কলকাতা, 2 জানুয়ারি: জন্মদিনই মৃত্যুদিনে পরিণত হল যুবকের । ইংরেজি বর্ষবরণের রাতে ফোন করে বাড়ি থেকে যুবককে ডেকে নিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ বন্ধুদের বিরুদ্ধে । ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ মৃত যুবকের নাম সুব্রত মাঝি (26) । তিনি অনলাইন খাবার সংস্থার একজন ডেলিভারি বয় হিসাবে কাজ করতেন । ঘটনাটি ঘটেছে বিধাননগর কমিশনারেটের অন্তর্গত সল্টলেক মহিষবাথান উদয়ন পল্লিতে ।
গোটা ঘটনায় এলাকায় চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে । ইতিমধ্যে ঘটনায় তদন্তে নেমেছে বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার পুলিশ এবং বিধাননগর সিটি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । ঘটনায় অভিযুক্ত বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ । মৃত্যুর কারণও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
সাংবাদিক বৈঠক করে ডিসি বিধাননগর (সল্টলেক জোন) অনীশ সরকার বলেন, "ইতিমধ্যেই খুনের মামলার রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে । একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ ধৃত যুবকের নাম সবুজ মিস্ত্রি ৷ তাকে বিধাননগর আদালতের তরফ থেকে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে ৷ ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের ধরার চেষ্টা করা হবে ৷ কী কারণে এই ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷"
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পয়লা জানুয়ারি জন্মদিন ছিল সুব্রত মাঝির । হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন বুধবার দুপুরে মৃত্যু হয় ওই যুবকের । তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত 31 ডিসেম্বর রাত সাড়ে 10টা নাগাদ যুবককে ফোন করে সোনা নামে তাঁরই এক বন্ধু । ওই ফোন আসার পরেই হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সুব্রত ৷ এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাড়ি ফেরেননি তিনি ৷ একাধিকবার ফোন করেন তাঁর মা । কিন্তু ফোনে পাওয়া যায়নি তাঁকে । তারপর খোঁজাখুঁজি শুরু হয় ৷ তাতেও খোঁজে মেলেনি সুব্রতর ৷
পরে পরিবার জানতে পারে মৃত্যুঞ্জয় নামে এক বন্ধু সুব্রত মাঝিকে পাড়ার এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছে । ফলে সন্দেহ হয় তাদের । তড়িঘড়ি ওই যুবকের পরিবারের সদস্যরা হাজির হন সেখানে । এরপর ডাক্তার সুব্রতকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে । কিন্তু পরিবারের সদস্যরা যুবককে বাড়িতে নিয়ে আসেন । তখন তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল । এরপর পরিবারের লোকেরা তাঁকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান । অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজি কর হাসপাতালে । গতকাল দুপুরে আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় । হাসপাতাল সূত্রের খবর, এরপর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় ।
সুব্রতর মৃত্যুর পর থেকেই মৃত্যুঞ্জয় নামে ওই যুবক পলাতক বলে জানতে পেরেছে পুলিশ । প্রাথমিকভাবে তদন্তে নেমে এই ঘটনায় পুলিশ জানতে পারে যে, রাতে তাঁর বাড়ির কাছেই একটি ক্লাবের মাঠে পড়েছিলেন সুব্রত মাঝি । সেই জায়গাটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে । শুক্রবার সেখানে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা যেতে পারেন । তবে এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত এবং কী কারণে মারধর করা হয়েছে, সেই বিষয়ে তদন্ত করে দেখছে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার পুলিশ । বেশ কয়েকজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ।
মৃতের মা রীতা মাঝি বলেন, "আমি যখন হাসপাতালে গিয়েছিলাম, তখনই সন্দেহ করেছিলাম এটি কোনও দুর্ঘটনা নয়, বরং আমার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ।" বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলছেন তদন্তকারীরা । সাধারণত কোনও ব্যক্তি যদি অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে যান এবং তাঁর মাথা ফেটে যায়, সেক্ষেত্রে মাথায় যে প্রকারের ক্ষত সৃষ্টি হয়, সেই ক্ষত ছিল সুব্রতর মাথায় ।
সুব্রতর মা রীতা মাঝি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, "তদন্ত ঘুরপথে চালনা করার জন্য সুব্রতর এক বন্ধু আমাকে পুলিশের কাছে মিথ্যা কথা বলতে বলে । মৃত্যুঞ্জয় নামে ওই পলাতক যুবক আমাকে পুলিশের সামনে বলতে বলছে, আমার ছেলে মদ্যপান করে নাচতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে এবং সেখান থেকেই মাথায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে ।"
ইতিমধ্যে এই ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠেছে । কীভাবে তাঁকে মারা হল ? কেনই বা তাঁকে মারা হল ? কেন মাকে পুলিশের সামনে মিথ্যা কথা বলতে বলা হল ? এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি । ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পাশাপাশি পলাতক মৃত্যুঞ্জয়ের খোঁজ শুরু করেছেন বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা ।