জলপাইগুড়ি, 25 সেপ্টেম্বর: সদস্য হয়েও জলপাইগুড়ি আইএমএ ভবনে ঢুকতে পারলেন না চিকিৎসকরা ৷ অভিযোগ, জলপাইগুড়ি শাখার সম্পাদক সুশান্ত রায়ের চক্রান্তেই আইএমএ ভবনের গেটের তালা খুলতে দেওয়া হয়নি ৷ আর তাই বন্ধ গেটের বাইরে বৃষ্টিতে ভিজে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক করলেন জলপাইগুড়ির আইএমএ-র সদস্যরা ৷
এই ঘটনায় আইএমএ জলপাইগুড়ি শাখার সভাপতি চিকিৎসক নিতাই মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন বাকি সদস্যরা ৷ গত 11 সেপ্টেম্বর আইএমএ ভবনে চিকিৎসক নিতাই মুখোপাধ্যায় নিজে বৈঠক ডেকে আরজি কর-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্পাদক সুশান্ত রায়, তাঁর ছেলে সৌত্রিক রায় এবং চিকিৎসক অভীক দে-কে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ৷ আজ তিনিই 180 ডিগ্রি ঘুরে ভবনের চাবি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনওরকম সহযোগিতাও করলেন না বলে অভিযোগ উঠেছে ৷
আইএমএ জলপাইগুড়ির সদস্যদের দাবি, মঙ্গলবার রাতে আইএমএ ভবনে বৈঠকের কথা সভাপতি নিতাই মুখোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছিল ৷ গত রবিবার স্টেট কাউন্সিলের বৈঠকে জলপাইগুড়ি ব্রাঞ্চ কমিটি ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতেও বলা হয় ৷ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটিকে সেই সুপারিশও স্টেট কাউন্সিল করেছে ৷ কাউন্সিলের নির্দেশ মেনেই আইএমএ জলপাইগুড়ির সহ-সভাপতি চিকিৎসক রাহুল ভৌমিক, সভাপতি নিতাই মুখোপাধ্যায়কে জিবি বৈঠক ডাকার জন্য চিঠি দেন ৷ কিন্তু, তিনি বৈঠকের জন্য আসেননি ৷ এমনকি আইএমএ ভবনও খোলেননি ৷
তবে, সদস্যদের বৃষ্টিতে ভিজে বৈঠক করতে দেখে, আইএমএ ভবনের পাশে থাকা স্টুডেন্ট হেলথ হোমের সদস্যরা চিকিৎসকদের তাঁদের ভবনে বৈঠক করার জন্য অনুরোধ করেন ৷ পরে সেখানেই 80-100 জন চিকিৎসক বৈঠক করেন ৷
তৃণমূল বিধায়ক তথা আইএমএ জলপাইগুড়ির প্রাক্তন সভাপতি চিকিৎসক প্রদীপ কুমার বর্মা জানান, "আমাদের আগে থেকেই ঠিক ছিল আজ আইএমএ ভবনে বৈঠকে বসব ৷ সভাপতিকেও জানানো হয়েছিল ৷ কিন্তু, এখানে এসে দেখি তালা বন্ধ ৷ সব সদস্যরা কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি ৷ আমরা ভিজে-ভিজেই বাইরে বৈঠক করলাম ৷ আমরা পুরোপুরি চক্রান্তের শিকার ৷ এর বিরুদ্ধেই লড়াই চলছে ৷ জলপাইগুড়ি আইএমএ-তে একনায়কতন্ত্র চলছে ৷ আর সেটা চালাচ্ছেন সম্পাদক সুশান্ত রায় ৷ রাজ্য কমিটির সেন্ট্রাল কমিটি থেকে যা যা করতে বলা হয়েছে, তাই আমরা করছি ৷"
জলপাইগুড়ির আইএমএ-র সদস্য তথা প্রাক্তন সম্পাদক চিকিৎসক পান্থ দাশগুপ্তর অভিযোগ, "আমরা বৈঠক করতে চেয়েছিলাম ৷ গত 22 তারিখ স্টেট কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত শোনার জন্য এসেছিলাম ৷ জলপাইগুড়ি শাখা ভেঙে দেওয়ার জন্য বাকি চিকিৎসকরা সহমত পোষণ করুক এটা চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু, বৃষ্টির মধ্যে চিকিৎসকরা জড়ো হলেও, আইএমএ ভবন খোলা হল না ৷ ঢুকতে দেওয়া হল না আমাদের ৷ সম্পাদক ও সভাপতিকে জানানো হয়েছিল ৷ তাঁরা কোনও সদুত্তর দেননি ৷ কেয়ারটেকারও ভবন খোলেননি ৷ জলপাগুড়িতে সুশান্ত রায় সম্পাদক, তিনিই সভাপতি, তিনিই কোষাধ্যক্ষ ৷ আমাদের যে ধারণা ছিল, সেটাই আরও পোক্ত হল ৷
চিকিৎসক কমলেশ বিশ্বাস অভিযোগ করলেন, "আমাদের সভাপতি আগের দিন বৈঠক করলেন ৷ সই করলেন সুশান্ত রায়কে বহিষ্কারের বিষয়ে ৷ আজ তিনি উলটে গেলেন ৷ আমাদের ভবনে বসার ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হচ্ছে ৷ আইএমএ ভবনে বৈঠকে বসার কথা ছিল ৷ কিন্তু, আমাদের ভবনে ঢুকতে দেওয়া হল না ৷ আইএমএ আমার অধিকার ৷ আমরা আইনের পথে গিয়েই আইএমএ ভবনের তালা ভাঙব ৷ আমরা আমাদের সভাপতিকেও বহিষ্কারের দাবি জানাব ৷ স্টেট কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মেনে এই কমিটি ভাঙার পথে এগোচ্ছি ৷ আমরা চিঠি করেও ভবন খুলতে পারলাম না ৷ কেয়ারটেকার বলছে সম্পাদক ও সভাপতি না-বললে তালা খুলতে পারবে না ৷ এটাও থ্রেট কালচার ৷
আইএমএ-র সহ-সভাপতি চিকিৎসক রাহুল ভৌমিক বলেন, "আইএমএ জলপাইগুড়িতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই ৷ আমি চিঠি করার পরেও ভবনের তালা খোলা হল না ৷" এই ঘটনায় সভাপতি চিকিৎসক নিতাই মুখোপাধ্যায়কে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও, তাঁকে পাওয়া যায়নি ৷