বেঙ্গালুরু, 23 অগস্ট: বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্ত্রী লক্ষ লক্ষ টাকা খোরপোশ দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ৷ তাও সেই খরচ নাকি আনুমানিক ব্যয়, আসল খরচ আরও বেশি ৷ ভরণপোষণের এই দাবিতে স্ত্রীকেই বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল ৷ বিচারপতি কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে বললেন, "আপনিই এই টাকা রোজগার করে নিন ৷"
কর্ণাটকে এক নিঃসন্তান দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ পর্ব মিটে গিয়েছে ৷ ফ্যামিলি কোর্ট বা পারিবারিক আদালত ভরণপোষণের অর্থ ঠিক করে দিয়েছে ৷ তাতে অবশ্য অভাব মিটছে না বলেই দাবি করেছেন স্ত্রী ৷ সেই খোরপোশের দাবিদাওয়া সংক্রান্ত মামলার শুনানি হচ্ছিল কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারপতি ললিতা কান্নেঘান্টির বেঞ্চে ৷
স্ত্রীর দাবি
শুনানি পর্বে স্ত্রীর আইনজীবী বেঞ্চকে বলেন, "আমার মক্কেলের পুষ্টিকর খাবার দরকার ৷ এখন তাঁকে বাইরে খেতে হচ্ছে ৷ প্রতি মাসে তাঁর খাওয়াদাওয়ার খরচ 40 হাজার টাকা ৷ তাঁর স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়েছে ৷ তিনি যে শার্টটি পরেন, তার দাম 10 হাজার টাকা ৷ এদিকে স্ত্রীকে পুরনো জামাকাপড় পরতে হচ্ছে ৷ জামাকাপড়ের দাম, প্রসাধন সামগ্রী, ওষুধ কিনতে হয় ৷ আরও সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কিনতে 60 হাজার টাকা লাগবে ৷"
আদালতে ভর্ৎসনা
খোরপোশের এই দাবি শুনে বেঞ্চ পালটা প্রশ্ন করে, আবেদনকারীর মাসে 6 লক্ষ 16 হাজার 300 টাকা খরচ ? স্বামী কত উপার্জন করেন, তার উপর ভিত্তি করে স্ত্রীর ভরণপোষণ ঠিক করা যায় না ৷ তাঁর কী প্রয়োজন, সেটা দেখতে হবে ? হতেই পারে স্বামী 10 কোটি টাকা আয় করেন ৷ তাহলে কি আদালত স্ত্রীকে 5 কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেবে ? স্ত্রীর যদি নিজের জন্য এত টাকা খরচ হয়, তাহলে সেটা তিনিই রোজগার করুন ৷
এদিকে স্বামীর পক্ষের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি 63 লক্ষ টাকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন ৷ এই দাবি অবশ্য স্ত্রীর আইনজীবী অস্বীকার করেছেন ৷ তিনি জানান, এই আদালতে যে খোরপোশের অর্থের কথা বলা হয়েছে, তা প্রকৃত খরচ নয়, আনুমানিক খরচ ৷ এর প্রেক্ষিতে আদালত জানায়, আইনে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই, যাতে আনুমানিক খরচের সাপেক্ষে ভরণপোষণ দাবি করা যায় ৷
বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, "আদালত কোনও দরাদরি করার জায়গা নয় ৷ আপনার মক্কেল বুঝতে পারছেন না ৷ কিন্তু আপনি তো বুঝবেন ৷ তাঁকে বোঝান ৷ তিনি আদালতকে প্রকৃত খরচের হিসেব দিন ৷ এটাই শেষ সুযোগ ৷" স্ত্রীর দেওয়া আনুমানিক খরচের মধ্যে সন্তানদের জন্য এবং অন্য কোনও দায়িত্বের জন্য ব্যয়ের কথা বলা হয়নি ৷ 9 সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি ৷ এর মধ্যে স্ত্রীকে তাঁর প্রকৃত খরচের হিসেব আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট ৷ একই সময় আদালত সতর্ক করে দেয়, যাঁরা বিশ্বাস করেন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া এবং আইনের অপব্যবহার করা যায়, তাঁরা এই মামলার মাধ্যমে সচেতন হন ৷