মালদা, 25 অক্টোবর: এবারের লোকসভা নির্বাচনে মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে জয় পেয়ে রাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন ইশা খান চৌধুরী ৷ তবে তার পর থেকেই পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তা কংগ্রেসের জন্য যথেষ্টই চিন্তার ৷ কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকে চলছে দলবদলের হিড়িক ৷ এমনটা চলতে থাকলে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকে কংগ্রেস সাইনবোর্ডে পরিণত হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷
গত লোকসভা নির্বাচনে বিশেষ করে সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের ঢালাও আশির্বাদে সাংসদ হন ইশা খান চৌধুরী ৷ একসময়ে পরিবারের গড় বলে পরিচিত সুজাপুর কেন্দ্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে পর্যদুস্ত হয়েছিলেন তিনি ৷ তৃণমূল প্রার্থী, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আবদুল গনির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন এক লাখ 30 হাজারেরও বেশি ভোটে ৷ তারপর থেকেই তিনি এই কেন্দ্র পুনরুদ্ধারে ঝাঁপান ৷
নিয়মিত কর্মসূচি, মানুষের সঙ্গে বছরভর যোগাযোগের ফল মেলে লোকসভায় ৷ তার আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকে কংগ্রেসের ভালো ফল হয় ৷ কিন্তু লোকসভা ভোটের পর যেন গঙ্গার থেকেও বেশি ভাঙন শুরু হয়েছে কালিয়াচকের কংগ্রেস শিবিরে ৷ একের পর এক দল ছাড়ছেন কংগ্রেসের নেতারা ৷ যোগ দিচ্ছেন তৃণমূলে ৷ সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন অনুগামীদেরও ৷ একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হচ্ছে হাত শিবিরের ৷
গতকাল সন্ধেয় কালিয়াচকের টাউন লাইব্রেরিতে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী ও শারদ সম্মান প্রদানের মঞ্চে কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের 10 জন কংগ্রেস ও চারজন আইএসএফ সদস্য ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন ৷ তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি, দলের জেলা মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুরা ৷ সিলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’জন কংগ্রেস সদস্য ও একজন বিজেপি সদস্যও ওই মঞ্চে তৃণমূলে যোগদান করেছেন ৷
দলবদলের কারণ প্রসঙ্গে নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তথা কংগ্রেসের নওদা যদুপুর অঞ্চলের কার্যকরী সভাপতি মহম্মদ আমিনুজ্জামান জানাচ্ছেন, "কংগ্রেসে থাকাকালীন আমরা বিভিন্ন কাজে বিশেষ করে জেলা নেতৃত্বের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত ছিলাম ৷ কোনও সংকটে নেতৃত্বের সহযোগিতা পেতাম না ৷ নেতৃত্ববিহীন একটি সংগঠন কোনও অঞ্চলে চালানো কষ্টকর ৷ অথচ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ্য নেতৃত্ব রয়েছে ৷ এই দলের নেতৃত্ব সবসময় কর্মীদের পাশে থাকে ৷ কর্মীদের সুবিধে অসুবিধে দেখে ৷ সংগঠন বৃদ্ধি করতে কর্মীদের জন্য সুনিশ্চিত পরিকল্পনা তৈরি করে ৷ তাই নওদা যদুপুর অঞ্চলের 14 জন সদস্য ও কর্মী তৃণমূলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিই ৷ সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি সারিউল হকের নেতৃত্বে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছি ৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নওদা যদুপুর অঞ্চলে তৃণমূল একশোয় একশো পাবে ৷"
এই মুহূর্তে দিল্লিতে রয়েছেন ইশা খান চৌধুরী ৷ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি ৷ সাংসদ হওয়ার পর ইশা খানকে এলাকায় খুব একটা দেখাও যাচ্ছে না ৷ কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লক কংগ্রেসের নেতা সামাউন আলি দলের ভাঙনের বিষয়ে বলেন, "লোকসভা নির্বাচনের পর দলের জেলা নেতারা যেন ঘুমিয়ে পড়েছেন ৷ তাঁরা কোনও কর্মসূচি নেন না ৷ এমনকি কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও করেন না ৷ এমনটা চলতে থাকলে এখনও এই ব্লকে দলের যেটুকু ভোট ব্যাংক রয়েছে, সেটাও ধসে যাবে ৷ সেক্ষেত্রে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ব্লকে কংগ্রেস কার্যত সাইনবোর্ডে পরিণত হবে ৷ জেলা নেতারা এটা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন, ততই দলের মঙ্গল ৷"