কলকাতা, 14 নভেম্বর: বাসের রেষারেষিতে মৃত্যু হয়েছে এক খুদে স্কুল পড়ুয়ার ৷ মঙ্গলবারের পর বৃহস্পতিবারও দু'টি পথ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে কলকাতায় ৷ তাতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বৈঠক করলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা, বিভিন্ন পরিবহন নিগমের কর্তারা, বাস মালিক সংগঠন এবং ট্রাক মালিক সংগঠনের সদস্যরা ৷
সেখানেই দুর্ঘটনা রুখতে কড়া হওয়ার বার্তা দিলেন পরিবহণ মন্ত্রী ৷ এবার থেকে বেপরোয়া গতির কারণে মৃত্যু হলে চালকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হবে ৷ সল্টলেকে পরিবহণ সংক্রান্ত এই বৈঠকের পর একথাই জানালেন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ৷
তিনি বলেন, "বেপরোয়া গতির ফলে দুর্ঘটনায় কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হলে, চালকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করতে চায় পরিবহণ দফতর ৷ এই সঙ্গে লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা-সহ, ক্ষতিপূরণ এবং আরও একগুচ্ছ পদক্ষেপ করবে রাজ্য সরকার ৷" এদিন এই বৈঠক থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ে আর কোনও ঢিলেমি রাখতে চাইছে না রাজ্য ৷
একই সঙ্গে এদিনের বৈঠক শেষে পথচারী তথা সাধারণ মানুষকে রাস্তাঘাটে চলাফেরার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী ৷ রাস্তায় বেরলে সিগন্যাল মানার বার্তাও দিয়েছেন মন্ত্রী ৷ এদিন দুর্ঘটনা রুখতে সরকার কী কী পদক্ষেপ করতে পারে, সে বিষয়ে পুলিশ এবং বাস মালিক তথা পরিবহণ সংস্থাগুলির কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে ৷
রাজ্য পুলিশ দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে 'সেভ ড্রাইভ সেফ লাইফ' আরও বেশি করবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী ৷ এবার পরিবহণ দফতরের তরফেও একই ধরনের প্রচার কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, জানান মন্ত্রী স্নেহাশিস ৷ বাস মালিকদের উদ্দেশ্যে সরকারের পরামর্শ, তাঁরা যেন চালকদের জন্য কমিশন প্রথা তুলে দেন ৷ বাড়তি আয়ের তাগিদ থেকেই বেপরোয়া গতিতে বাস চালানো হয় ৷ তাই কমিশন প্রথা বন্ধ হলে, সেই প্রবণতা অনেকটা বন্ধ হবে বলে আশা করছেন মন্ত্রী ৷
এদিন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "আমি প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী হিসাবে স্নেহাশিসকে অনুরোধ করেছি, একটা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে ৷ এর মধ্যে কমিশন সিস্টেম থাকবে না ৷ যে মানবে না, তার পারমিট বাতিল হবে ৷ সেই রুটে আরেকটি ট্রাফিক মনিটরিং সিস্টেম থাকবে । কোন সময় কত ট্রাফিক দরকার সেটা এখান থেকে বোঝা যাবে ৷ এই নজরদারি সিস্টেমটি একটি জিপিএস সিস্টেমের সঙ্গে যোগ করে দিতে হবে ৷"
তিনি আরও জানান, একই এলাকায় একাধিক স্কুলের ছুটির সময় বদলাতে হবে ৷ ফিরহাদের কথায়, "এর সঙ্গে শিক্ষা দফতরকেও যুক্ত করব ৷ স্কুলের স্তরে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কর্মসূচি হবে। তাতে স্কুলের পড়ুয়ারাও সচেতন হবে ৷ স্কুলের সামনে রেলিং দিয়ে দেব ৷ আপাতত পুলিশ গার্ডরেল দিয়ে দেবে, যাতে বাস একটাই জায়গা থেকে ছাড়ে ৷ এক জায়গায় দু'তিনটে স্কুল থাকলে তাদের ছুটির সময়টা আলাদা আলাদা করতে হবে ৷ সব স্কুলগুলি একসঙ্গে ছুটি হলে রাস্তায় অরাজকতা হবে, সেটা হতে দেওয়া যাবে না ৷"