শীত আসছে আর তার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে ঋতুবদলের সময় ঠান্ডা লাগা আর জ্বরের ধাত । ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে জ্বর যেমন হয়, তেমনই হয় ক্লান্তি আর গায়ে-হাতে-পায়ে ব্যথা । যত তাড়াতাড়ি আমরা এর উপসর্গগুলি চিহ্নিত করি, ততটাই দ্রুত আমরা কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ নিই এবং ওষুধ খেতে শুরু করি । কিন্তু আমরা যে সত্যটা সাধারণত সবসময় এড়িয়ে যাই, তা হল রাসায়নিক দিয়ে তৈরি সেই সব ওষুধের পার্শ্ব—প্রতিক্রিয়াও রয়েছে । সুতরাং, এই সব সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে সেরা যে ওষুধ, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বা থাকলেও খুব সামান্য, তা আসে আপনার রান্নাঘর থেকেই । অনেক ধরনের মশলা এবং খাবার রয়েছে, যা শুধুমাত্র ঠান্ডা লাগা এবং জ্বরই কমিয়ে দেয় না, বরং আপনার অনাক্রম্যতাও বাড়িয়ে দেয় । সেরকমই কিছু খাবারের নাম হল—
1. আদা
ভারতীয় রান্নাঘরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল আদা কারণ এর অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল গুণাগুণ রয়েছে । আদা শরীরের অনাক্রম্যতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং নানা ধরনের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে । যে কোনও সবজি হোক বা পানীয়, আদা মোটামুটি সব রকম পদ এবং পানীয়তেই ব্যবহার করা যায়, বিশেষ করে চা-এ । আদা কুচি কুচি করে কেটে নিন এবং জলে দিয়ে জলটা ফুটিয়ে নিন । এবার তাতে মধু যোগ করে, জলটা খেয়ে নিন । এই পানীয় সেবনে জ্বর এবং সর্দিকাশি কমে যায় । এর সঙ্গে চাইলে কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রসও যোগ করতে পারেন, এতে পানীয়টির গুণাগুণ বেড়ে যায় ।
2. তুলসী
এর ঔষধি গুণাগুণের জন্য, তুলসীকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গাছগাছড়া হিসাবে বিবেচনা করা হয় । শুধুমাত্র হোম রেমেডি হিসাবেই নয়, আয়ূর্বেদেও । তুলসী পাতাকে অ্যান্টিবায়োটিকসের সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে । ঋতু বদলের সময় হওয়া জ্বর-জ্বালার নিরাময়ে জলে এক চামচ আদাকুচি আর একমুঠো তুলসী পাতা ফেলে দিয়ে, জলটাকে ফুটিয়ে ফুটিয়ে অর্ধেক করে নিন । এই মিশ্রণে আপনি প্রয়োজন মনে করলে, মধুও দিতে পারেন স্বাদমতো । ঋতুবদলের সময় যে জ্বরজ্বালা হয়, তার নিরাময়ে এই মিশ্রণ দিনে চার থেকে পাঁচ বার সেবন করুন ।
3. রসুন
তুলসীরই মতো, এরও ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে, তাই রসুনকেও ওষুধ হিসাবেই গণ্য করা হয় । এর মধে্য যে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তা অনেক ধরনের উপসর্গ এবং রোগব্যধিকে প্রাকৃতিকভাবেই প্রশমন করে । কিন্তু যখন ঋতুবদলের সময় জ্বরজ্বালা হয়, তখন রসুনে উপস্থিত ডিয়ালাইল সালফাইড শরীরের উষ্ণতা কমিয়ে দেয় । একটি রসুন থেঁতো করে গরম জলে দিয়ে দিন । দশ মিনিট পর জলটা পান করুন ।
4. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার
অ্যাপেল সিডার ভিনিগার তথা ACV-রও ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে, যা ঋতুকালীন জ্বর-জ্বালার উপসর্গ লাঘব করতে সাহায্য করে । ACV অম্লধর্মী যা শরীরের বর্ধিত তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় । এছাড়াও এর মধে্য যে ভিটামিন এবং মিনারেলস তথা খনিজ পদার্থ থাকে, তা শরীরের উদ্যম বাড়িয়ে দেয় । ঋতুবদলের সময় হওয়া জ্বর-জ্বালা লাঘব করার জন্য এক গ্লাস জলে দুই টেবিলচামচ ACV এবং এক টেবিলচামচ মধু মেশাতে হবে । তারপর সেই জল পান করতে হবে ।
সুতরাং, ঋতু বদলের সময় হওয়া জ্বর-জ্বালা এবং ঠান্ডা লাগার সমস্যার সমাধান করতে হোম রেমেডিই হল অন্যতম সেরা উপায় । তবে, যদি অসুস্থতার লক্ষণ ক্রমশ খারাপ হতে থাকে, দ্রুত কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । বিশেষ করে এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ঋতুকালীন অসুস্থতার সঙ্গে কোভিড-১৯কে গুলিয়ে ফেলতে পারেন, কারণ প্রাথমিকভাবে দুইয়ের লক্ষণ অনেকটাই একই রকম । কিন্তু যদি আপনি মনে করেন, আপনার নভেল কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আইসালেশনে যান এবং কোনও স্বাস্থ্যকর্মী তথা বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন ।