ETV Bharat / health

থ্যালাসেমিয়া নিরাময়ে প্রয়োজন সচেতনতা, জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য - World Thalassemia Day 2024

World Thalassemia Day: রক্তের ব্যাধি থ্যালাসেমিয়ার গুরুতরতা এবং এর ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে 8 মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালিত হয় । যদিও এখনও মানুষের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব রয়েছে ।

World Thalassemia Day News
থ্যালাসেমিয়া ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বিশ্বজুড়ে (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 8, 2024, 11:30 AM IST

হায়দরাবাদ: থ্যালাসেমিয়া একটি গ্রিক শব্দ । থ্যালাসা কথার অর্থ সমুদ্র । অ্যানিমিয়া কথার অর্থ রক্তাপ্লতা । থ্যালাসেমিয়া একটি গুরুতর জেনেটিক রক্তের ব্যাধি । কথিত, গ্রিসের কোনও এক সমুদ্রের ধারে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে । যা ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বিশ্বজুড়ে ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও থ্যালাসেমিয়া ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর দেশে প্রায় 10,000 শিশু বিটা থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার 3.4 শতাংশ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত । এই পরিসংখ্যান সত্ত্বেও, ভারত-সহ সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব রয়েছে ।

থ্যালাসেমিয়া কী (What is Thalassemia)?

থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক ব্যাধি ৷ যা অটোসোমাল রিসেসিভ ডিসঅর্ডার নামেও পরিচিত । এটি মা বা বাবা অথবা উভয়ের জিনের মাধ্যমে শিশুর শরীরে যেতে পারে ।

এই রোগে রক্তে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় ৷ ফলে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন ও কাজ করার ক্ষমতাও কমে যায় । প্রকৃতপক্ষে, সাধারণত একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে আরবিসি অর্থাৎ লোহিত রক্ত ​​কণিকার সংখ্যা প্রতি ঘন মিলিমিটারে 45-50 লাখ । কিন্তু থ্যালাসেমিয়ায় এই কণিকাগুলি দ্রুত ধ্বংস হতে শুরু করে এবং নতুন কোষ তৈরি হয় না । রক্তে আরবিসির গড় বয়স 120 দিন বলে মনে করা হয় । কিন্তু এটি কমে মাত্র 10-25 দিনে এসে দাঁড়ায় । যার কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিন কমতে শুরু করে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি মারাত্মক রক্তস্বল্পতার শিকার হয় । এই পরিস্থিতিতে শরীরে রক্তের প্রয়োজন মেটানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে ভুক্তভোগীদের রক্ত ​​​​সঞ্চালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । সাধারণত শিশুর জন্মের ছয় মাস পরেই এই রক্তের ব্যাধির উপস্থিতি শনাক্ত করা যায় ।

উপসর্গ এবং কারণের উপর নির্ভর করে থ্যালাসেমিয়া কমবেশি গুরুতর হতে পারে । এর মধ্যে মাইনর থ্যালাসেমিয়ায় লক্ষণগুলি বেশ অল্প দেখা যায় যেখানে সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার সাহায্যে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে । কিন্তু মেজর থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে । বেঁচে থাকলেও নিয়মিত রক্ত নেওয়ার পাশাপাশি আজীবন চিকিৎসা এবং সতর্কতা প্রয়োজন । যদিও পাশাপাশি আরও কিছু গুরুতর শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে ৷

লক্ষণ: থ্যালাসেমিয়ার কিছু প্রধান লক্ষণ যা 6 মাস থেকে শিশুদের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে-

শরীরে রক্তের অভাব, নখ এবং জিহ্বা হলুদ হওয়া, মুখের হাড়ের বিকৃতি, শারীরিক বিকাশ ধীর বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি এবং অপুষ্টির অভাব, দুর্বলতা এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা, পেট ফুলে যাওয়া এবং প্রস্রাবের সমস্যা ইত্যাদি ।

চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ: ভার্মা হেলথ কেয়ার ক্লিনিক, নয়াদিল্লির চিকিৎসক ডাঃ অলোক কুমার সিং বলেন, ‘‘মাইনর থ্যালাসেমিয়ায় চিকিৎসা, ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে, আক্রান্ত ব্যক্তি অনেকাংশে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু আমরা যদি মেজর থ্যালাসেমিয়ার কথা বলি, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সহ সারাজীবন রক্ত ​​দিতে হয়। এই অবস্থায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে রক্তের স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট কার্যকর হতে পারে। কিন্তু এটি সহজ নয় কারণ সঠিক দাতা খুঁজে পাওয়া কঠিন ।’’

ডাঃ সিং বলেন, "এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে যারা ইতিমধ্যেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তাদের বিয়ের আগে নিজেদের এবং তাদের সঙ্গীর শারীরিক পরীক্ষা করানো । একই সময়ে, এই ধরনের ব্যক্তিদের অবশ্যই সন্তান পরিকল্পনা করার আগে একটি ডাক্তারি পরীক্ষা করা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত । এছাড়া যেসব ক্ষেত্রে জন্মের পর শিশুর থ্যালাসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ পরীক্ষা করা উচিত । যাতে প্রয়োজনে প্রি-নেটাল রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করা যায় ।"

ইতিহাস এবং উদ্দেশ্য: 'বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস' উদযাপনের উদ্যোগ প্রথম 1994 সালে থ্যালাসেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন গ্রহণ করে । থ্যালাসেমিয়া রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মধ্যে তথ্য ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ফেডারেশন 8 মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে । এই উপলক্ষে প্রতি বছর জাতীয়, আন্তর্জাতিক, সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের দ্বারা বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ও ক্যাম্পের আয়োজন করা হয় ।

আরও পড়ুন:

