হায়দরাবাদ: সাধারণত মানুষ মনে করে শুধুমাত্র বেদানা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ৷ কিন্তু বেদানার উপকারিতা শুধুমাত্র এর দানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এর খোসাও উপকারী ৷ এছাড়াও বেদানার খোসা শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, সৌন্দর্যের জন্যও খুবই উপকারী । এমনকি আয়ুর্বেদেও এর খোসা উপকারী বলে বিবেচিত হয় ।
বেদানার খোসায় পাওয়া যায় পুষ্টিগুণ ও বৈশিষ্ট্য: প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ, ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্যানিন, পটাসিয়াম, পলিফেনল এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান বেদানার খোসায় পাওয়া যায় । এছাড়াও বেদানার খোসায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় যা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যালগুলিকে ধ্বংস করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে ৷ ঠান্ডা এবং অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় ।
বেদানার খোসার স্বাস্থ্য উপকারিতা (Health Benefits of Currant Peel):
মুম্বইয়ের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডাঃ মনীষা কালে বলেন, "শুধুমাত্র বেদানার বীজ নয় এর খোসারও অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে যা স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে । বেদানার খোসাকে এর পাউডার তৈরি করে অনেক উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ যা ওজন কমাতে সাহায্য করে ৷ হার্ট ও পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ।"
আয়ুর্বেদ অনুসারে, বেদানার খোসার কিছু উপকারিতা নিম্নরূপ ।
হজমের সমস্যায় বেদানার খোসার ব্যবহার খুবই উপকারী । বেদানার খোসার গুঁড়ো বানিয়ে গরম জলের সঙ্গে খেলে পাচনতন্ত্র শক্তিশালী হয় এবং ডায়রিয়া, গ্যাস ও বদহজমের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এছাড়াও এটি অন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ও পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে ।
বেদানায় খোসায় পাওয়া পলিফেনল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড হার্টকে সুস্থ রাখে । এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ৷ যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় । বেদানার খোসার গুঁড়ো হালকা গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে হার্ট শক্তিশালী হয় ৷
বেদানার খোসায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ৷ যা চর্মরোগ থেকে মুক্তি দেয় । বেদানার খোসার গুঁড়ো বানিয়ে তাতে গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের উন্নতি ঘটে ৷ এর থেকে দাগ, ব্রণের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং বলিরেখাও কমে । এটি ত্বককে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও রক্ষা করে ৷
বেদানার খোসায় ভিটামিন সি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় ৷ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । আয়ুর্বেদে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করার জন্য তাদের ব্যবহার বাঞ্ছনীয় । যার ফলে মানুষ রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে পারে ।
চুলের সমস্যার বেদানার খোসা ব্যবহার করা হয় । এর গুঁড়ো নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগালে চুল মজবুত হয় ও চুল পড়া কমে । এটি খুশকি কমায় এবং চুলকে প্রাকৃতিক চকচকে যোগায় ।
বেদানার খোসার ব্যবহার ওজন কমাতেও উপকারী । এতে উপস্থিত ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মেটাবলিজম বাড়ায় ৷ শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে । কুসুম গরম জলের সঙ্গে খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে ।
বেদানার খোসার গুঁড়োও দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় উপকারী । এটিতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে ৷ যা দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির ফোলাভাব কমায় । এর পাউডার দিয়ে নিয়মিত দাঁত ও মাড়ি ব্রাশ করলে দাঁতের সাদা ভাব বজায় থাকে এছাড়াও মাড়ি মজবুত হয় ।
কীভাবে ব্যবহার করা হয় ?
বেদানার খোসা শুকিয়ে পেষ্ট করে গুড়ো তৈরি করে নিন । এই পাউডার বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে । গরম জলের সঙ্গে বেদানার খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে স্বাস্থ্যের জন্য নানাভাবে উপকার হয় ৷ এই পাউডারটি মুখের জন্য প্যাক বা মাস্ক, চুলের প্যাক এবং দাঁতের জন্য টুথপেস্ট হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে । এছাড়াও তাজা বেদানার খোসা ভালো করে ধুয়ে জলে সেদ্ধ করে চা বানিয়ে খেলে অনেক ধরনের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য উপকার পাওয়া যায় ।