হায়দরাবাদ: পারকিনসন্স এমন একটি রোগ, এটি যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছয়, তখন আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যের উপর নির্ভরশীল করে তুলতে পারে । যদিও এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 60-65 বছর বয়সের পরেই দেখা যায় ৷ তবে খুব কম ক্ষেত্রে বা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, 45 বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যেও এর লক্ষণ দেখা যায় । এই নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং এর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাদের শিক্ষিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর 11 এপ্রিল বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস পালিত হয় ।
পারকিনসন্স কী (What is Parkinson's)?
পারকিনসন্স একটি মস্তিষ্কের ব্যাধি । কোনও কারণে মস্তিষ্কের সাবস্ট্যান্টিয়া নিগ্রা নামক অংশের স্নায়ু কোষের ক্ষতির কারণে ডোপামিনের উৎপাদন কমে গেলে বা সমস্যা হলে এই রোগ হয় । আসলে, মস্তিষ্কের এই অংশে ডোপামিন তৈরি হয় ।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি তার স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে ধীরগতি অনুভব করতে শুরু করে এবং তার কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতার অভাব এবং ভারসাম্য সম্পর্কিত সমস্যা অনুভব করে । সেই সঙ্গে মাংসপেশিতে শক্ত হওয়া বা এর পাশাপাশি শরীর কাঁপানো, হাঁটা, কথা বলা, ঘ্রাণ ও ঘুমের সমস্যা এবং পায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য ও অস্থিরতার মতো সমস্যা দেখা দেয় ।
পারকিনসন্স রোগের লক্ষণগুলি প্রায়শই শরীরের একপাশে বা একটি অঙ্গ থেকে শুরু হয় । কিন্তু এই রোগের প্রভাব যত বাড়তে থাকে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও এর প্রভাব পড়তে থাকে । পারকিনসন্সের উন্নত পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাত্রার মান ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় ।
এখানে এটাও জানা জরুরি যে বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে এর উপসর্গ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে । পারকিনসন্সের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 60 বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষদের মধ্যে দেখা যায় । কিন্তু মোট কেশের মধ্যে, প্রায় 5% থেকে 10% ক্ষেত্রে রয়েছে যেখানে 45 বছর বা 50 বছর বয়সে উপসর্গগুলি অনুভব করা যেতে পারে ।
উদ্দেশ্য, গুরুত্ব ও ইতিহাস (Purpose, Importance and History)
গত কয়েক বছরে, পারকিনসন্স সম্পর্কে অনেক সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে । কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকেই এই রোগ সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না । এমনকি অনেকে এর লক্ষণগুলির সূত্রপাতকে স্বাভাবিক বার্ধক্যের লক্ষণ বলে মনে করে এবং সেগুলিতে মনোযোগ দেয় না । পরিসংখ্যান অনুসারে, পারকিনসন্স রোগ, আলঝেইমারের পরে দ্বিতীয় প্রধান নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ হিসাবে বিবেচিত ৷ বিশ্বব্যাপী 10 মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করে ।
বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস আন্তর্জাতিক স্তরে সংস্থা এবং মানুষদের এই অবস্থার আরও ভালো চিকিৎসা এবং পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার বিষয়ে আলোচনা করার একটি সুযোগ এবং প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে । এছাড়াও এই দিকে আরও ভালো গবেষণা এবং অন্যান্য প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করা যেতে পারে । এই উপলক্ষে সারা বিশ্বে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও অন্যান্য ধরণের আলোচনা, গবেষণা এবং সোশাল মিডিয়ায় কার্যক্রমের মতো অনেক ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।
এছাড়াও, এই দিনটি ডাঃ জেমস পারকিনসন্স জীবনকে সম্মান জানাতেও উৎসর্গ করা হয় ৷ যিনি 1817 সালে নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডারের প্রথম কেস আবিষ্কার করেছিলেন ।
ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর পারকিনসন্স ডিজিজ (বর্তমানে পারকিনসন্স ইউরোপ) 11 এপ্রিলকে বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব করার পর 1997 সালে এই দিনটি উদযাপন শুরু হয় । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) এই উদ্যোগ নেয় ৷
আরও পড়ুন: