কলকাতা, 19 মার্চ: ভোটের পালে বাতাস লাগতেই শুরু হয়েছে দলবদলের পালা। অনেকে আবার পেশা ছেড়ে রাজনৈতিক পরিচয় আত্মস্থ করছেন ৷ এমন পরিস্থিতিতে তমলুক গুরুত্বপূর্ণ আসন হতে চলেছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে। আইনজীবী না জনপ্রিয় যুবনেতা, নাকি সবাইকে ছাপিয়ে 'প্রাক্তন' বিচারপতি? কে বাজিমাত করবেন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। তমলুক কেন্দ্রে তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্যের সঙ্গে সিপিআই(এম) প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই যে হচ্ছেই, সেটা নিশ্চিত ৷ তবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম বিজেপি'র তরফে সরকারিভাবে ঘোষণা হয়নি ৷
এরইমাঝে ইটিভি ভারত যোগাযোগ করে তমলুক কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ৷ তিনি প্রচার ব্যস্ততার মাঝেই জানান, দেব-অভিষেকরা সংসদে যান না ৷ গত এক দশকে সংসদে বাংলার সুবক্তা কোনও সাংসদকে পায়নি ৷ তাই একরাশ আক্ষেপ ঝরে পড়ল তাঁর গলায় ৷ সুযোগ পেলে সংসদের সেই গরিমা ফেরানোই লক্ষ্য সায়নের ৷
- ইটিভি ভারত- আপনি যে আসনে লড়ছেন সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। সোশাল মিডিয়ায় আপনারা দু'জনেই জনপ্রিয়। এবার মুখোমুখি রাজনীতির ময়দানে। সেখানে আলাদা কী রণকৌশল?
সায়ন- দেবাংশু'র জন্য আলাদা কোনও গেমপ্ল্যান, আলাদা কোনও লড়াইয়ের পরিকল্পনা হবে তা মনে করি না ৷ এমনটার কোনও কারণ নেই ৷ তিনি যে দলের বিরুদ্ধে প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই দলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ৷ এই লড়াই কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয় ৷ এই আসনে অন্য কেউ হলে একই তাগিদে, একই রণকৌশলে লড়াই করতাম ৷ বরং মনে হয়েছে দেবাংশু প্রার্থী হতে সেই লড়াইটা অনেক বেশি সহজ ৷
- ইটিভি ভারত- প্রচারে কতটা সাড়া মিলছে?
সায়ন- প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে তমলুকে পড়ে রয়েছি ৷ অসাধারণ সাড়া মিলছে ৷ বহু মানুষ করমর্দন করে সামনে এগিয়ে আসছেন ৷ কাছে টেনে নিচ্ছেন ৷ কারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়েছেন তৃণমূল আর বিজেপিতে ৷ লড়ার নাম করে এই দুই দল বারবার এদিকের নেতাদের ওদিকে নিয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষকে এপ্রিল ফুল বানাচ্ছে ৷ সিপিআই(এম) আমাকে যে কেন্দ্রের প্রার্থী করেছেন এখানে শুভেন্দু অধিকারীর নিজের পরিবারের লোক তিনি 2019-এ তৃণমূলের মনোনয়নে ভোটে জিতেছিলেন ৷ কিছুদিন আগে বিজেপিতে যোগদান করলেন ৷ মানুষ এটাকে পছন্দ করছে না ৷
- ইটিভি ভারত- গত বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন । তাঁর ভাইও গতবার জিতেছিলেন এই তমলুক থেকে । শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে এইসব ফ্যাক্টর সামলে লাল আবির উড়বে বলে মনে হয়?
সায়ন- শুভেন্দু অধিকারী প্রার্থী হলে নিজের জন্য যা লড়াই করতেন, সেখানে অন্য যে কেউ প্রার্থী হোক তমলুক কেন্দ্রে তাঁর জন্য সেই লড়াই করবেন না ৷ যদি করেনও তাতেও কোনও আমাদের আপত্তি নেই ৷
- ইটিভি ভারত-তমলুক যে হাইভোল্টেজ কেন্দ্র তা বলার অপেক্ষা রাখে না । শোনা যাচ্ছে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপির হয়ে এই আসনেই লড়বেন। প্রাক্তন বিচারপতির বিরুদ্ধে লড়াইটা কতটা কঠিন?
