শ্রীরামপুর, 12 নভেম্বর: শ্রীরামপুরের সিল্ক প্রিন্টিং শিল্প প্রায় 200 বছরের প্রাচীন। মূলত, সিল্ক ও সুতির কাপড়ের উপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রিন্ট করা হয় এখানে। কলকাতার বড়বাজার-সহ বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যে, দেশে-বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে। সেই জন্য রাজ্যের তরফে শ্রীরামপুর স্লিক হাব তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। শাড়ির বাজারে মন্দার কারণে অনেকে সিল্ক প্রিন্টিং ব্যবসায়ীরা কাজ বন্ধ করেছেন। অনেকে তাই শাড়ির প্রিন্টিং ছেড়ে কুর্তি টি-শার্ট প্রিন্টিংয়ের কাজে জোর দিয়েছেন।
এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় 20 হাজার শিল্পী ও মানুষ যুক্ত ছিলেন। শ্রীরামপুরেই আগে 350টি কারখানা ছিল। বর্তমানে 150টি কারখানা রয়েছে।তাদের মধ্যে আবার সিল্ক প্রিন্টিং ছেড়ে 30টি কারখানা গেঞ্জি প্রিন্টের কাজ করছে। অতীতে সিল্ক প্রিন্টিংয়ের শাড়ির চাহিদা থাকলেও বর্তমানে প্রিন্টিং শাড়ির চাহিদা কমছে। একদিকে বাজার সিল্ক শাড়ির দাম বাড়ছে। মহিলাদেরও শাড়ির প্রতি অনীহা বেড়েছে। অধিকাংশ মহিলা তাদের দৈনন্দিন ব্যস্ততায় সময় বাঁচাতে, কাজের সুবিধায় কুর্তি ও টি-শার্টের দিকেই ঝুঁকছেন । ফলে এই ধরনের পোশাকের চাহিদাও বাড়ছে ৷
যে সমস্ত ব্যবসায়ী প্রিন্টিং ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারও ফের গেঞ্জির কাজ শুরু করছেন। বছরের বেশিরভাগ সময় গরম আবহাওয়ার কারণে গেঞ্জির বাজার ভালোই রয়েছে। এই শিল্পে এবার হ্যান্ড প্রিন্ট, স্কিন ও বল্ক প্রিন্ট ছাড়াও মেশিনের সাহায্যে ডিজিটাল প্রিন্টের কাজ রমরমিয়ে চলছে। আগামিদিনে ব্যবসায়ীরা লেজার প্রিন্টের কাজের কথা ভাবছেন। তাহলে দেশীয় বাজারের সঙ্গে বিদেশের বাজারে কারবার বাড়বে।
শ্রীরামপুর সিল্ক প্রিন্ট কীভাবে তৈরি হয়?
শ্রীরামপুর সিল্ক প্রিন্টিং প্রধানত তিন ধরনের পদ্ধতিতে হয়। এক কম্পিউটার স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে, দুই কাঠের ব্লক প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে। তিন, শিল্পীর হাতে কাপড়ের উপর আঁকা হয়। গেঞ্জি প্রিন্টের ক্ষেত্রে স্কিন প্রিন্ট ও ডিজিটাল প্রিন্টারের সাহায্য নিয়ে হয়।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য
সিল্ক প্রিন্টিংয়ের এক ব্যবসায়ী দেবনাথ ঘোষ বলেন, "তিনিও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসায় বদল ঘটিয়েছেন। সিল্কের উপর বল্ক ও স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ের পরিবর্তে গেঞ্জি প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা তৈরি করেছেন। আমাদের শাড়ির স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা ছিল। কিন্তু গেঞ্জি চাহিদা বাড়ায় সেদিকে ঝুঁকেছি। এখনকার ছেলেমেয়েরা টি-শার্ট বা গেঞ্জি ব্যবহার বেশি করছেন। আমাদের ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুধু আমি নই, শ্রীরামপুরে বহু ব্যবসায়ী আছে যারা সিল্ক প্রিন্ট বন্ধ করে গেঞ্জি প্রিন্টের উপর জোর দিয়েছে।"
শ্রীরামপুর সিল্ক প্রিন্টিং অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ বণিক বলেন, "আগে শ্রীরামপুরের সিল্ক প্রিন্টিংয়ের শাড়ি হতো। কিন্তু, এই শাড়ির দাম দুই থেকে আড়াই হাজারের নিচে নয় ৷ অথচ, কুর্তি বা গেঞ্জি তার তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যায়। তাই চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও বদল আনতে হয়েছে। এছাড়াও পর্দা বেড সিড হচ্ছে শ্রীরামপুরে।"