বর্ধমান, 3 ডিসেম্বর: 2017 সালে বারাসতের হৃদয়পুরে প্রেমিকের সঙ্গে যোগসাজস করে স্বামীকে খুন করেছিল মনুয়া মজুমদার । সেই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল ৷ খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল মনুয়া ৷ তবে সেই খুনের ঘটনা আজ অতীত, রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছে এই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৷ বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই বর্তমানে ঠাঁই হয়েছে 32 বছরের মনুয়ার ৷ চার দেওয়ালের মাঝে নৃত্যের তালে নিজের অতীতকে ভুলতে চাইছে সে ।
রবীন্দ্র ও আধুনিক নৃত্যের পাশাপাশি লেখালেখি কিংবা সংশোধনাগারের কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মানেই আজ মনুয়া মজুমদার । তার নেতৃত্বেই চলে অনুষ্ঠানের মহড়া । 'ক্ষমা করো নাথ, ক্ষমা করো, এ পাপের যে অভিসম্পাত হোক বিধাতার হাতে নিদারুণতার', 'আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে' কিংবা 'আলোকের এই ঝরণা ধারায় ধুইয়ে দাও'-এর গানের তালে মনুয়ার পরিবেশনকে উপভোগ করে দর্শকও । মনুয়ার এই প্রতিভায় খুশি তার নাচের প্রশিক্ষক থেকে জেল কর্তৃপক্ষ সকলেই ।
সংশোধনাগারের নৃত্য প্রশিক্ষক মেহবুব হাসান জানান, মনুয়া মজুমদার বছর দেড়েক আগে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধাগারে আসে । মনুয়া অন্যান্যদের চেয়ে বেশ ভালো নৃত্যশিল্পী । ছোট থেকেই সে নাচের মধ্যে আছে । এখানে ক্লাসিকাল নাচের তো বিশেষ চর্চা হয় না। মূলত রবীন্দ্রনৃত্য, আধুনিক গানের উপর নৃত্য, ফোক ড্যান্স করানো হয় এখানে । সেগুলো মনুয়া খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করে নেয় । অন্যদের সঙ্গে তার তফাত হচ্ছে অন্যান্যদের মতো তাকে শেখাতে বিশেষ পরিশ্রম করতে হয় না ।
তিনি বলেন,"আমার তো মনে হয় সে যখন সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরবে তখন নৃত্য নিয়ে নিজের কেরিয়ার গড়ার কথা ভাবতে পারে । রবীন্দ্র নৃত্যের প্রতি তার খুব আগ্রহ । আমরা 'শ্যামা' নৃত্যনাট্য নিয়ে আপাতত রিহের্সাল করছি । শ্যামার চরিত্রে মনুয়াই আছে । এর আগে 'চন্ডালিকা' ও 'চিত্রাঙ্গদা'তে সফলভাবে নৃত্য পরিবেশন করেছে মনুয়া ।"
ডি আইজি বহরমপুর নবীনকুমার সাহা বলেন, "মানুষের মনের পরিবর্তন আনার জন্য জেল কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট আছে । আমরা বিশ্বাস করি প্রত্যেক মানুষের একটা স্বাভাবিক সততা আছে । মানুষ বিভিন্নরকম পরিস্থিতিতে অপরাধ করে ফেলে । কিন্তু তার মানেই যে তার জীবন শেষ হয়ে গেল সেটা আমরা মনে করি না । সেই প্রতিভাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা আবাসিকদের নাচ গান-সহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভোকেশনাল ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । সংশোধনাগারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উৎসব, মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবাসিকরা অংশ নেয় । মনুয়ার মতো যারা এখানে আছেন তাদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য ।"
প্রসঙ্গত, 2017 সালের মে মাসে বারাসতের হৃদয়পুরের নিজের বাড়িতে খুন হন অনুপম সিংহ । সেই ঘটনায় 2019 সালের 26 জুলাই অনুপমের স্ত্রী মনুয়া মজুমদার ও তার প্রেমিক অজিত রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় বারাসত আদালত ।
আরও পড়ুন: