কলকাতা, 2 জানুয়ারি: পাহাড়ি জমি নয়, সমতলে ফলছে রসাল কমলালেবু । দার্জিলিংয়ের পাশাপাশি, থাইল্যান্ড, পাকিস্তানের মিলিয়ে প্রায় 120টি প্রজাতির কমলালেবুর ফলছে সমতলের মাটিতে । আর তা দেখতে উৎসবের মরশুমে পিকনিক স্পট ও অন্যান্য দর্শনীয় স্থান ফেলে বিভিন্ন জেলা থেকে কমলালেবুর বাগানে ভিড় জমাচ্ছেন শয়ে শয়ে মানুষ ৷ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এই বাগানের ছবি ও ভিডিয়ো ৷
উৎসবের মরশুমে অশোকনগরের শ্রীকৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের কেওটসা গ্রামের লেবু বাগানে উপচে পড়া ভিড় । গত কয়েকদিন ধরে আপাত সাদামাটা এই গ্রামে বহু মানুষের আনাগোনা ৷ হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো তাঁদের এই এলাকায় টেনে আনছে কমলালেবুর মন মাতাল করা গন্ধ ৷ চারাদিক মঁ মঁ করছে সেই গন্ধে ৷ কেউ হুগলির চন্দননগর থেকে, কেউ বসিরহাট, কেউ নদিয়া, কেউ আবার বারাসত থেকে সড়ক পথে চলে এসেছেন অশোকনগরে । সেখানে সাত-আট বিঘা এলাকাজুড়ে কমলালেবুর বাগান । সমতলেই মিলছে হরেক রকমের কমলালেবু ৷
নারায়ণ মণ্ডল বছর 10-12 আগে নার্সারি শুরু করেন । প্রাথমিক ধাপে সফলতা আসেনি । পরে নানা পড়াশোনা করে গাছের পরিচর্যায় হাত পাকান তিনি ৷ শুরু করেন যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ ৷ আর তাতেই আসে সাফল্য ৷ এখন লেবুর গন্ধে মঁ মঁ করছে এলাকা । স্থানীয় মানুষ তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ কমলালেবুর বাগান দেখতে আসছেন । শয়ে শয়ে অতিথি নারায়ণকে পেয়ে যারপরনাই আপ্লুত নারায়ণ মণ্ডল ৷
কৃষক পরিবারের সন্তানের কথায়, "এত মানুষ আসবে জীবনে কল্পনা করতে পারেনি । এই চারা গাছ বা লেবুর প্রজাতি আমি শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না । আমি চাই বহু মানুষ এই লেবু চাষের সঙ্গে যুক্ত হন, তবেই আমি প্রকৃত সফলতা পাব ।" গাছের পরিচর্যার বিষয়ে তিনি বলেন, "বিশেষ কোনও সার বা রাসায়নিক ব্যবহার নয়, জৈব সারই কামাল করবে । সারা বছর গাছের যত্ন নিতে হবে । অক্টোবর মাস থেকে গাছের বেশি যত্নের প্রয়োজন ।"
বাগান মালিক পরিবারের আরেক সদস্য জগবন্ধু মণ্ডল বলেন, "লেবু ছাড়াও 40 প্রজাতির আম, কাঁঠাল, লিচু, সবেদা ইত্যাদি নানা প্রজাতির বহু গাছ এখানে আছে । দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ খবর পেয়ে এখানে দেখতে আসেন, সেটা ভালো লাগছে । কিন্তু অনেকেই ক্ষয়ক্ষতি করছেন । যে কারণে মাস কয়েক আগে আমরা টিকিটের ব্যবস্থা করেছি, বাগানে ঢুকতে গেলে 10 টাকা করে টিকিট নেওয়া হচ্ছে । তবে এবার পুরোপুরি বাগান বন্ধ করে দেওয়া হবে । বাগানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না । কারণ বহু মানুষ বাগানে ঢোকায় মাটির উপর পায়ের চাপে গাছের শিকড়ের সমস্যা হচ্ছে ৷ পাশাপাশি অনেকে গাছ-গাছালি ভেঙে দিচ্ছে ৷ লেবু পেড়ে নষ্ট করছে ৷ তাই সামগ্রিকভাবে বাগান আপাতত বন্ধ রেখে নতুন করে পরিচর্যার কাজ শুরু হবে ।"
হুগলির চন্দননগর থেকে লেবু বাগান দেখতে এসেছিলেন শীতলচন্দ্র ঘড়াই । তিনি বলেন, "দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিয়ে চিড়িয়াখানা যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম ৷ কিন্তু বালি ব্রিজের জ্যাম দেখে অন্য রুট ধরে অশোকনগরে চলে এলাম লেবু চাষ দেখতে ৷ যে লেবু দার্জিলিঙে বা অন্যান্য পাহাড়ি জায়গায় পাওয়া যায়, তা এখন কলকাতার পাশেই পাওয়া যাচ্ছে । তাই চলে এলাম ।"
বারাসত থেকে সপরিবারে লেবু বাগানে ঘুরতে এসেছিলেন পারমিতা বিশ্বাস । তিনি বলেন, "যখনই খবর পাই ছুটে চলে আসি । পাহাড়ি বা ঠান্ডা এলাকা ছাড়া যে সমতল ভূমিতেও বা আমাদের এলাকাতে লেবু চাষ হতে পারে, তা কিন্তু প্রমাণ হয়ে গেল এত সুন্দর একটা পরিবেশে ৷ চারিদিকে বড় বড় কমলালেবু ফলে আছে, দেখতে খুব ভালো লাগছে ।
অশোকনগরের কলেজ পড়ুয়া শুভজিৎ ব্যাপারী বলেন, "এলাকাতেই বাড়ি হলেও এই বাগানের বিষয়ে আগে জানতাম না । সামাজিক মাধ্যম থেকে প্রথম জানতে পেরেছি । তাই বছরের প্রথম দিন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে চলে এসেছি এই সুন্দর একটা জায়গায় । পাহাড়ের কমলালেবু বাড়ির পাশে পাওয়া যাচ্ছে, না এসে পারা যায় ।"