বেঙ্গালুরু, 12 জুলাই: 'চা খাব না ? খাব না চা ?' কোভিড-কালে রাস্তায় বেরনো যখন নিষেধ, তখন এক চা-প্রেমী চা খাওয়া নিয়ে এমনই কাতর প্রশ্ন তুলেছিলেন । লকডাউন দুনিয়াতে তা ছড়িয়েও পড়েছিল ৷ এদিকে কোভিড-পরবর্তী এই 2024 সালে হঠাৎ চায়ের উপর খাঁড়ার ঘা নেমে এসেছে ৷ এই চা-ই নাকি নিষিদ্ধ হতে চলেছে !
চা-প্রেমীরা রাস্তাঘাটে যত্রতত্র চা খেতে পারবেন না ৷ আসলে চায়ের স্বাস্থ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে ৷ চায়ের সঙ্গে ক্যান্সারের যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছে ! ভারতের খাদ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ এফএসএসএআই চা নিয়ে যা বলেছেন, তাতে চা-প্রেমীদের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ারই কথা ৷ ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এফএসএসএআই আধিকারিকরা বিভিন্ন জায়গায় চা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাচ্ছেন, চা পাতা থেকে শুরু করে চায়ের গুঁড়োয় বিপুল পরিমাণ কীটনাশক এবং রং ব্যবহার করা হয় ৷
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চা সম্পর্কে আরও জানা গিয়েছে, বাইরে খাবারদাবার বিক্রির সময় তাতে রং মেশানো হয় ৷ এই রঙে রোডামিন-বি এবং কার্মোইসিন নামক রাসায়নিক রয়েছে, যেগুলি বিষাক্ত ৷ এগুলি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ৷
এফএসএসএআই সূত্র অনুযায়ী, চা পাতা উৎপাদনে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় । তা থেকে ক্যান্সার হতে পারে ৷ তাই কর্ণাটকের স্বাস্থ্য দফতর চা-বাগানগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে ঠিক করেছে ৷ বিপুল পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করে চা উৎপাদন হয় এই বাগানগুলিতে ৷
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এখনও পর্যন্ত উত্তর কর্ণাটকের বিভিন্ন জেলা থেকে চা পাতার 48 রকমের নমুনা সংগ্রহ করেছে ৷ এর মধ্যে বাগালকোট, বিদার, গাদাগ, ধারওয়াড়, হুবলি, বিজয়নগর, কোপ্পাল এবং বাল্লারি ৷ এক উচ্চস্তরীয় আধিকারিক জানান, ওই নমুনাগুলির মধ্যে 35 থেকে 40 রকমের রাসায়নিক পদার্থ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা হবে ৷ চায়ে যে পরিমাণ কীটনাশক থাকা উচিত, তার থেকে অনেক বেশি আছে ৷
এর আগে কর্ণাটক সরকার গোবি মানচুরিয়ান, ফুচকা এবং কেবাব বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ৷ মিডিয়া রিপোর্ট জানাচ্ছে, রাস্তায় এই ধরনের খাবারগুলি বেশি পরিমাণে বিক্রি হয় ৷ এতে কৃত্রিম রং মেশানো হয় ৷ স্বাস্থ্য দফতর এই খাবারগুলির নমুনা পরীক্ষা করে এতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক রোডামাইন-বি এবং টারট্রাজিন পেয়েছে ৷
রোডামাইন বি একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা কাপড়, কাগজ, লেদার, ছাপা এবং প্লাস্টিক রং করতে কাজে লাগে ৷ বিশেষত, লাল ও গোলাপি রং ৷ এই রং খাবারদাবারে ব্যবহারযোগ্য নয় ৷ এতে শরীরে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ এইসব বিষাক্ত পদার্থের ফলে চোখ, শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়ারও ক্ষতি হতে পারে ৷
খাবারদাবারে খুব সামান্য পরিমাণে প্রাকৃতিক ও সিন্থেটিক রং ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে থাকে এফএসএসএআই ৷ তবে সব খাবারে রং দেওয়ায় ছাড়পত্র দেওয়া হয় না ৷ আইসক্রিম, বিস্কুট, কেক, কনফেকশনারি, ফ্রুট সিরাপ, কাস্টার্ড পাউডার, জেলি ক্রিস্টাল এবং কার্বোনেটেড বা নন-কার্বোনেটেড পানীয়তে রং মেশানোর অনুমতি দেয় খাদ্য সুরক্ষা মন্ত্রক ৷ এদিকে এই চা এক উন্মাদনার নাম ৷ জীবনের যে কোনও সময়, যে কোনও ঋতুতে এমনকী দিনে-রাতে যে কোনও সময় এক কাপ চা হয়ে যাক!