বারাসত, 3 মার্চ : তৃণমূলের দুই বিধায়ক-সহ পৌরসভার প্রশাসক করোনার টিকা নিচ্ছেন নির্বিঘ্নে ৷ অথচ যাঁরা ভোটকর্মী, তাঁদেরই ভ্যাকসিন নিতে এসে চরম হয়রানির শিকার হতে হল বারাসত জেলা হাসপাতালে ৷ মঙ্গলবার এমনই পরস্পরবিরোধী ছবি দেখা গেল সরকারি হাসপাতালে ৷ যা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ভোটকর্মী স্কুল শিক্ষকরা ৷ প্রতিবাদে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে শেষমেশ স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোটকর্মীদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় ৷ যদিও এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফাই, ‘‘পোর্টালের সমস্যাজনিত কারণেই ভোটকর্মীদের টিকা দেওয়ার কাজে সাময়িক সমস্যা তৈরি হয় ৷ কিন্তু পরে তা মিটে যায় ৷’’
নির্বাচনী কাজে নিযুক্ত ভোটকর্মীদের বুথে পাঠানোর আগেই তাঁদের করোনোর ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যাবতীয় পদক্ষেপ করতে বলেছে জেলা প্রশাসনকে ৷
এরই মধ্যে জেলার ভোটকর্মী স্কুল শিক্ষকরা নিজেদের নাম অফিশিয়াল পোর্টালে নথিভুক্ত করান ৷ কেউ কেউ আবার টিকাকরণের টোকেনও পান ৷ কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে কোনওটাই হয়নি বলে অভিযোগ ৷
গত কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় শ’তিনেক ভোটকর্মী স্কুল শিক্ষক ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আসছেন বারাসত জেলা হাসপাতালে ৷ কিন্তু তারপরও তাঁরা ঠিকঠাক টিকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ৷ হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে ৷ বারবার একই ঘটনা ঘটায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা ৷ প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান টিকাকেন্দ্রের সামনেই ৷ হাসপাতাল সুপারের কাছে গিয়েও ক্ষোভের কথা জানিয়ে আসেন তাঁরা ৷ পরে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে বিক্ষোভরত ভোটকর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হলে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।
এদিকে,ভ্যাকসিন নিতে এসে যখন ভোটকর্মীদের চরম হয়রানি পোহাতে হচ্ছে, ঠিক তখনই কোনওরকম হয়রানি ছাড়াই হাসপাতাল সুপারের ঘরে নির্বিঘ্নে টিকা নিয়ে যান বারাসত ও মধ্যমগ্রামের দুই তৃণমূল বিধায়ক-সহ স্থানীয় পৌরসভার প্রশাসক ৷ যা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ভোটকর্মীরা ৷
আরও পড়ুন: করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নিতেই মৃত্যু, কারণ নিয়ে ধন্দে ডাক্তাররা
এই প্রসঙ্গে ভোটকর্মীদের বক্তব্য়, স্কুলের ডিউটিতে না গিয়ে টিকা নিতে আসতে হচ্ছে ৷ অথচ ভোটকর্মীদের এড়িয়ে বিধায়ক, জনপ্রতিনিধিদের করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে ৷ পোর্টাল খারাপের যুক্তি দেখিয়ে বারবার ফেরানো হচ্ছে ভোটকর্মীদের ৷ অথচ টিকা না নিলে নির্বাচনের কাজে যোগ দিতেই পারবেন না তাঁরা ৷ তাই সুষ্ঠু টিকাকরণের পক্ষে সওয়াল করেন ভোটকর্মীরা ৷
এই বিষয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘টিকাকরণের সরকারি পোর্টাল খুলতে সমস্যা হচ্ছিল ৷ সেই কারণেই ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সাময়িক সমস্যা তৈরি হয় ৷ পরে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আমরা প্রত্যেক ভোটকর্মীকে ভ্যাকসিন দিয়েছি ৷’’ বিধায়ক, জনপ্রতিনিধিদের টিকা দেওয়ার প্রসঙ্গে সুপার বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধি বলে নয় ৷ তাঁদের নাম সরকারি পোর্টালে লিপিবদ্ধ ছিল বলেই তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে ৷’’