জলপাইগুড়ি, 21 ডিসেম্বর: 'টুয়েলভ ফেল'-এর মনোজ কুমারের মতো, তিনিও উচ্চমাধ্যমিকে অনুত্তীর্ণ হন ৷ তারপর পড়াশোনা ছেড়ে চাষাবাদ ৷ ফের পড়াশোনা শুরু করে আইপিএস হন বর্তমানে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার উমেশ গণপত খন্ডবাহালে ৷ তাঁর এই কাহিনি শুনে অনুপ্রেরণা নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন জলপাইগুড়ির এক দুঃস্থ ছাত্রী ৷
সেই ছাত্রীর পড়াশোনার ইচ্ছে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন খড়গপুর আইআইটির প্রাক্তনী তথা কলকাতা নিবাসী প্রবীণ ইঞ্জিনিয়ার রতিকান্ত ঘোষ ৷ বর্তমানে জলপাইগুড়ির পাঁচ দুঃস্থ ছাত্রীর পড়াশোনার খরচ বহন করছেন তিনি ৷ শুক্রবার জলপাইগুড়ির তিস্তা উদ্যানে সেই ছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন রতিকান্ত ঘোষ ৷ জলপাইগুড়ি পুলিশ প্রশাসনের তরফে রতিকান্ত ঘোষকে সম্মানিত করা হল ৷
গত 20 জুলাই জলপাইগুড়ি প্রেসক্লাবের অনুপ্রেরণামূলক একটি অনুষ্ঠান থেকে নিজের জীবনের কাহিনি তুলে ধরেছিলেন পুলিশ সুপার উমেশ গণপত খন্ডবহালে ৷ উচ্চমাধ্যমিকে অকৃতকার্য হওয়ার পর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন ৷ বাবার সঙ্গে চাষবাস করতেন ৷ দু’বছর পর ফের পড়াশোনা শুরু করেন ৷ তারপর একে-একে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ইউপিএসসি পাশ ও বর্তমানে আইপিএস অফিসার ৷
পুলিশ সুপার উমেশ গণপত খন্ডবহালের সেই কাহিনী শুনে পড়াশোনার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিল এক ছাত্রী ৷ বাবা-মা’র সামর্থ না-থাকায় পড়াশোনা করে বড় মানুষ হওয়ার ইচ্ছে ধামাচাপা পড়ে যেতে পারে ৷ সোশাল মিডিয়ায় সেই অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো এবং ওই ছাত্রীর আর্তি রতিকান্ত ঘোষের মনকে নাড়া দিয়ে যায় ৷
ঠিক করেন তিনি এমন দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবেন ৷ সেই মতো জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন আইআইটি খড়গপুরের এই প্রাক্তনী ৷ তাঁর সেই ইচ্ছেকে সম্মান জানায় প্রশাসনও ৷ বাছাই করা পাঁচজন ছাত্রীর নাম তাঁর কাছে পাঠানো হয় ৷ গত তিনমাস ধরে রতিকান্ত ওই পাঁচজনের পড়াশোনার জন্য দেড় হাজার টাকা করে পাঠাচ্ছেন ৷ সেই টাকায় পড়াশোনা করছে ওই ছাত্রীরা ৷
তবে, যাদের পড়াশোনার খরচ তিনি বহন করছেন, তাদের সঙ্গে কোনও দিন দেখা হয়নি রতিকান্ত ঘোষের ৷ জলপাইগুড়ি পুলিশ-প্রশাসনই সেই সুযোগ করে দেয় গত শুক্রবার ৷ জলপাইগুড়ির দেবনগর কুমুদিনী স্কুল, অরবিন্দ মাধ্যমিক স্কুল ও সেন্ট্রাল বালিকা বিদ্যালয়ের ওই পাঁচ ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি ৷ সস্ত্রীক এসেছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার রতিকান্ত ৷
তিনি বলেন, "যাদেরকে আমি সহযোগিতা করছি ৷ তাদের সঙ্গে দেখা করতে এলাম ৷ আজ ওদের হাতে বইখাতা তুলে দিলাম ৷ আমি ওদের বলেছি, মনেরভাব প্রকাশ করতে চিঠি লেখার জন্য ৷ আরও কিছু মানুষ যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে আরও অনেক দুঃস্থ পড়ুয়া পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে ৷ আর ওদের বলেছি, আমার জন্য রিটার্ন গিফট হবে ওরা পড়াশোনা করে সুপ্রতিষ্ঠিত হলে ৷"
এ নিয়ে রতিকান্ত ঘোষের স্ত্রী অপর্ণা ঘোষ বলেন, "ছাত্রীদের এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে ৷ ওরা সফল হোক এটাই চাই ৷ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার উমেশ গণপত খন্ডবহালে জানান, জলপাইগুড়ি প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠান ফেসবুক লাইভে দেখে রতিকান্ত ঘোষ গত তিনমাস ধরে এই ছাত্রীদের আর্থিকভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন ৷ আজ তিনি ওদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ৷"