ম্যাপ বলছে 86.65 একর জমি দখল করা হয়েছে: গুগল আর্থ ম্যাপ এবং মাঠ পরিদর্শনের পর আধিকারিকদের তৈরি মানচিত্র বলছে, পেড্ডিরেড্ডি পরিবার 104 একর জমির চারপাশে বেড়া দিয়েছে ৷ যেখানে জরিপ নম্বর 295 এবং 296-তে জমির প্রকৃত পরিমাণ মাত্র 23.69 একর । বন কর্মকর্তা এবং ‘পঞ্চায়েত’ জরিপকারীর সহায়তায় ভিজিল্যান্স অফিসারদের একটি দল জমিটি পরিদর্শন করে । গুগল আর্থ স্থানাঙ্কের সাহায্যে দেখা যাচ্ছে, বেড়াটি 104 একর জমির চারপাশে । কিন্তু 10-1 আদাঙ্গাল দেখাচ্ছে যে জমির পরিমাণ 86.65 একর । এর অর্থ হল জরিপ নম্বরে থাকা 23.69 একর ছাড়াও 62.96 একর জমি পরিবার দাবি করছে । ফলে এটা নিশ্চিত যে পেড্ডিরেড্ডি রামচন্দ্র রেড্ডি এবং তাঁর আত্মীয়রা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন । মেলা আদাঙ্গাল বলছে, দু’টি জরিপ নম্বরে জমির পরিমাণ ছিল মাত্র 23.69 একর । কিন্তু নিবন্ধিত বিক্রয় দলিলে জমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে 45.80 একর । 10-1 আদাঙ্গলে জমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে 86.65 একর । প্রায় 104 একর জমিতে বেড়া দেওয়া হয়েছিল । এর অর্থ হল তাঁরা 86.65 একর বনভূমি দখল করেছে । সরকারি জমি রক্ষা করার জন্য বন ও রাজস্ব আধিকারিকরাও রামচন্দ্র রেড্ডির জমি দখলের সময় নীরব দর্শক ছিলেন ।

How Peddireddi Ramachandra Reddy Usurped Mangalampet Reserve Forest Land
রামচন্দ্র রেড্ডির দুর্নীতির প্রমাণ (ইটিভি ভারত)

বনভূমিতে রাস্তা: গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর চাপ প্রয়োগ রাস্তা তৈরির জন্য । 18 অগস্ট, 2022 সালে গেজেট নম্বর 1195 অনুসারে, মঙ্গলমপেট-কোঠাপেট গ্রামের কাছে গঙ্গাম্মাগুদি থেকে ইয়েউকাদুনিপেন্তা এসটি কলোনি পর্যন্ত 5 কিলোমিটার দীর্ঘ স্থায়ী রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল । রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নান্নুভারিপল্লে গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে এই অঞ্চলটি আসে, যার দ্বারা এই মর্মে একটি প্রস্তাব পাস করানো হয়েছিল । এই প্রস্তাবের সুযোগ নিয়ে একটি ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পৌঁছনোর জন্য জনসাধারণের অর্থ দিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল ।

আরও পড়ুন

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.