  1. এই ফলগুলি ফ্রিজে রেখে খাচ্ছেন ? মারাত্মক বিপদ হতে পারে !
  2. প্রবল গরমে ভরসা থাক আখের রসে, শরীরে আসবে নতুন শক্তি
  3. সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চোখের যত্ন নিন এভাবে

হায়দরাবাদ: থ্যালাসেমিয়া একটি গ্রিক শব্দ । থ্যালাসা কথার অর্থ সমুদ্র । অ্যানিমিয়া কথার অর্থ রক্তাপ্লতা । থ্যালাসেমিয়া একটি গুরুতর জেনেটিক রক্তের ব্যাধি । কথিত, গ্রিসের কোনও এক সমুদ্রের ধারে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে । যা ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বিশ্বজুড়ে ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও থ্যালাসেমিয়া ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর দেশে প্রায় 10,000 শিশু বিটা থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার 3.4 শতাংশ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত । এই পরিসংখ্যান সত্ত্বেও, ভারত-সহ সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব রয়েছে ।

থ্যালাসেমিয়া কী (What is Thalassemia)?

থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক ব্যাধি ৷ যা অটোসোমাল রিসেসিভ ডিসঅর্ডার নামেও পরিচিত । এটি মা বা বাবা অথবা উভয়ের জিনের মাধ্যমে শিশুর শরীরে যেতে পারে ।

এই রোগে রক্তে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় ৷ ফলে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন ও কাজ করার ক্ষমতাও কমে যায় । প্রকৃতপক্ষে, সাধারণত একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে আরবিসি অর্থাৎ লোহিত রক্ত ​​কণিকার সংখ্যা প্রতি ঘন মিলিমিটারে 45-50 লাখ । কিন্তু থ্যালাসেমিয়ায় এই কণিকাগুলি দ্রুত ধ্বংস হতে শুরু করে এবং নতুন কোষ তৈরি হয় না । রক্তে আরবিসির গড় বয়স 120 দিন বলে মনে করা হয় । কিন্তু এটি কমে মাত্র 10-25 দিনে এসে দাঁড়ায় । যার কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিন কমতে শুরু করে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি মারাত্মক রক্তস্বল্পতার শিকার হয় । এই পরিস্থিতিতে শরীরে রক্তের প্রয়োজন মেটানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে ভুক্তভোগীদের রক্ত ​​​​সঞ্চালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । সাধারণত শিশুর জন্মের ছয় মাস পরেই এই রক্তের ব্যাধির উপস্থিতি শনাক্ত করা যায় ।

উপসর্গ এবং কারণের উপর নির্ভর করে থ্যালাসেমিয়া কমবেশি গুরুতর হতে পারে । এর মধ্যে মাইনর থ্যালাসেমিয়ায় লক্ষণগুলি বেশ অল্প দেখা যায় যেখানে সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার সাহায্যে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে । কিন্তু মেজর থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে । বেঁচে থাকলেও নিয়মিত রক্ত নেওয়ার পাশাপাশি আজীবন চিকিৎসা এবং সতর্কতা প্রয়োজন । যদিও পাশাপাশি আরও কিছু গুরুতর শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে ৷

লক্ষণ: থ্যালাসেমিয়ার কিছু প্রধান লক্ষণ যা 6 মাস থেকে শিশুদের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে-

শরীরে রক্তের অভাব, নখ এবং জিহ্বা হলুদ হওয়া, মুখের হাড়ের বিকৃতি, শারীরিক বিকাশ ধীর বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি এবং অপুষ্টির অভাব, দুর্বলতা এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা, পেট ফুলে যাওয়া এবং প্রস্রাবের সমস্যা ইত্যাদি ।

চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ: ভার্মা হেলথ কেয়ার ক্লিনিক, নয়াদিল্লির চিকিৎসক ডাঃ অলোক কুমার সিং বলেন, ‘‘মাইনর থ্যালাসেমিয়ায় চিকিৎসা, ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে, আক্রান্ত ব্যক্তি অনেকাংশে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু আমরা যদি মেজর থ্যালাসেমিয়ার কথা বলি, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সহ সারাজীবন রক্ত ​​দিতে হয়। এই অবস্থায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে রক্তের স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট কার্যকর হতে পারে। কিন্তু এটি সহজ নয় কারণ সঠিক দাতা খুঁজে পাওয়া কঠিন ।’’

ডাঃ সিং বলেন, "এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে যারা ইতিমধ্যেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তাদের বিয়ের আগে নিজেদের এবং তাদের সঙ্গীর শারীরিক পরীক্ষা করানো । একই সময়ে, এই ধরনের ব্যক্তিদের অবশ্যই সন্তান পরিকল্পনা করার আগে একটি ডাক্তারি পরীক্ষা করা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত । এছাড়া যেসব ক্ষেত্রে জন্মের পর শিশুর থ্যালাসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ পরীক্ষা করা উচিত । যাতে প্রয়োজনে প্রি-নেটাল রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করা যায় ।"

ইতিহাস এবং উদ্দেশ্য: 'বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস' উদযাপনের উদ্যোগ প্রথম 1994 সালে থ্যালাসেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন গ্রহণ করে । থ্যালাসেমিয়া রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মধ্যে তথ্য ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ফেডারেশন 8 মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে । এই উপলক্ষে প্রতি বছর জাতীয়, আন্তর্জাতিক, সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের দ্বারা বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ও ক্যাম্পের আয়োজন করা হয় ।

আরও পড়ুন:

  1. এই ফলগুলি ফ্রিজে রেখে খাচ্ছেন ? মারাত্মক বিপদ হতে পারে !
  2. প্রবল গরমে ভরসা থাক আখের রসে, শরীরে আসবে নতুন শক্তি
  3. সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চোখের যত্ন নিন এভাবে
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.