সন্দেশখালি, 22 ফেব্রুয়ারি: "যাঁরা আইন ভেঙেছেন তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।" শাহজাহানের ডেরায় ঢুকে বৃহস্পতিবার সকালে এমনই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার । তাহলে কি সন্দেশখালিকাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে ? এই প্রশ্নের উত্তরে ডিজিপি শাহজাহানের নাম মুখে না-আনলেও আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন, আইন যাঁরাই ভেঙেছেন তাঁদের সকলকেই গ্রেফতার করা হবে । অর্থাৎ শাহজাহানকে ধরতে পুলিশ যে বদ্ধপরিকর, এদিন তাঁর মন্তব্যেই তা পরিষ্কার ৷
বৃহস্পতিবার সকালে সন্দেশখালি ঘাট থেকে ডিজিপি রাজীব কুমার লঞ্চ ধামাখালি ঘাটে এসে পৌঁছায় । সেখান থেকে তাঁর কনভয় রওনা হয়ে যায় কলকাতার উদ্দেশ্যে । তবে সন্দেশখালি ছাড়ার আগে ডিজিপি জানিয়ে দেন, আইন যাঁরাই ভেঙেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে রাজীব কুমার বলেন,"কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে । কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেন ।"
সন্দেশখালির অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির 14 দিনের মাথায় ঘটনাস্থলে গিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার । বুধবার রাতে বাইক নিয়ে সন্দেশখালির আনাচে-কানাচে ঘুরেছেন । এরপর থানাতে গিয়ে এডিজি (সাউথবেঙ্গল) সুপ্রতিম সরকার, বসিরহাটের পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান-সহ পুলিশের পদস্থ কর্তাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে পাশেই একটি পিডব্লিউডি-র গেস্ট হাউসে সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক সারেন রাজীব কুমার ।
দুটি বৈঠকেই সন্দেশখালির আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি, মহিলাদের নির্যাতন সংক্রান্ত কতগুলো অভিযোগ জমা পড়েছে সেই বিষয় ছাড়াও অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, পুলিশ এবং সিভিককর্মীরা কীভাবে কাজ করছেন, তাঁদের কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না; তা সবিস্তারে আলোচনা হয়েছে বলেই সূত্রের খবর ।
বুধবার সকাল থেকেই সন্দেশখালিতে ছিলেন রাজীব কুমার ৷ সন্ধ্যায় তাঁর লঞ্চ সন্দেশখালি ঘাট থেকে বেরিয়ে মাঝপথে নদীবক্ষে মিলিয়ে যায় ৷ নিভে যায় লঞ্চের আলোও । তারপর থেকেই কৌতূহল বাড়তে থাকে, কোথায় গেলেন রাজীব কুমার ? তিনি কি কোনও গোপন অভিযানে বেরিয়েছেন ? এমন প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাওয়ার ঠিক 2 ঘণ্টা 5 মিনিট পর আবারও সন্দেশখালি ঘাটে ফিরে আসে ডিজিপি'র লঞ্চ।
সূত্রের খবর বলছে, 2 ঘণ্টা 5 মিনিটের এই গোপন অভিযানেই 'ফেরার' তৃণমূল নেতা শাহজাহানকে গ্রেফতারের ব্লু-প্রিন্ট রচিত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ সেই ব্লু-প্রিন্ট নিজেই তৈরি করে দিয়েছেন রাজীব কুমার। এছাড়া নদীবেষ্টিত সন্দেশখালির দ্বীপগুলোর পরিস্থিতিও নদীপথে ঘুরে ঘুরে রাজ্য পুলিশের ডিজিপি চাক্ষুষ করেছেন বলে জানা গিয়েছে । সন্দেশখালির মতো উপদ্রুত এলাকায় এসে সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্য পুলিশের ডিজি'র রাত্রিবাস করা বেনজির বলেই মনে করছেন অনেকে ।
আরও পড়ুন :