দামোদরবাটি (বাঁকুড়া), 28 সেপ্টেম্বর: অবিভক্ত বাংলায় তখন বর্গী আক্রমণ । আজ থেকে প্রায় সাড়ে 300 বছর আগে বর্গীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বর্তমান বাংলাদেশ থেকে প্রতাপ আদিত্যের বংশধরেরা চলে আসেন বাঁকুড়া জেলার মল্লগড় বিষ্ণুপুরে । পরে মল্ল রাজাদের কর্তৃক প্রাপ্ত সম্পত্তি নিয়ে এবং রাজাদের কাছ থেকে 'চৌধুরী' উপাধি পেয়ে শুরু করেন বিশাল জমিদারি ।
বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ব্লকের জমিদার দামোদর নারায়ণ চৌধুরীর নাম অনুসারে গ্রামের নামকরণ করা হয় দামোদরবাটি । সেখানেই ছিল তাঁর জমিদারির পত্তন । পরবর্তীকালে মল্ল রাজাদের সৌজন্যে ফুলে ফেঁপে ওঠে চৌধুরী জমিদারদের বহর ৷ দামোদরবাটি গ্রামে তৈরি হয় প্রাসাদসম বাড়ি এবং শুরু হয় বিভিন্ন দেবদেবীর পূজার্চনা ।
কথিত আছে, চৌধুরীদের পূর্বপুরুষ একটি স্বপ্নাদেশ পান । যেখানে বলা হয় নদীতে একটি নিমকাঠ ভেসে আসছে তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে । সেই স্বপ্ন মোতাবেক বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের কুলো দেবী মৃন্ময়ীর আদলে নিমকাঠের মূর্তিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয় দেবী দুর্গাকে । তবে এই মৃন্ময়ী রূপী মা দুর্গা দশভূজা নন, দ্বি-ভূজা । মহালয়ার পরের দিন থেকে জমিদার বাড়ির পুরাতন চৌহদ্দিতে সাতদিন ধরে চলে নহবত। এখানে পুরাণ মতে পূজিত হন মা জগৎগৌরী । যেহেতু দেবীমূর্তি নিমকাঠের তৈরি, তাই তা বিসর্জন করা হয় না ৷ সারা বছর নিত্যপুজো চলে ৷ কেবল দুর্গাপুজোর এই ক'দিন ভোগ দিয়ে মায়ের পুজো করা হয় ৷
কালক্রমে জমিদার বাড়ির অবস্থা বদলেছে ৷ চুন-সুরকি খসে পড়া, শ্যাওলা ধরা জরাজীর্ণ জমিদার বাড়ির অন্দরের দুর্গাদালানে আজও প্রাচীন রীতি মেনে দুর্গা দেবীর আরাধনায় মেনে ওঠেন চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা । ভাঙা সেই জমিদারদের ইমারত আজও মনে করিয়ে দেয় চৌধুরীদের জমিদারির প্রতিপত্তির ইতিহাস ।
জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্য পার্থপ্রতিম চৌধুরী জানান, এখন জমিদারি নেই তবে পূর্বপুরুষেরা মা দুর্গাকে যে ষাট-সত্তর বিঘা জমি অর্পণ করে গিয়েছেন তার থেকে যা আয় হয় সেই থেকেই পুজোর আয়োজন করা হয় ৷ কম পড়লে তখন নিজেদের থেকে দেওয়া হয় ৷ তবে আগের নিয়ম নিষ্ঠা বজায় রেখেই এখনও পুজো করা হয় ।