কলকাতা, 24 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডের বিচারের দাবিতে 'রাত দখল' আন্দোলনে নামা মহিলাদের পুলিশি ও শাসকদলের হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ সেই হয়রানি রোধে মহিলা আইনজীবীদের দল তৈরি করল সিপিএম । সোমবার দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই খবর জানিয়েছেন ।
সেলিম বলেন, "আরজি করের ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামা প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রান করা হচ্ছে । থানায় ডেকে পাঠাচ্ছে পুলিশ । রাস্তায় তৃণমূল ও থানায় পুলিশ ভয় দেখাচ্ছে প্রতিবাদীদের । হেনস্তার শিকার মহিলাদের সাহায্য করবে আমাদের মহিলা আইনজীবীদের দল ।"
বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামা সব প্রতিবাদীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন এই সিপিএম নেতা ৷ তাঁর দাবি, "থানায় ডেকে পাঠালেও মহিলারা কেউ একা যাবেন না । আমাদের মহিলা আইনজীবীরা সঙ্গে যাবেন, থানার বাইরে প্রতিবাদীদের জমায়েতও হবে ।"
রাজ্য সরকারের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে ৷ এ বিষয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, "খুবই হতাশাজনক । আমরা দ্রুত ন্যায়বিচার চাই, যারা প্রমাণ লোপাটে সক্রিয় ছিল তাদেরও শাস্তি চাই । রাজ্যজুড়ে এই দাবিতেই মানুষ রাস্তায় নেমেছে । আদালতে শুনানি না হলে, রাস্তায় মানুষের সুনামি হবে ।"
এই প্রসঙ্গে পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষের উল্লেখ করে সেলিম বলেন, "নির্মল ঘোষ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, তাঁকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে সিবিআই জেরা করুক । আরজি কর হাসপাতালে নিহত তরুণী চিকিৎসকের দেহ তিনিই পরিবারকে না-দিয়ে কাউন্সিলরকে দিয়ে পানিহাটি শ্মশানে দ্রুত দাহের ব্যবস্থা করেছিলেন । আরজি করের ঘটনায় টালা থানার প্রাক্তন ওসি গ্রেফতার হওয়ায় কলকাতা পুলিশের যোগ প্রমাণিত । নির্মল ঘোষ গ্রেফতার হলেই তৃণমূল যোগও প্রমাণিত হয়ে যাবে ।"
কিন্তু সিবিআই-ইডি তদন্তে কোনও ভরসা প্রকাশ না-করে সেলিম একথাও বলেন, "রাজ্যের পুলিশকে তৃণমূল নিজেদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে, কেন্দ্রের সিবিআই-ইডি'কে বিজেপি দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে । দুই দলের বোঝাপড়ায় অনুব্রত মণ্ডল জামিন পেয়েছে । এনামুল জামিন পেয়েছে ৷ জামিনের সিরিজ চলছে । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেরা করছে না । কেন্দ্রের শাসকদল মোটেই পশ্চিমবঙ্গের অপরাধচক্র ভাঙতে চায় না । মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছিলেন পদত্যাগ করবেন । তার কী হল ? বিজেপি তৃণমূল প্রতিষ্ঠান তৈরি করে না । প্রতিষ্ঠান ভাঙে । আইএএস আইপিএসগুলোরও সেরকম হয়েছে । রাজ্যের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে সংসদে প্রশ্ন তোলেন ? আইএএস দিয়ে রাজনীতি করাচ্ছেন । আর রাজনীতিবিদদের দিয়ে কী করাচ্ছেন ?"
অভিযোগ, তৃণমূলের আধিপত্যে টালিগঞ্জের কেশসজ্জা শিল্পী কাজ না-পাওয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন । এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেছেন, "টালিগঞ্জে তৃণমূলের কোনও এক নেতার অঙ্গুলিহেলনে কেউ কাজ পান, কেউ কাজ হারান - সেটা সবাই জানে । আসলে তৃণমূল রাজ্যের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে 'থ্রেট কালচার' তৈরি করেছে । তাদের টাকা তোলার চক্রের আধিপত্য কায়েম করেছে । স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অভীক দে, বিরূপাক্ষরা যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্নীতির সাম্রাজ্যের নাটবল্টু, তেমনই প্রতিটি ক্ষেত্রে এরকম নাটবল্টুরা রয়েছে । শিক্ষাক্ষেত্রে এই দুর্নীতি চক্রের জন্যই দীর্ঘদিন ধরে চাকরিতে নিয়োগে বঞ্চিতরা সল্টলেকে রাস্তায় নেমেছিলেন, পুলিশ তাঁদের উপরে হামলা আক্রমণ চালিয়েছে ।"