সায়ন- খুবই সহজ ৷ যদি উনি সত্যিই বিজেপি প্রার্থী হন, তাহলে আমরা বলছি এই লড়াইটা অনেক সহজ হবে ৷ উনি যদি প্রাক্তন মন্ত্রী হতেন, প্রাক্তন বিধায়ক বা সাংসদ হতেন, তাহলে লড়াইটা কঠিন হতে পারত ৷ কারণ রাজনীতির ময়দানে পোড় খাওয়া মানুষ ৷ উনি আজ পর্যন্ত কখনও সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা সরাসরি শোনেননি ৷ এতদিন উনি যা শুনেছেন তা সাধারণ মানুষের হয়ে যে আইনজাবীরা লড়াই করেছেন তাঁদের কথা ৷ অভিজিতবাবুকে রাজনীতির আসরে যোগদানে অভিনন্দন ৷ তবে, জেতার জন্য রণনীতি নিয়ে আমরা প্রস্তুত ৷
- ইটিভি ভারত-ইটিভি ভারতের তরফে জিজ্ঞাসা করা হলে দেবাংশু জানিয়েছিলেন লড়াইটা 1200 টাকার গ্যাস সিলিন্ডার বনাম লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের । আপনার কাছে লড়াইটা ঠিক কী ? আসল প্রতিপক্ষ কে এবং কেন?
সায়ন- আমাদের কাছে বেকারত্বটা মূল চ্য়ালেঞ্জ ৷ দেশের সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব ৷ রান্নার গ্যাসের দাম, পেট্রলের দাম, ডিজেলের দাম সবই বাড়ছে ৷ কিন্তু দেবাংশু'র দল তৃণমূল কংগ্রেসকেও তো এই উত্তর দিতে হবে ৷ শেষ 13 বছর ধরে পশ্চিম বাংলায় সরকার রয়েছে তৃণমূলের ৷ এই সরকার বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করল? শিল্প, কলকারখানা কেন নতুন করে পশ্চিমবাংলায় আসল না ৷ আমাদের লড়াই দুই সরকারের বিরুদ্ধে নয় ৷ আমাদের লড়াই এই দুই সরকার যেভাবে মানুষকে যে কষ্ট-যন্ত্রণায় রেখেছে তার বিরুদ্ধে ৷
- ইটিভি ভারত-সোশাল মিডিয়ায় ফলোয়ারের (ফেসবুক) সংখ্যা 5 লক্ষ । নেটিজেনরা বেশ পছন্দ করে আপনাকে । কী মনে হয় প্রচারে সোশাল মিডিয়া কতটা প্রভাব ফেলবে?
সায়ন-সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর একটা মাধ্যম সোশাল মিডিয়া ৷ কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছতে সোশাল মিডিয়া একমাত্র বিকল্প মাধ্যম নয় ৷ অবশ্যই এতদিন ধরে আমি যে সোশাল মিডিয়ায় দুর্নীতি, বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্ম হয়েছে তার বিরুদ্ধে বলে গিয়েছি, অবশ্যই তা সুফল দেবে ৷
- ইটিভি ভারত-আপনি সুবক্তা । কী মনে হয় তমলুকের জনগণের কাছে আপনার বক্তব্য পৌঁছে দিতে পারবেন?
সায়ন- অবশ্য়ই, পৌঁছে দিতেই হবে ৷ আর কোনও উপায় নেই ৷ বয়সটা যখন কম ছিল তখন শুনতাম, পশ্চিম বাংলা থেকে যে সাংসদরা লোকসভায় যেতেন, তাঁদের বক্তৃতা শোনার জন্য, বিতর্ক শোনার জন্য সমস্ত বাকি এমপিরা অপেক্ষায় থাকতেন ৷ কিন্তু দুভার্গ্য হলেও সত্যি শেষ 10-12 বছর ধরে বাংলা থেকে যাঁরা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের বক্তব্য, বিতর্কের অবনমন ঘটেছে ৷ সেইসঙ্গে পার্লামেন্টে না-যাওয়ার প্রবণতা এসেছে ৷ এই যে দেব ভোটে দাঁড়িয়েছেন একশো দিনের 14 দিন তিনি পার্লামেন্টে গিয়েছেন ৷ মিমি, নুসরত এমনকী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 14 থেকে 16 শতাংশ তাঁর পার্লামেন্টে উপস্থিতি ৷ ফলত সংসদ তথা লোকসভার যে গরিমা তা আমরা ফিরিয়ে দিতে চাই ৷
- ইটিভি ভারত-এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা, যাঁরা বক্তা হন তাঁদের শোনারও ধৈর্য্য থাকতে হয় সেক্ষেত্রে তমলুকের মানুষের দাবিদাওয়া, কথা শুনতে আপনি কতটা তৈরি যদি আপনি সাংসদ হন?
সায়ন- গণতন্ত্রে শোনাটাই মূল বিষয় ৷ বলাটা নয় ৷ আমরা বলব নির্দিষ্ট জায়গায় ৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা যদি না-শুনি তাহলে তাঁদের আওয়াজ আমরা দিল্লির মসনদে পৌঁছে দেব কেমন করে ৷ তাই গণতন্ত্রের যে মূলকথা, মানুষের হয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া সেই কাজই আমরা করব ৷
আরও পড়ুন: