ব্যারাকপুর, 23 ফেব্রুয়ারি: বয়স 78 ছুঁয়েছে । শরীর বেশ দুর্বল । তবু কণ্ঠে তাঁর সুরের জাদু । উত্তর 24 পরগনার হালিশহরের বাসিন্দা ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানে মজেছেন শ্রোতারা । মুখে মুখে তিনি নকল লতা মঙ্গেশকর নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছেন । সকাল বিকেল তাঁর বাড়িতে গান শোনার ভিড় বাড়ছে ।
ভারতী ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের হালিশহর দোলতলার বাসিন্দা । বয়সের ভারে তাঁর সারা শরীরে জীর্ণতার ছায়া । কাঁপা কাঁপা হাত, হাঁটা চলাও করেন বেশ ধীরগতিতে । কিন্তু কন্ঠে এখনও তাঁর মা সরস্বতীর জাগ্রত অনুরণন । প্রবাদ-প্রতিম সঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত লতা মঙ্গেশকরের গানে তিনি অবিকল সুর তুলছেন ।
হুগলির চুঁচুড়ায় ভারতীর জন্ম । ছোটবেলায় পারিবারিক বৃত্তে গানের রেওয়াজ ছিল না । বিয়ের পর থেকে গঙ্গার এপারে হালিশহর তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে । শ্বশুরবাড়িতে চলতে-ফিরতে গুনগুন করে লতা মঙ্গেশকরের গানে সুর তুলতেন । পড়শিরা মন দিয়ে তা শুনতেন । তাঁরা তাঁর গানের তারিফ করতেন ।

তারপর পাড়ার ছোটখাটো অনুষ্ঠানে তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হত । গান শোনানোর আবদার করা হত । কখনও খালি গলায়, কখনও বা মাইক্রোফোনে ভারতী গান শুরু করতেন ৷ শ্রোতারা তখন মুগ্ধ হয়ে তাঁর গান শুনতেন ।
প্রথাগত গানের তালিম তাঁর ছিল না । বাড়িতে রেডিয়ো টিভির গান শুনে তিনি মুখস্থ করতেন । আর একা একা গান গাইতেন । কিন্তু কখনও ভাবেননি, শেষ বয়সে তিনি সোশাল মিডিয়ায় এভাবে ছড়িয়ে পড়বেন । প্রতিদিন সকাল-সন্ধে তাঁর বাড়িতে সোশাল মিডিয়ায় কাজ করা যুবক-যুবতীরা ভিড় করছেন । তাঁর গানের ভিডিয়ো করে সামাজিক মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন । তবে, এ নিয়ে ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে কিছু বলতে না চাইলেও গানের ভাষাতেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছা এবং মনের জেদ থাকলে বয়স কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না ।

এদিকে, লতা মঙ্গেশকরের সুরেলা জাদুর কন্ঠে একের পর এক গান গেয়ে এখন রীতিমতো 'ভাইরাল' বৃদ্ধা ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায় । অনেকে তাঁকে 'ভাইরাল' ঠাকুমা বলেও ডেকে থাকেন । আর ঠাকুমার এই সুরেলা জাদুতে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার । পরিবারের নতুন প্রজন্ম বৃদ্ধার নাতি এবং ভাইঝি'রা রীতিমতো উৎসাহ জোগান ভারতীকে ।
এই বিষয়ে তাঁর নাতি সাত্যকী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ঠাকুমা সেভাবে কখনও গানের রেওয়াজ করেননি । বাড়িতে নিজে নিজেই অনুশীলন করেছেন । এখন ওঁর বয়স 78 বছর । তবু, সময় পেলেই গুনগুন করতে শুরু করেন । আগে ঠাকুমার কাছে খুব আবদার করতাম গান শোনার জন্য । এখন কাজের চাপে সেভাবে আর আবদার করতে পারি না ।"

তিনি আরও বলেন, "ঠাকুমা যখন গানে সুর তোলেন, সবাই তখন মুগ্ধ হয়ে তাঁর গান শোনেন । আগে প্রচুর অনুষ্ঠানে গান করেছেন । বয়সের ভারে এখন আর অনুষ্ঠানে যেতে পারেন না ঠিকই, তবে গানের আবদার আসে । সমাজমাধ্যমের যুগে ঠাকুমার গান তাড়াতাড়ি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে । আমিও চেষ্টা করি, তাঁর গান সহকর্মীদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে ।"
একই সুর শোনা গিয়েছে ভারতীর ভাইঝি নীলাঞ্জনা বন্দোপাধ্যায়ের গলাতেও । তাঁর কথায়, "ছোটবেলায় জেঠিমার অনেক গান শুনেছি । বয়স যখন কম ছিল, তখন এলাকায় অনেক অনুষ্ঠানে গিয়ে গান করেছেন তিনি । সেই সময় যতটা না তাঁর নামডাক হয়েছে । এর চেয়ে ঢের বেশি এখন জেঠিমার নাম ছড়িয়েছে । সমাজমাধ্যমে তাঁর কোনও গান পোস্ট করা হলেই ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে ।"
তিনি বলেন, "অনেকেই প্রবাদ প্রতিম সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তুলনা টানছেন জেঠিমার । এটা শুনে ভীষণ ভালো লাগে আমাদের । ফোন নম্বর চেয়ে অনেকে আবার যোগাযোগও করছেন আমাদের সঙ্গে । নতুন প্রজন্ম জেঠিমার গান শুনতে পছন্দ করছেন, এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা জেঠিমার কাছে ।"