লাহোর, 2 জানুয়ারি: প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ঠাঁই হল পাকিস্তানের গারদে ৷ গত 28 ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের এক যুবককে গ্রেফতার হয়েছেন পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের মাণ্ডি বাহাউদ্দিন জেলায় ৷ লাহোর থেকে এই জায়গার দূরত্ব 240 কিমি ৷ এদিকে তাঁর ফেসবুক প্রেমিকা স্থানীয় থানাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ওই যুবককে বিয়ে করতে চান না ৷
উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের যুবক বাদল বাবু সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন ফেসবুকে আলাপ হওয়া প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে ৷ তাঁকে তিনি বিয়ে করতে চান ৷ তাঁর সেই প্রেমিকা 21 বছর বয়সি সানা রানি জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিয়েতে তাঁর কোনও আগ্রহ নেই ৷ তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ ৷ বৃহস্পতিবার পঞ্জাবের এক পুলিশ আধিকারিক নাসির শাহ সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে বলেন, "সানা রানি পুলিশকে জানিয়েছেন, বিগত আড়াই বছর ধরে তিনি এবং বাবু ফেসবুক বন্ধু ৷ কিন্তু তিনি বাবুকে বিয়ে করতে চান না ৷"
পুলিশ আধিকারিক জানান, বাবু বেআইনিভাবে সীমান্ত টপকে মাণ্ডি বাহাউদ্দিন জেলায় সানা রানির গ্রাম মাউং-এ পৌঁছেছেন ৷ তাই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ বাবুর সঙ্গে কি রানির দেখা হয়েছিল ? এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি পুলিশ আধিকারিক ৷ রানি যে মতামত দিয়েছেন, তা যে তাঁর নিজস্ব কি না সে বিষয়েও সন্দেহ আছে পুলিশের ৷ এমনটা হতে পারে যে কারও চাপের মুখে তিনি বাবুকে বিয়ে করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ৷
একটি সূত্র সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, বাবুর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা সানা রানি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জেরা করেছে ৷ গ্রেফতার হওয়ার পর বাবু তাঁর প্রেমের গল্প পুলিশকে খুলে বলেন ৷ তাঁর কাছে কোনও বৈধ নথি ছিল না ৷ আলিগড়ের বাবুকে পাকিস্তানের বিদেশ নীতি সংক্রান্ত আইনের 13 ও 14 নম্বর ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পরে তাঁকে আদালতে পেশ করা হয় ৷ তাঁর 14 দিনের জেল হেফাজত হয়েছে ৷ মামলার পরবর্তী শুনানি 10 জানুয়ারি ৷
আলিগড়ের বারলা থানা এলাকায় খিতকারি গ্রামে বসবাস করেন বাবুর বাবা কৃপাল সিং ৷ তিনি জানান, ছেলের গ্রেফতারির খবরটি তাঁর পরিবার পেয়েছে সোশাল মিডিয়া মারফত ৷ তিনি বলেন, "এটা তো বিশ্বাসই করতে পারছি না ৷ আমরা জানতাম ও দিল্লিতে কাজ করছে ৷ পরে জানতে পারলাম পাকিস্তানের জেলে বন্দি ৷ আমরা স্তম্ভিত ৷ সিনেমার মতো মনে হচ্ছে ৷" বাবুর বাবা কৃপাল সিং এখন বাবুকে পাকিস্তানের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতে ভারত সরকারের কাছে বিশেষত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন জানিয়েছেন ৷
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা আমাদের ছেলেকে ফেরত চাই ৷ আমরা এও জানি না যে, কীভাবে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনব ৷ আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের প্রার্থনা করেছি ৷ ও তো খুব সাধারণ ছেলে ৷ এর আগে তো এরকম কিছু করেনি ৷"
আলিগড়ের এসপি (গ্রামীণ) অমৃত জৈন নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁরা বাবুর পরিবারের তরফে একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন ৷ বিষয়টি বিদেশমন্ত্রককে জানানো হবে ৷ জৈন বিবৃতিতে জানান, "আমরা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চেষ্টা করব, যাতে বাবুর সঙ্গে তাঁর পরিবারের লোকজন দেখা করতে পারে ৷ আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য, তিনি যেন পাকিস্তানের জেল থেকে ছাড়া পান, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা ৷"
পারিবারিক সূত্রে খবর, বাবু ফেসবুকে সক্রিয় থাকতেন ৷ সেখানেই তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানের তরুণীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ৷ গত বছরের অগস্ট মাসে রাখি উৎসবের পরপরই বাবু গ্রাম ছেড়ে চলে যান ৷ বাড়িতে তিনি জানান কাজের খোঁজে দিল্লিতে যাচ্ছেন ৷
এরপর দীপাবলির আগে বাবু বাড়িতে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো কল করেন ৷ তখনও তিনি পরিবারকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি ভালো আছেন ৷ একটি চাকরিও পেয়েছন ৷ তাঁর নিজের ফোন কেনার সামর্থ্য নেই ৷ তাই বন্ধুর মোবাইল থেকে ফোন করেছেন ৷ এখন বাবুর পরিবার জানতে পেরেছেন যে, তিনি জম্মুর দিক দিয়ে কোনওভাবে সীমান্ত টপকে পাকিস্তানে চলে গিয়েছেন ৷
সোশাল মিডিয়ায় আলাপ থেকে প্রেম এবং তারপর ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয় ৷ এর আগে ভারত থেকে অঞ্জু পাকিস্তানে গিয়ে তাঁর ফেসবুক প্রেমিক নাসরুল্লাকে বিয়ে করেন ৷ অঞ্জু ধর্মান্তরণ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ৷ গত বছরই পাকিস্তান সীমা হায়দার ভারতে এসে সচিনকে বিয়ে করেন ৷