কয়েক বছর ধরে শিশুদের যৌন হেনস্থার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে । আর এর ফলে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে । এই সব শিশুদের যৌনতার পাঠ দেওয়া, স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক স্পর্শ সম্বন্ধে অবগত করা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ঠিক যতটা এই সব বিষয়গুলি একটি নিউরো টিপিকাল শিশুকে বোঝানো ।
যৌন শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও নিউরো টিপিকাল শিশুর ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের স্ট্র্যাটেজি নেওয়া উচিত তা ETV সুখী ভব-তে ব্যাখ্যা করলেন মনোবিদ সম্রুদ্ধি পাটকর ।
চাক্ষুষ করা যায় এমনভাবে বোঝানো
শিক্ষা তখনই সহজ হয়ে ওঠে যখন তা চাক্ষুষ করা যায় । উপরন্তু বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা চাক্ষুষ করলে খুব সহজেই কোনও কিছু শিখে নিতে পারে । আর তাই এই ধরনের শিশুদের যদি যৌনশিক্ষার পাঠ দেওয়ার সময় আমাদের যৌনাঙ্গ এবং যৌনতার বিষয়ে চাক্ষুষ করানো হয় তা হলে তাদের বিষয়গুলি বুঝতে অনেকটাই সুবিধা হবে । সম্রুদ্ধি জানালেন, যৌনতার পাঠ দেওয়ার জন্য অনেকগুলি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং অ্যাপ রয়েছে ।
রোল প্লে
চাক্ষুষ বা হাতেকলমে পাঠের জন্য রোল প্লে এক অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে । এই ক্ষেত্রে শিশুর অভিভাবকরা কোনও চরিত্র বেছে নিতে পারেন এবং স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক স্পর্শ সম্বন্ধে তাকে বোঝাতে পারেন । এর ফলে শিশু খুব সহজেই স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক স্পর্শ আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারবে কারণ সে চোখের সামনে পুরো বিষয়টা দেখতে পাচ্ছে ।
চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে শিক্ষা
কোনও কিছু চিহ্নিত করা থাকলে শিশুরা খুব সহজেই সে সব মনে রাখতে পারে । বিশেষ কোনও জিনিস বা বাথরুমের দরজা বা স্যানিটারি প্যাড চিহ্নিত করা থাকলে শিশুরা খুব সহজেই সেগুলি আলাদাভাবে বুঝতে এবং মনে রাখতে পারে । তারা যখনই সেই চিহ্ন বা লেখা দেখে তখনই নিজেকে সেই সংক্রান্ত জ্ঞান বা কার্যকলাপের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে । এভাবে তারা বিষয়গুলি মনে রাখে । সম্রুদ্ধি পাটকর বললেন, “শিশুদের বাজার বা স্টোরে নিয়ে গিয়ে স্যানিটারি প্যাডের মতো বিশেষ জিনিস কেনা বা বাছাই করানো যেতে পারে । এর ফলে ওই নির্দিষ্ট জিনিসটি সম্বন্ধে শিশুর জ্ঞান অনেকটাই বেড়ে যাবে ।”
ভিডিয়ো
এই ধরনের শিশুদের কীভাবে যৌনশিক্ষার পাঠ দেওয়া যায় সেই সংক্রান্ত বহু ভিডিয়ো ইউটিউব এবং বিভিন্ন অ্যাপে রয়েছে । অভিভাবকরা এই সব ভিডিয়োর সাহায্যে সহজেই এই সব শিশুদের যৌনশিক্ষার পাঠ দিতে পারেন । চোখের সামনে দেখতে পেলে সেই শিক্ষার অনেকটাই বেশি প্রভাব থাকে এবং আগেই বলা হয়েছে যে, এই ধরনের শিশুরা দেখার মাধ্যমে সহজেই কোনও কিছু শিখে নিতে পারে ।
সামাজিক গল্প
বর্তমান সামাজিক অবস্থা সম্বন্ধে শিশুকে বোঝাতে অভিভাবকরা গল্পের আশ্রয় নিতে পারেন । সেই সব গল্পে বাস্তবে কীভাবে তারা হেনস্থার শিকার বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তার বর্ণনা থাকতে হবে । বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে অভিভাবকদেরই শিশুদের বোঝাতে হবে যে তারা আক্রান্ত হলে কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হবে । তারা কী ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা দিলে তারা সজাগ ও সতর্ক থাকতে পারবে ।
মেডিকেল টার্ম বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষার ব্যবহার
কোনও ইঙ্গিত বা সঙ্কেতের সাহায্য না নিয়ে অভিভাবকদের উচিত শরীরের বিভিন্ন অংশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা বা মেডিকেল টার্মের মাধ্যমে ডাকা । এর ফলে কোনওরকম হেনস্থার ঘটনা ঘটলে তার বিবরণ দিতে গিয়ে যেন শিশুদের সমস্যায় পড়তে হবে না ।
বড় আঙ্গিকে দেখতে গেলে, বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের সঙ্গে যারা থাকে তাদের অভিভাবক বা অন্য কেউ, তাদের প্রত্যেককে নিজেদের স্বস্তির জায়গাটা দেখে নিতে হবে । শরীরের কোনও অংশকে ব্যাখ্যা করার সময় কোনওরকম ভাবে ইতস্তত না করে, সামাজিক গোঁড়ামির কথা না ভেবে সরাসরি তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অভিহিত করতে হবে । সম্রুদ্ধি পাটকরের মতে, “অভিভাবকরা যত বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিক হবেন ততই তাঁরা যৌনশিক্ষায় শিশুকে শিক্ষিত করে তুলতে পারবেন ।”