নয়াদিল্লি, 4 ডিসেম্বর: ভারত-বাংলাদেশ চাপানউতোরের মধ্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে কড়া আক্রমণ শানালেন ৷ নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় তিনি দেশে বাড়তে থাকা হিন্দুদের গণগত্যা নিয়ে মহম্মদ ইউনুসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ৷ ইউনুস সরকার হিন্দু-সহ অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে ৷ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আরও দাবি করেন যে, তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই তাঁকে এবং তাঁর বোন শেখ রেহানাকে খুন করার চক্রান্ত করা হয়েছিল ৷
দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর এটাই হাসিনার প্রথম বক্তৃতা ৷ তিনি বলেন, "আজ আমার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে ৷ বাস্তবে ইউনুস সুকৌশলে গণহত্যার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ তিনিই মাস্টারমাইন্ড ৷ এই গণহত্যার নেপথ্যে রয়েছে ছাত্রদের কো-অর্ডিনেটররা এবং ইউনুস ৷"
5 অগস্ট গণঅভ্যুত্থানের দিনের কথা মনে করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সশস্ত্র বিক্ষোভকারীদের গণভবনের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ নিরাপত্তারক্ষীরা যদি গুলি চালাতে শুরু করত, তাহলে বহু মানুষের মৃত্যু হত ৷ মাত্র 25-30 মিনিটের ব্যাপার ছিল ৷ আমায় জোর করে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ৷ আমি নিরাপত্তারক্ষীদের বলেছিলাম, যাই হোক না কেন, গুলি চালাবেন না ৷"
ঢাকায় বর্তমান প্রশাসন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে ৷ এই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, "হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-কাউকে ছাড়বে না ৷ 11টি চার্চ, মন্দির, বৌদ্ধমন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে ৷ হিন্দুদের ইসকন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷"
ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েনের মাঝে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি ৷ আগামী সপ্তাহে বিদেশ সচিব স্তরের বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি ৷ বাংলাদেশ সরকারের সংবাদসংস্থা বিএসএস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বৈদেশিক উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হুসেন জানিয়েছেন, 9 অথবা 10 তারিখ ঢাকায় দুই দেশের বিদেশ সচিবের মধ্যে বৈঠক হবে ৷
5 অগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর 8 অগস্ট বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় ৷ এর মুখ্য উপদেষ্টা হন শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস ৷ এরপর এই প্রথম ভারতের কোনও উচ্চস্তরীয় আধিকারিক বাংলাদেশ সফরে যাবেন ৷ তৌহিদ হুসেন বিদেশ মন্ত্রকের কার্যালয়ে বলেন, "এটা পরিষ্কার যে, আমরা ভারতের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক গড়তে চাই ৷"
যদিও তিনি জোর দিয়ে জানিয়েছেন যে, পারস্পরিক গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে ৷ দুই দেশকেই এটা বুঝতে হবে এবং এর জন্য কাজ করতে হবে ৷ বিএসএস আরও জানিয়েছে, ভারতে বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এই বৈঠকে অংশ নেবে ৷ অন্যদিকে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব মহম্মদ জসীম উদ্দিন প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেবেন ৷ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ এবং ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে ৷ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনালে বিচার হওয়ার কথা ৷
হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই প্রতিবেশী দেশে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বন্ধের আর্জি জানিয়েছে ভারত সরকার ৷ 25 নভেম্বর বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন হিন্দু সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ৷ তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে চট্টগ্রামের একটি আদালত ৷ এই ঘটনায় ভারত বাংলাদেশের কড়া সমালোচনা করে ৷ ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ৷