কলকাতা, 8 মার্চ: শেষমেষ আদালতের নির্দেশের পর মিটল ডার্বির টিকিটের দামের বৈষম্য ৷ যা বাঙালির চিরকালীন ডার্বিতে তো কোনও দিন হয়নি ৷ এমনকি ভারতীয় ফুটবলেও এই নজির নেই ৷ বৃহস্পতিবার এনিয়ে নগর দেওয়ানি আদালত নির্দেশ দেয়, টিকিটের দামের বৈষম্য মিটিয়ে দু’দলের সমর্থকদের মাঠে উপস্থিত থাকার সুযোগ করে দিতে হবে ৷ মোহনবাগানের একদল সদস্য-সমর্থক এই মামলা করেছিলেন ৷ আদালতের সেই নির্দেশের পরেই রাতে ময়দানে নামেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ৷ ইমামি ইস্টবেঙ্গল ও ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে, দুই ক্লাবের সমর্থকদের জন্য টিকিটের দাম সমান করা হয় ৷
নগর দেওয়ানি আদালতের নির্দেশের পরেই বৃহস্পতিবার রাতে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ইমামি ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ৷ সেখানে ক্লাব কর্তারাও হাজির ছিলেন ৷ দীর্ঘ আলোচনার পরে টিকিটের দামের বৈষম্য মেটানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর ৷ অর্থাৎ, কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান দুই ক্লাবের সমর্থকরাই সমান দাম দিয়ে টিকিট কাটতে পারবেন ৷ কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে বুধবার থেকে তৈরি হওয়া এই বিতর্ক মেটাতে কেন 24 ঘণ্টা পার হয়ে গেল ? কেন আদালত পর্যন্ত এই বিষয়টি গেল ? যা ভারত কেন, বিশ্বের কোনও ক্লাব ফুটবলে হয়েছে বলে মনে করা যাচ্ছে না ৷
প্রসঙ্গত, 10 মার্চের ডার্বির আয়োজক ইস্টবেঙ্গল এফসি ৷ আয়োজকরা বুধবার বিকেলে টিকিটের দাম প্রকাশ করে ৷ সেখানে দেখা যায় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের টিকিটের সর্বনিম্ন মূল্য মাত্র 100 টাকা ৷ সেখানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট সমর্থকদের টিকিটের সর্বনিম্ন মূল্য 250 টাকা ৷ টিকিটের দামের এই বৈষম্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় সবুজ-মেরুন শিবিরে ৷ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার জানান, টিকিটের দাম নির্ধারণে ক্লাবের ভূমিকা নেই ৷ পুরোটাই লগ্নিকারী সংস্থা করেছে ৷
বৃহস্পতিবার এনিয়ে বিতর্ক নয়া মাত্রা নেয় ৷ মোহনবাগান ক্লাবের সচিব দেবাশিস দত্ত টিকিট নেওয়া ও বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন ৷ কার্যত সবুজ-মেরুন সমর্থকদের ডার্বি বয়কটের প্রছন্ন বার্তা দেন তিনি ৷ এর পরপরই খবর রটে যায়, ডার্বির টিকিটের দামে বৈষম্য করা যাবে না বলে আদালত রায় দিয়েছে ৷ স্বাভাবিক ভাবেই চমকে যায় ময়দান ৷ প্রশ্ন উঠতে থাকে, হঠাৎ আদালতে কে বা কারা গেল ? এনিয়ে দুই ক্লাবের কাছে কোনও তথ্য ছিল, কি ছিল না ? এই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মোহনবাগান ক্লাবের আইনজীবী সেলের সদস্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ৷
আদালতে মামলা এবং রায়ের সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান, "টিকিটের দামের বৈষম্যের প্রতিবাদে রাজা রায়, প্রিয়ঙ্কা রায়, তমাল বোস, অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবায়ন রায়চৌধুরী মামলা করেছিলেন নগর দেওয়ানি আদালতে ৷ বিচারক শান্তুনু ঝা তাঁর রায়ে টিকিটের দামর বৈষম্য মিটিয়ে দু’দলের সমর্থকদের মাঠে উপস্থিত থাকার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলেছেন ৷ এই রায়ের ফলে ম্যাচ আয়োজন, টিকিট বিক্রির ওপর কোনও স্থগিতাদেশ নেই ৷"
এই মামলার রায় ও পরিস্থিতি নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব পুরো দায় লগ্নিকারী সংস্থার উপর চাপিয়েছে ৷ যদিও, লগ্নিকারী সংস্থা এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ৷ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, "ফুটবল বিশ্বে টিকিটের দাম নির্দিষ্ট করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে ৷ ক্লাবগুলি নিজেরা এই বিষয়ে জোটবদ্ধ হয়ে চুক্তি করছে ৷ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও টিকিটের দামের ওপর লক্ষ্মণরেখা টেনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে ৷ অথচ আইএসএলে এই বৈষম্য ৷" উল্লেখ্য, এই টিকিটের মূল্যে বৈষম্য দেখে চমকে গিয়েছে ভারতীয় ফুটবল ৷ তাই ফিরতি ডার্বি বল গড়ানোর আগে, ফুটবলের বাইরের নানান বিষয় নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ৷
আরও পড়ুন: