রায়গঞ্জ, 21 এপ্রিল : কোথাও নার্সকে হেনস্থা হতে হয়েছে । কোথাও চিকিৎসককে । কোথাও আবার স্বাস্থ্যকর্মীকে । তাঁদের একটাই "অপরাধ" । তাঁরা কোরোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত । খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোরোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত কাউকে হেনস্থা করা হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে । কিন্তু তাতেও কান দিচ্ছে না মানুষ । তাই তো এবার হেনস্থার শিকার হতে হল রায়গঞ্জের নার্সিংহোমের নিরাপত্তারক্ষী বাপ্পা মণ্ডলের পরিবারকে । "অপরাধ" একই । বাপ্পা মণ্ডল যে নার্সিংহোমে কর্মরত সেটিকে কোরোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে । তাই পাড়ায় বা বাড়িতে আসতে তাঁকে নিষেধ করে প্রতিবেশীরা । যদিও পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতায় রেহাই মিলেছে বাপ্পার । তবে, এখনও আতঙ্কিত তিনি ।
রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া এলাকার একটি নার্সিংহোমকে প্রশাসনের তরফে চিহ্নিত করা হয়েছে কোরোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য । এই নার্সিংহোমেই নিরপত্তারক্ষী হিসেবে 12 এপ্রিল থেকে কাজ করছেন রায়গঞ্জের উদয়পুরের বাসিন্দা বাপ্পা মণ্ডল । গতরাতে তাঁর বাড়িতে হঠাৎই প্রতিবেশীদের একাংশ যায় । বাপ্পার স্ত্রীর কাছে খোঁজ নেয় । প্রতিবেশীদের বাপ্পার স্ত্রী জানান, ওই নার্সিংহোমে কাজ করার জন্য এখন বাড়ি ফিরছেন না তিনি । নার্সিংহোমেই থাকছেন । তারপরেও প্রতিবেশীরা জানায়, কোনওভাবেই যেন বাপ্পা বাড়ি না ফেরেন । এমনকী, কোনও টাকা যদি বাড়িতে পাঠান তাও না নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বাপ্পার স্ত্রীকে ।
এই ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাপ্পার স্ত্রী । ফোন করে বিষয়টা বাপ্পাকে জানান । তারপর সাহায্য পেতে স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাপ্পা । সমস্যার কথা পুলিশকে জানান স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা । তারপর কর্ণজোড়া পুলিশ ফাঁড়ির OC-র নেতৃত্ব এলাকায় পুলিশ যায় । স্থানীয়দের এই ধরনের কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত না থাকার জন্য আবেদন জানায় । পাশাপাশি সরকারি নির্দেশিকা মেনে কোনও ধরনের গুজব যাতে কেউ না ছড়ায় তারও অনুরোধ করা হয় ।
এই বিষয়ে বাপ্পাবাবু বলেন, "পাড়ার ছেলেরা বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার পর স্ত্রী আতঙ্কিত হয়ে আমাকে ফোন করেন । আমি দ্রুত স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলি । তাঁরা পুলিশ পাঠিয়ে বিষয়টি আপাতত মিটিয়ে দিয়েছেন । তবে, আমার স্ত্রী বা পরিবারের বাকিরা এই ঘটনায় আতঙ্কিত ।"
বাপ্পাবাবুর সহকর্মী বাপি বিশ্বাস বলেন, "বাপ্পার সঙ্গে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা একদমই কাম্য নয় । আমরা দিন-রাত মানুষের সেবা করে চলেছি । আমাদের পরিবারের উপর এই ধরনের হুমকি মোটেই কাম্য নয় ।"
এই বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, "যেসব স্বাস্থ্যকর্মী কোরোনা মোকাবিলায় কাজ করে চলেছেন তাঁদের নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । এই ধরনের ঘটনা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না । বাপ্পাবাবুর ঘটনা জানার পর আমি দ্রুত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি । তারা আমাদের সাহায্য করেছে ।"
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার সুমিত কুমার বলেন, "এই ধরনের ঘটনা একেবারেই কাম্য নয় । আমরা বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত এলাকায় পুলিশ পাঠানোয় আপাতত সমস্যা মিটেছে ।"