বারাসত, 10 মার্চ: প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি পর এবার এসএসসি-র গ্রুপ সি নিয়োগেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর তা স্পষ্ট ওএমআর শিট কারচুপি থেকেই। হাইকোর্টের নির্দেশে বৃহস্পতিবার স্কুল সার্ভিস কমিশন যে 3 হাজার 477 জনের তালিকা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে 3 হাজার 116 জন চাকরি প্রাপকের নাম রয়েছে ওএমআর শিট (OMR Sheet) বিকৃতকাণ্ডে। আর তাতেই এবার নাম জড়িয়েছে উত্তর 24 পরগনার বারাসতের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর (Former TMC Councillor) দোলন বিশ্বাসের। তাঁর নাম জড়ানোর পর এবার স্কুলের গ্রুপ 'সি'-পদের চাকরিও খোয়ালেন তিনি ৷
অভিযোগ ওএমআর শিট বিকৃত করে স্কুলের গ্রুপ 'সি'-পদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যখন তিনি এসএসসি-র গ্রুপ সি পদের চাকরি পেয়েছিলেন তখন কাউন্সিলর পদেও ছিলেন তৃণমূলের ডাকাবুকো নেত্রী দোলন বিশ্বাস। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে কার সুপারিশে চাকরি পেলেন তিনি ! নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার ? নাকি, তাঁর নিয়োগের পিছনে বড় কোনও মাথা রয়েছে ? তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলার সদর শহর বারাসতে। বিতর্কের জেরে অবশেষে তৃণমূলের এই প্রাক্তন কাউন্সিলরের চাকরি গেল হাইকোর্টের নির্দেশে ৷
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গ্রুপ সি পদের যে 842 জনের ভুয়ো চাকরি বাতিল করেছেন, সেই তালিকায় একেবারে 218 নম্বরে নাম রয়েছে প্রাক্তন এই তৃণমূল কাউন্সিলরের। এখন থেকে বাতিল চাকরি প্রার্থীদের মতো তিনিও যাতে বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না-পান তা শিক্ষা দফতরের অধিকর্তাকে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। ঘটনাটি শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছেন বিবেকানন্দ আদর্শ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার বিশ্বাস। তাঁর কথায়, "বিষয়টি শুনলাম। এই সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে শিক্ষা দফতর থেকে নিশ্চয় আমাদের কাছে কোনও নির্দেশ আসবে। তখন বিষয়টি বলতে পারব।"
আরও পড়ুন: ওএমআর শিটে কারচুপি প্রমাণিত ! চাকরি গেল 2 হাজার 820 জনের
এদিকে, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই স্কুলমুখী আর হননি প্রাক্তন কাউন্সিলর দোলন বিশ্বাস। এই বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া নিতে শুক্রবার স্কুলের পাশাপাশি চৈতন্য নগরের কুতুলশাহী রোডের বাড়িতেও যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, কোথাও তাঁর দেখা মেলেনি। ফোন করা হলেও তা ধরেননি শাসকদলের প্রাক্তন কাউন্সিলর দোলন বিশ্বাস। ফলে,তাঁর প্রতিক্রিয়া না-মিললেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন দোলনের বাবা তারক বিশ্বাস। তিনি বলেন, "বিষয়টি নিয়ে আমরা কিছুই জানি না। মেয়ে কীভাবে চাকরি পেয়েছে সেটাও বলতে পারব না।
অন্যদিকে, এই ইস্যুতে শাসকদলকে নিশানা করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। এই বিষয়ে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, "বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়া যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের কাছে। কারণ তৃণমূল সরকারটাই দুর্নীতিগ্রস্ত। ফলে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ওনার তো চাকরি যাবেই। তার সঙ্গে বেআইনি এই চাকরির সুপারিশ যিনি করেছিলেন, তাঁকেও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের আওতায় আনতে হবে। সেই দাবিই জানাব আমরা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে। আগামিদিনে এই দুর্নীতি কাণ্ডে শাসকদলের আরও অনেকের নাম সামনে আসবে ৷"