মেদিনীপুর, 15 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালি ইস্যুতে বৃহস্পতিবার জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের অফিস ঘেরাও করে বিজেপি ৷ ব্যতিক্রম নয় মেদিনীপুরও ৷ সেখানেও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিজেপিকে বিক্ষোভ করতে দেখা গেল ৷ গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা মিছিলে হাঁটলেন ৷ বিজেপির মহিলা কর্মীরা ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভ দেখালেন ৷ এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের খণ্ডযুদ্ধও বাঁধে ৷ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি ৷
উল্লেখ্য়, গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তপ্ত উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালি ৷ সেখানে তিনদিন ধরে মহিলারা বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তাঁর দুই অনুগামী শিবপ্রসাদ ওরফে শিবু হাজরা ও উত্তম সরদারের বিরুদ্ধে ৷ মহিলারা এই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে জমি দখল থেকে নারী নির্যাতন, একাধিক অভিযোগ তুলেছেন ৷ আপাতত 144 ধারা জারি করে বিক্ষোভ সামাল দিয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন ৷
তবে সেখানে পৌঁছানোর জন্য গত কয়েকদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ৷ গত সোমবার বসিরহাট পুলিশ জেলার অফিস ঘেরাও করে বিজেপি ৷ সেই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ মঙ্গলবার টাকিতে ইছামতীর তিরে তিনি সরস্বতী পুজো করেন ৷ সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে সন্দেশখালি যেতে বাধা দেয় ৷ বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির জেরে নিচে পড়ে যান সুকান্ত মজুমদার ৷ তার জেরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ আপাতত তিনি কলকাতায় বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷
এই ঘটনার পরই বৃহস্পতিবার জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের অফিস ঘেরাও করার ডাক দেয় বিজেপি ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর শহর মেদিনীপুরে এই কর্মসূচি করা হয় বিজেপির তরফে ৷ ওই কর্মসূচির জন্য জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজেপি কর্মীদের গাড়িতে করে আনা হয় ৷ আন্দোলনে হাজির ছিলেন বিজেপির জেলাস্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ সামনে ছিল জেলা বিজেপির মহিলা মোর্চা ৷
যদিও পুলিশ বিজেপির অভিযানের আগেই পুলিশ প্রহরা বাড়ি দেয় । রাতারাতি সদর মহকুমা শাসকের তরফে 144 ধারা জারি করে দেওয়া হয় । এরপরই অভিযানে নামে বিজেপি নেতৃত্ব কর্মী ও মহিলারা । মূলত, অভিযানে নেমে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে গিয়ে হাজির হন মহিলারা । সেখানে বাধা পেয়েই ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে যান পুলিশের দিকে । পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁরা । পুলিশ তাঁদের ফাইবার গার্ড দিয়ে আটকানার চেষ্টা করলে তার উপরেই ঝাঁটা মারতে থাকেন ক্রমাগত ।
পালটা পুলিশ কর্মীরাও হাতের লাঠি ও গার্ড নিয়ে সেই ঝাঁটা আটকাতে দেখা যায় এ দিন । বেশ কিছুক্ষণ এভাবে হাতাহাতি ধস্তাধস্তি চলার পর বিজেপির লোকজন অবস্থানে বসে পড়েন । তাঁরা প্রতিবাদ দেখাতে থাকে । স্লোগানের পাশাপাশি তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান । একপ্রস্থ বিক্ষোভের পরেই এলাকা ছাড়েন বিজেপি নেতা-নেত্রী ও কর্মীরা । যদিও অন্যান্য জেলার মতো এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সেভাবে পুলিশের সক্রিয়তা চোখে পড়েনি ।
এই বিষয়ে বিজেপির মহিলা মোর্চা নেত্রী পারিজাত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এই রাজ্যের সন্দেশখালি মতো বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে একটি সম্প্রদায়ের উপর আরেকটি সম্প্রদায় হিংসা ও অত্যাচার নামিয়ে আনছে, সেক্ষেত্রে পুলিশ নির্বাক । পুলিশ ইচ্ছে করেই টাকা দিয়ে এই ধরনের নারকীয় ঘটনা ঘটাচ্ছে । তাই পুলিশের বিরুদ্ধেই আমাদের আন্দোলন । আমরা আজ মহিলারা এই বিজেপির মিছিলের সঙ্গে এসে ঝাঁটা নিয়ে প্রতিবাদ দেখিয়েছি । আগামিদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বা এই ধরনের হিংসা ঘটলে, আবার আমরা আন্দোলন করব ৷’’
বিজেপির জয়েন্ট কনভেনর লক্ষ্মীকান্ত সাউ, শংকর গুছাইত জানান, যেভাবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের উপর হামলা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করা হচ্ছে ৷ সন্দেশখালির ঘটনায় পুলিশের হাত রয়েছে । তারা অভিযুক্ত শাহাজানকে না ধরে নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে অত্যাচার করছে৷ তাই এই প্রতিবাদ ।
আরও পড়ুন: