মেমারি, 19 ডিসেম্বর: গলির ভিতরে একটা বাড়ি। বাড়ির একপাশে বাঁধা কয়েকটা ছাগল । পাশে রাখা ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য গাছের পাতা । গ্রাম বা মফস্বলে কোনও বাড়ির সামনে এমন দৃশ্য দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না ৷ তাই পূর্ব বর্ধমানের মেমারির চকদিঘি মোড় এলাকার কৃষ্টিপাড়ার সঙ্গীতা সাহানির বাড়ি দেখে বিস্ময় জাগেনি কারও ৷
কিন্তু বুধবার রাতে সেই বাড়ি থেকে উদ্ধার হল 47 কেজি গাঁজা, নগদ প্রায় 42 লক্ষ টাকা ৷ উদ্ধার হওয়া এই বিপুল পরিমাণ টাকা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল একটি ঘরের মেঝেতে গর্ত করে ৷ স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় রীতিমতো বিস্মিত স্থানীয় বাসিন্দারা ৷
পুলিশ গাঁজা ও টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে । গ্রেফতার করা হয়েছে সঙ্গীতা সাহানিকে । পুলিশের সন্দেহ, শুধুমাত্র এই রাজ্যে নয়, ভিন রাজ্যেও কারবার চালানো হতো ৷ তাই সঙ্গীতা সাহানিকে জেরা করলে আরও অনেক তথ্য উঠে আসতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা ৷
পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেমারি থানা গোপন সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে মেমারি 1 নম্বর ওয়ার্ডে কৃষ্টিপাড়া এলাকায় অভিযান চালায় । সেখানে একটা বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজা পাওয়া যায় । প্রায় 47 কেজি গাঁজা । নগদ পাওয়া যায় প্রায় 42 লক্ষ টাকা । ব্যাংক কর্মীদের উপস্থিতিতে টাকা গোনার পরে সেই টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয় ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই বাড়ি থেকে গাঁজার কিছু ছোট পুরিয়া, কিছু বড় পুরিয়া ও কিছু এক কেজির প্যাকেট পাওয়া যায় । সঙ্গীতা সাহানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে ছোট পুরিয়া 50 টাকা করে ও বড়ো পুরিয়া 100 টাকা করে বিক্রি করা হতো । যে টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেই টাকা গাঁজা বিক্রি করার টাকা । সঙ্গীতা সাহানির মা লালপরি সাহানিও আগে গাঁজা বিক্রি করতেন । তার বিরুদ্ধেও গাঁজা বিক্রির মামলা দায়ের হয়েছিল । আর কে বা কারা যুক্ত আছে পুলিশ সেই তদন্ত করছে ।’’
পুলিশ জানিয়েছে, ছাগলকে খাওয়ানোর গাছপালার পাশে দু’টো বস্তা ছিল ৷ প্রথমে ওই দু’টি বস্তা পুলিশের নজরে পড়েনি ৷ প্রায় ঘণ্টা দুই-তিনেক তল্লাশির পর বস্তা দু’টির হদিশ মেলে ৷ তার পরই গাঁজা উদ্ধার হয় ৷ বস্তার মধ্যে বিভিন্ন সাইজের ব্যাগ ছিল ৷ সেই ব্যাগেই গাঁজা রাখা ছিল ৷
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, সঙ্গীতা ওড়িশা থেকে গাঁজা নিয়ে আসতো । সেই গাঁজাকে বিভিন্ন মাপের ছোট-বড়ো পুরিয়া করে বর্ধমান-সহ অন্যান্য জায়গায় বিক্রি করত । এছাড়া ঘরের ভিতরে ঢুকে পুলিশ দেখতে পায় মেঝেতে গর্ত করে একটা কালো ব্যাগ রাখা আছে । সেই ব্যাগের চেন খুলতেই মেলে পাঁচশো টাকার নোটের বান্ডিল । পুলিশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকা গোনার মেশিন নিয়ে আসা ৷ টাকা গোনার পর দেখা যায় যে তার পরিমাণ 41 লক্ষ 87 হাজার 280 টাকা ।