ব্যারাকপুর, 22 মার্চ: ব্যারাকপুর ! রাজ্যের বহুল চর্চিত লোকসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম । 2019 সালে এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ হয়েছিলেন অর্জুন সিং ৷ পাঁচবছর পর আরও একটা নির্বাচন ৷ আগামী 20 মে ব্যারাকপুরের বাসিন্দারা ভোট দেবেন ৷ ভোট দেওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবে সাংসদের রিপোর্ট কার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ৷
সেই রিপোর্ট কার্ডের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, সাংসদ তহবিল থেকে বরাদ্দ করা 17 কোটি টাকার মধ্যে 14 কোটি 14 লক্ষ 870 টাকার কাজের প্রস্তাব রেখেছিলেন অর্জুন সিং । এর মধ্যে 8 কোটি 36 লক্ষ টাকার অনুমোদন মিলেছিল । সেই টাকার মধ্যে 4 কোটি 46 লক্ষ 5 হাজার 400 টাকা খরচই করতে পারেননি সাংসদ অর্জুন সিং । অর্থাৎ তাঁর কাজের পারফরম্য়ান্সের অনুপাত 61 শতাংশ ।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঠিক কী কী কাজ হয়েছে ব্যারাকপুরে
- টিটাগড় পৌরসভার 14 নম্বর ওয়ার্ডে কবরস্থানের উন্নয়নে সাংসদ তহবিলের 46 লক্ষ টাকা ব্যয় করে নতুন রাস্তা, পানীয় জল ও পর্যাপ্ত আলোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে ।
- উত্তর ব্যারাকপুর পৌরসভার অধীনস্থ ইছাপুরে যামিনী ভূষণ মেমোরিয়াল মেটারনিটি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ডায়ালসিস ইউনিট খোলা হয়েছে । এর জন্য সাংসদ তহবিল থেকে 48 লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।
- হালিশহর পৌরসভার 22 নম্বর ওয়ার্ডের নয়াবাজার কবরস্থানের উন্নয়ন হয়েছে সাংসদ তহবিলের 35 লক্ষ টাকায় ।
- নৈহাটি বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছ'টি ঢালাই রাস্তা নির্মাণ হয়েছে সাংসদ তহবিলের টাকায় । যাতে সাধারণ মানুষের যাতায়াত করতে সমস্যা না হয় ।
- ব্যারাকপুর সান্ধ্য সমিতির সাধারণ পাঠাগারের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সাংসদ তহবিল থেকে 5 লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । সেই কাজ সম্পন্ন হবে খুব শীঘ্রই ।
- শ্যামনগর রত্নেশ্বর শ্মশান ঘাটের ছয় শয্যা বিশিষ্ট পিস হেভেন এবং ডানবার শ্রমিক লাইনে বেহাল রাস্তা সংস্কার হয়েছে সাংসদ তহবিলের টাকায় । এই দুটি উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল প্রায় 33 লক্ষ টাকা ।
প্রাপ্তির সঙ্গে অপ্রাপ্তির সংখ্যাও নেহাতই কম নয়! রইল তাঁর তালিকা...
- ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে অনেক রাস্তা এখনও বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে । দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ার ফলে তা সাধারণ মানুষের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ।
- ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এখানে বহু কলকারখানা এখনও বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে । কিছু কারখানার ঝাঁপ আবার বন্ধ হওয়ার মুখে । এই নিয়ে এলাকার সাংসদকে বিশেষ কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ । যার ফলে বাড়ছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ।
- ব্যারাকপুর মহকুমার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবস্থা আজও বেহাল । এই নিয়ে কোনও হেলদোল নেই কারোরই । ফলে পরিষেবা পেতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয় বাসিন্দাদের ।
- সংকীর্ণ ঘোষপাড়া রোডের অধিকাংশটাই এখন চলে গিয়েছে হকার ও টোটোর দখলে । তাঁদের দাপটে রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই দায় হয়ে পড়েছে । ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা । হুঁশ ফিরছে না প্রশাসনের ।
- গঙ্গা ভাঙন রোধে প্রতিশ্রুতি মিললেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি । এর ফলে মাঝেমধ্যেই গঙ্গার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বসতবাড়ি ।
যদিও সাংসদ অর্জুন সিংয়ের দাবি, "তিনি তাঁর এমপি ল্যাডের 100 শতাংশ টাকায় খরচ করতে পেরেছেন । যে টাকাটা খরচ না হওয়ার কথা বলা হচ্ছে সেই টাকাটা আটকে রয়েছে ডিএম অফিসে । কারণ, সাংসদ তহবিলের টাকার ছাড়পত্র দেন ডিএম-ই । আমার দিক থেকে কোনও টাকা আটকে নেই । আমি আমার কাজে যথেষ্ট সন্তুষ্ট ।"
সাংসদ তো সন্তুষ্ট ৷ কিন্তু কী বলছেন সাধারণ মানুষ ? স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ সাউ বলেন, ‘‘ব্যারাকপুরের সব মানুষই সাংসদের কাজে খুশি ৷ তিনি ভাটপাড়ার বিধায়ক থাকাকালীনই ব্যারাকপুরের উন্নয়ন নিয়ে সব কাজ করতেন তিনি ৷ তৃণমূলের জন্য অনেক কাজ করতে পারেননি ৷’’ বিনোদ সাউয়ের সঙ্গে সহমত ব্যারাকপুর লোকসভা এলাকার আরেক বাসিন্দা গৌতম কুমার ৷ তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় বাসিন্দা অর্জুন সিং সাংসদ হওয়ার আগে থেকেই এলাকায় কাজ করতেন ৷ এখনও সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ আমরা ওঁর কাজে সন্তুষ্ট ৷ আগামিদিনেও ভালো কাজ করবেন বলে আশাবাদী ৷’’
যদিও ব্যারাকপুরের ভোটের অঙ্ক বেশ জটিল ৷ কারণ, ভাটপাড়ার চারবারের তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং 2019 সালে ব্যারাকপুর থেকে লোকসভার নির্বাচনে লড়ার সুযোগ না পেয়ে বিজেপিতে যোগ দেন ৷ পদ্ম-প্রতীকে জিতে সাংসদও হন ৷ 2022 সালে তিনি আবার তৃণমূলে ফেরেন ৷ তবে এবারও তাঁকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল ৷ ওই কেন্দ্রে এবার শাসক দলের প্রার্থী নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ৷
প্রার্থী হতে না পেরে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়ে আবার গেরুয়া শিবিরে ফিরেছেন অর্জুন সিং ৷ ব্যারাকপুর আসনের জন্য বিজেপি এখনও কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি ৷ তবে সূত্রের খবর, অর্জুনকেই আবার প্রার্থী করা হবে ৷ তাই রিপোর্ট কার্ডের পাশাপাশি বারবার দলবদলও ইস্যু হতে পারে ৷ তার প্রমাণও মিলেছে স্থানীয় বাসিন্দা মিন্টু আচার্যের কথায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘সাংসদের কাজে আমরা একেবারে খুশি নই ৷ সাংসদ বর্তমানে দল পরিবর্তন করতেই ব্যস্ত ৷ বারবার দলবদল করলে কাজ করবেন কীভাবে ? কোনও উন্নয়নের কাজ করেননি ৷’’
ফলে শাসক দল একে হাতিয়ার করে যে ভোট ময়দানে ঝাঁপাতে মরিয়া হয়ে উঠবে, তা বলাই যায় । শেষ পর্যন্ত পার্থ-অর্জুনের এই লড়াইয়ে কে বাজিমাত করে, সেটাই দেখার অপেক্ষায় ব্যারাকপুরবাসী ।
আরও পড়ুন: