বারাসত ও কলকাতা, 13 নভেম্বর: উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিনে হাড়োয়া ও নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটল । বিরোধী আইএসএফ কয়েকটি বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলেছে । দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে হাড়োয়া বিধানসভা এলাকায় 37টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে ।
এর মধ্যে আইএসএফ নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছে বারাসত 2 নম্বর ব্লক থেকে । এখানে 26টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছে তারা । এরপর রয়েছে দেগঙ্গা ব্লকে । সেখানকার 6টি বুথ এবং হাড়োয়া ব্লকের 5টি বুথে পুনর্নির্বাচন চেয়ে আইএসএফ প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন । যদিও শাসকদল ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ।
রাজ্যের অন্য চার বিধানসভার সঙ্গে বুধবার উত্তর 24 পরগনার হাড়োয়া ও নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ হয় । সকালের প্রথম দু’ঘণ্টায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হলেও বেলা বাড়তেই সেই ছবিটা বদলে যায় । বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাপ্পা ভোট ও বিরোধী এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ আসতে থাকে । দিনের সবচেয়ে বড় অশান্তির খবর মিলেছে হাড়োয়ার দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর বহিরা, সাহাজিপাড়া, মোড়লপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, মানিকপুর, সরদারপাড়া, গাইনপাড়া, বামিগাছি, ভাগ্যবন্তপুর ও ধোকরা গ্রাম থেকে ।
অভিযোগ, সেখানে পরপর 21টি বুথে তৃণমূল আইএসএফের বুথ এজেন্টকে বের করে দেয় । তারপর ব্যাপক ছাপ্পা ভোট হয় বলে দাবি করেছেন আইএসএফ নেতৃত্ব । এই নিয়ে প্রার্থী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, "দাঁতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের 21টি বুথে আমাদের বোলিং এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি । তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁদের মেরে বুথ থেকে বের করে দিয়েছে । তারপর সেখানে শাসকদল একতরফা ছাপ্পা ভোট করেছে ।’’ কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে বিস্তারিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি ৷
যদিও তৃণমূল প্রার্থী রবিউল ইসলাম সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । তাঁর পাল্টা দাবি, "কোথাও কোনও ছাপ্পা ভোট হয়নি। বিরোধীরা আসলে সেখানে পোলিং এজেন্টই দিতে পারেনি। পরাজয় নিশ্চিত বুঝে আইএসএফ এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে ।"
এদিন হাড়োয়ার কাঁকড়া মির্জানগর এলাকায় 179 নম্বর বুথে আইএসএফের পোলিং এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । তাঁর জামা ছিঁড়ে বুথ থেকে বের করে দিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা । তৃণমূল কংগ্রেস সেই অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছে । আরও অভিযোগ, হাড়োয়ার মোহব্বতপুরের 135 নম্বর বুথে আইএসএফ প্রার্থীকে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় । তৃণমূল সমর্থকরা পুলিশের সামনেই তাঁকে রাস্তার উপর ধাক্কা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ ।
অন্যদিকে, নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়ের 63 নম্বর বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । পাশাপাশি 79 নম্বর বুথের বাইরে বিজেপির ব্যানার, হোর্ডিং ও ফ্লেক্স তৃণমূল সমর্থকরা ছিঁড়ে দেন । যদিও তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । তাঁর দাবি, "গোটা বিধানসভায় 210টি বুথের মধ্যে বিজেপি মাত্র 38টি বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে পেরেছে । বিজেপির বুথে বসার মতো লোক নেই । হারার আগে তাই কাঁদুনি গেয়ে রাখছে ।"
নৈহাটির সিপিআই (এমএল) প্রার্থীর এজেন্টের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানো হয়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে । ওই কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে বাম পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন সিপিআই (এমএল) প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার৷ তালডাংরাতেও বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে বলে অভিযোগ ।
দিনের শেষে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, হাড়োয়া ও নৈহাটি দুই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে প্রায় 75 শতাংশের কাছাকাছি । যে কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর কমিশন সূত্রে । কমিশনের দাবি, ‘‘মোটের উপর উপনির্বাচনের ভোটে বড় কোনও অশান্তির খবর নেই ।’’
এদিন বিকেল 5টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে 69.29 শতাংশ । সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে তালডাংরায় । সব চেয়ে কম ভোট পড়েছে নৈহাটিতে ৷ বিকেল 5টা পর্যন্ত মোট অভিযোগ পড়েছে 342টি ।