বাগদা, 21 নভেম্বর: ভাগে ভাগে একাধিক ব্যক্তিকে নদী লিজ দেওয়ার অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে ৷ মাছ চাষ করতে টেন্ডার ডেকে তিন বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে বেতনা নদী ৷ এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল উত্তর 24 পরগনার বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে ৷ সমিতির দাবি, আগেও এভাবে নদী লিজ দেওয়া হয়েছে ৷ পূর্বসূরিদের অনুসরণ করেই এই পদক্ষেপ ৷ এই সমিতির পরিচালনা করছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগদা ব্লকের বাগদা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে বেত্রাবতী নদী, যা বেতনা বলেই পরিচিত ৷ সেই নদী মাছ চাষের জন্য ভাগে ভাগে একাধিক ব্যক্তিকে লিজে দিয়েছে বাগদা পঞ্চায়েত সমিতি ৷ ফলে নদীতে কাজ করতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ পারছেন না মাছ ধরতেও ৷
পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে নদী লিজ দেওয়ার অভিযোগ
বুধবার বাগদা বাজারে দুয়ারে পুলিশ ক্যাম্পে করেছিল বাগদা থানার পুলিশ ৷ সেখানে সাগরপুর গ্রামের বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানান ৷ পুলক গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক অভিযোগকারী বলেন, "বেত্রাবতী নদী লিজ দিতে দেব না ৷ আমরা চাষবাস করা এলাকার মানুষ ৷ পাট জাগ দেওয়া, মাছ ধরার মতো বিভিন্ন কাজে নদী ব্যবহার করি আমরা ৷ শুনেছি, পঞ্চায়েত সমিতি বেতনা নদী লিজ দিয়েছে ৷ পঞ্চায়েত সমিতি যে লিজ দিতে পারে, এটা আমাদের জানা নেই ৷ কয়েক বছর আগে একবার লিজ দেওয়া হয়েছিল ৷ মাঝে এই জমি খাস হয়ে গিয়েছে ৷ তাহলে খাসজমি কীভাবে লিজ দেয় ? আমরা চাই, আগের মতো আমরা যেন বেতনা নদীকে ব্যবহার করতে পারি ৷"
কী বলছে পঞ্চায়েত সমিতি ?
পঞ্চায়েত সমিতির এই নদী লিজ দেওয়া এক্তিয়ার বহির্ভূত ব্যাপার নয়। সবার কথা ভেবে লিজ দেওয়া হয়েছে । এমনই দাবি করেন বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুদেবী মণ্ডল ৷ তিনি বলেন, "নদীতে জল নেই, খালের মতো হয়ে গিয়েছে ৷ আমাদের আগে যে পঞ্চায়েত সমিতি ছিল, সেই সময় যুগ্ম বিডিও ছিলেন রজতকান্তি ৷ সেই সময় এগুলি টেন্ডার হয়েছিল এবং লিজ দেওয়া ছিল ৷ এর আগে রেজোলিউশন নেওয়া হয়েছিল, সেই নিয়ম অনুসারে পঞ্চায়েত সমিতির ফান্ডের কথা ভেবে এবং বাগদা পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় যাঁরা মৎস্যজীবী তাঁদের আর্থিক উন্নতির কথা চিন্তা করেই যা করার করা হয়েছে। সমিতিতে বৈঠক করেই প্রস্তাব পাশ হয়েছে ৷ "
লিজ নেওয়া ব্যক্তির বক্তব্য
তিন বছরের জন্য 45 হাজার টাকার বিনিময়ে নদীর কিছুটা অংশ নিজে পেয়েছেন সুব্রত ঘোষ ৷ তাঁর ছেলে সুরাজ ঘোষ বলেন, "পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে বিডিওর তরফে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই বিজ্ঞপ্তি দেখে বাবা আবেদন করেছিলেন ৷ 45 হাজার টাকার বিনিময়ে তিন বছরের জন্য কিছুটা অংশ আমরা মাছ চাষের জন্য লিজ পেয়েছি ৷ " তিনি জানান, এটা বিঘা অনুযায়ী টেন্ডার হচ্ছে ৷
সুরাজ বলেন, "এটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি । দলিল, রেকর্ড সব ছিল আগে ৷ পরে এটা খাস জমি করে দিয়েছে সরকার ৷ তারপর বহুদিন টেন্ডার পাইনি ৷ অনেকদিন পর মাছ চাষের টেন্ডার পেলাম ৷ এটা বৈধ কি অবৈধ তা বাগদা পঞ্চায়েত সমিতি বলতে পারবে ৷ গ্রামের লোক বলছে, লিজ যেন দেওয়া না হয় ৷ কারণ জানি না ৷"
যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, " নদী লিজও দেওয়া যায় না ৷ নদীর তার আপন গতীতে চলবে এটাই স্বাভাবিক ৷ নদী সকলে ব্যবহার করবে ৷" নদী লিজের পিছনে কাটমানির গল্প দেখছে বিজেপি । বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার বলেন, "তৃণমূল সর্বত্র পুকুর বুজিয়ে ফেলছে ৷ এখন নদী লিজে দিচ্ছে ৷ সব কাটমানির জন্য ৷ এভাবে কখনও নদী লিজে দেওয়া যায় না ৷"