কলকাতা, 20 ফেব্রুয়ারি: এবার শেখ শাহজাহানকে কলকাতা হাইকোর্টে তলবের ভাবনা প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের । মঙ্গলবার সন্দেশখালি সংক্রান্ত একটি মামলার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানালেন প্রধান বিচারপতি । এ দিন ওই মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে ৷ সেখানে সন্দেশখালির সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আদালত রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনাও করে ৷
প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম জানান, যেদিন তলব করা হবে শেখ শাহজাহানকে, সেদিন আদালতে রাজ্য পুলিশ, সিবিআই এবং ইডি সবাই উপস্থিত থাকবে । যাঁর জন্য এই সব ঘটনা ঘটছে, রাজ্য তাঁকে সমর্থন করতে পারে না । তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মানুষের প্রতি তিনি কোনও কর্তব্য পালন করেছেন বলে মনে হয় না । যদি পুলিশ তাঁকে ধরতে না পারে, তাহলে এটা মনে করতে হবে যে তিনি রাজ্যের বাইরে আছেন ।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তা দিতে পারে না । মূল অভিযুক্ত যদি ঘুরে বেড়ান, তাহলে 144 ধারা জারি করে কী হবে ? সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়বে । রাজ্যের বিভিন্ন পদক্ষেপে বাড়ছে সমস্যা । 19 দিনের ওপর হয়ে গেল ৷ কিন্তু এখনও যার কারণে সমস্যার সূত্রপাত, তাঁকে ধরতে পারল না পুলিশ ! তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ? আমি বিস্মিত ।’’ এছাড়া জমি দখলের অভিযোগ শোনার জন্য যেহেতু রাজ্য সরকার আলাদা ব্যবস্থা করেছে । তাই প্রাথমিক ভাবে আদালত মনে করছে যে এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা আছে ।
উল্লেখ্য, বিচারপতি কৌশিক চন্দ সোমবার শুভেন্দু অধিকারীকে সন্দেশখালিতে যাওয়ার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য ৷ সেখানে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, কাঁথি থেকে সকাল 6টায় যাত্রা শুরু করেছেন শুভেন্দু ৷ সকাল 10টায় তিনি সন্দেশখালি পৌঁছে যাবেন । তিনি সেখানে এর আগে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর দেওয়া নির্দেশও চ্যালেঞ্জ করেন ৷ সেখানে 144 ধারা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ অ্যাডভোকেট জেনারেল আবেদন করেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত মামলা শোনা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মৌখিক নির্দেশ দিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর সন্দেশখালি যাত্রার ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক ।
তখন আবেদনকারীর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানান, ধামাখালিতে শুভেন্দু অধিকারীকে আটকানো হয়েছে । যা শুনে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য করেন, ‘‘যদি আপনাদের দু’জনকে দেখে আপনাদের অনুগামীরা আসে, তখন কী হবে ? কোনও উপযুক্ত কারণ না দেখিয়ে 144 ধারা জারি করা হয়েছে । এটাই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ । আজকে আপনারা (রাজ্য) ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই মামলায় আমরা কোনও নির্দেশ দিচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল আছে । তাই আপনারা কাউকে আটকাতে পারেন না ।’’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘এটা করলে নতুন সমস্যা তৈরি হবে । শর্তসাপেক্ষে তাঁকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে । তাঁকে আটকালে পরিস্থিতি দুই নেতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে । স্থানীয় মানুষরা এই দুই নেতার বক্তব্যকে সমর্থন করতে পারেন । সাতদিন পর সিঙ্গল বেঞ্চে ফের মামলা আছে, সেখানে নিজেদের বক্তব্য পেশ করতে পারবেন । 2 ঘণ্টার মধ্যে এমনিতেও সব মিটে যাবে ।’’
এর পর শুভেন্দু অধিকারীকে সন্দেশখালি যাওয়ার অনুমতি দেন প্রধান বিচারপতি । তিনি নির্দেশ দেন, শুভেন্দু অধিকারী ও শঙ্কর ঘোষ সন্দেশখালি যেতে পারবেন । নিরাপত্তা আধিকারিকরা ছাড়া কোনও সমর্থক বা দলীয় কর্মী যেন তাদের সঙ্গে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে । এলাকায় যেন কোনও শান্তি ভঙ্গ না হয়, সেটা দেখবে রাজ্য পুলিশ ।
অন্যদিকে কিশোর দত্ত আদালতে জানান, সোমবারের পর আরও তিনটি জায়গায় 144 ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে । প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কিছু বিধিবদ্ধ কেন্দ্রীয় টিমকে আটকানো হচ্ছে । এটা করে সমস্যা বাড়ছে । প্রাথমিক অভিযোগ হল যে জমি দখল করে মাছের ভেড়ি তৈরি করা হয়েছে । আর এটা যাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত, তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন !’’ অন্যদিকে সন্দেশখালি নিয়ে বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় রাজ্য, সিবিআই, ইডি-সহ সবপক্ষকে নোটিশ জারি করল আদালত । আগামী সোমবার শুনানি ।
আরও পড়ুন: