পুরুলিয়া, ২০ জুলাই : শোলে সিনেমার দৃশ্যটা মনে আছে নিশ্চয়ই ! বড় জলের ট্যাঙ্কের উপর চেপে বীরু (ধর্মেন্দ্র) বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল বাসন্তীকে (হেমামালিনী) ৷ কয়েক মাস আগের ঘটনা ৷ মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জেলার পৈঠান তহসিলের বাসিন্দারাও জলের দাবিতে এভাবে জলের ট্যাঙ্কারে উঠে আত্মহত্যার হুমকি দেয় ৷ না, পুরুলিয়ার ঝালদা শহরে অবশ্য তেমন কিছু ঘটেনি ৷ ভগ্নপ্রায় জলের ট্যাঙ্ক থেকে মাঝেমধ্যেই খসে পড়ছে চাঙড় ৷ নড়বড়ে জলের ট্যাঙ্কে ওঠে কার সাধ্যি ! তাই বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অর্ধেক ভরতি করা হয় এই ট্যাঙ্কটি ৷ সারা শহরে এক বালতি জলের জন্য চলছে হাহাকার ৷
বর্ষার সময়েও পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে গোটা ঝালদা শহর জুড়ে । পৌরসভা এলাকায় রয়েছে একটি মাত্র জলের ট্যাঙ্ক। ওই ট্যাঙ্কের অবস্থাও বর্তমানে জরাজীর্ণ । যেকোনও সময় ওই জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে। তাই ওই ট্যাঙ্ক জলপূর্ণও হয় না । ফলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে দিনে একবার মাত্র আধ ঘন্টা জল সরবরাহ হয় । ঝালদা শহরে মোট 12 টি ওয়ার্ডের মধ্যে আবার কোনও কোনও ওয়ার্ডে জল সরবরাহ দীর্ঘদিন ধরে একেবারেই বন্ধ রয়েছে । শুধু তাই নয়, ঝালদা শহরের শেষপ্রান্তে থাকা বস্তিগুলিতে পাইপ লাইনের ব্যবস্থাও এখনও হয়নি । ফলে যে সমস্ত এলাকাগুলিতে জল সরবরাহ হয় সেই এলাকার জলের জন্য প্রতিদিন দীর্ঘ লাইন লেগে যায় । পাম্পে জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে তর্ক-বিতর্কও বাধে সাধারণ মানুষের মধ্যে । ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে মেলে মাত্র দুএক হাঁড়ি ভরতি জল । সময় ধরে আধ ঘণ্টা জল সরবরাহ হওয়ায় কেউ কেউ আবার জল না নিয়েই ফিরে যায় । এমনকি অনেকেই দু-এক কিমি দূরে থাকা পঞ্চায়েত এলাকা থেকেও পানীয় জল বয়ে নিয়ে আসছে । হামেশাই জল কিনে খেতে হয় ঝালদা পৌরবাসীকে। এমনকি বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান থাকলেও জল কিনে নিয়ে আসতে হয় । আর তাই ক্ষোভ জমেছে শহরবাসীর মনে । পাশাপাশি ঝালদা পৌরসভার লোকালয়ে থাকা ওই একটি মাত্র জলের ট্যাঙ্কের অবস্থা এতটাই বিপজ্জনক যে কোনও সময় ভেঙে পড়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে। ঝালদা পৌরবাসীর দাবি, ট্যাঙ্কের মেরামতি করা হোক এবং পৌরসভা এলাকায় বাড়তি আরও জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণ করে শহরে জলের সংকট মেটানো হোক। ঝালদা শহরের জল সংকটের কথা মেনেও নিয়েছেন পৌরসভার প্রশাসক প্রদীপ কান্দু । দীর্ঘদিনের এই জল সমস্যা সমাধানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান ।
ঝালদা শহরের বাসিন্দা বাবলু রাজোয়াড়, সাগর নাথরা বলেন, " জলের পাম্পগুলো একেবারেই অকেজো হয়ে রয়েছে। দিনে মাত্র আধ ঘণ্টা করে যে সমস্ত ওয়ার্ডে এলাকাগুলিতে জল সরবরাহ হয় সেই ওয়ার্ডে থেকে জল বয়ে নিয়ে আসতে হয় । তার জন্য সকাল থেকে দীর্ঘ লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কোনও দিন আবার জলের লাইন দিয়েও জল মেলে না । তাই পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জল বয়ে নিয়ে আসতে হয় । কোনও কোনও দিন জল কিনেও খেতে হয়। "রানী সিং, বন্দনা দে, প্রদীপ কর্মকাররাও একই সুরে নিজেদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন । তাঁরা বলেন, " দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আর তা ছাড়া কোনও কোনও ওয়ার্ডে জল সরবরাহ হয় মাত্র আধ ঘণ্টা, কোনও ওয়ার্ডে আবার দিনে দুই বার আধ ঘণ্টা করে জল সরবরাহ হয় । জলের জন্য প্রায়শই ঝগড়াও বাধে পাড়ায় পাড়ায় । বাধ্য হয়ে জল কিনে খেতে হয় নতুবা আশপাশের এলাকায় নলকূপ থেকে জল নিতে হয় । সেই নলকূপের জল আবার খাওয়ার অযোগ্য। তাই জল গরম করে, ছেঁকে নিয়ে খেতে হয়। বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান হলে জল কিনে আনতে হয় ।"ঝালদা শহরের তীব্র জল সংকটের কথা মেনে নিয়েছেন ঝালদা পৌরসভার প্রশাসক প্রদীপ কর্মকার। তিনি বলেন, "ঝালদা রয়েছে 12 টি ওয়ার্ড । শহরে দিন দিন বাড়ছে লোকজনের সংখ্যা । অথচ ঝালদা শহরে রয়েছে একটি মাত্র জলের ট্যাঙ্কা । সেটিও একেবারেই জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। ট্যাঙ্ক থেকে খসে পড়েছে বড় বড় চাঙড় । যেকোনও সময় তা ধসে গিয়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে। তাই ট্যাঙ্কের অবস্থা ভালো না থাকায় জলপূর্ণ করা যায় না, অর্ধেক ভরতি রাখতে হয় ট্যাঙ্কটি । সেই অর্ধেক ট্যাঙ্ক জলেই সরবারহ হয় শহর জুড়ে । তাই কোন ওয়ার্ডে জল পৌঁছায় আবার কোন ওয়ার্ডে জল সরবরাহ হয় না । ট্যাঙ্কের বেহাল অবস্থার জন্য শহরের প্রান্তিক এলাকাগুলিতে পাইপ লাইন বসানোর কাজও করে উঠতে পারিনি। নতুন জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণ না হওয়ায় আপাতত জলের হাউস কানেকশন দেওয়া সম্ভব হয়নি ।"
তিনি আরও বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে PHE দপ্তরে জলের ট্যাঙ্কটি মেরামতি করা এবং আরও একটি নতুন ট্যাঙ্ক নির্মাণ করার আবেদন জানানো হয়েছে । লকডাউনের আগে PHE দপ্তরের আধিকারিকেরা এসে ট্যাঙ্কের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। কয়েকদিন আগে সেটি বাঁশের বেড়া দিয়েও ঘিরে ফেলা হয়েছে। সেটি শীঘ্রই মেরামত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। এই ট্যাঙ্কটি মেরামতি হলেই অন্তত প্রতিটি ওয়ার্ডে দু'বেলা আধ ঘণ্টা করে জল সরবরাহ করা সম্ভব হবে।" তিনি বলেন, "পার্শ্ববর্তী সুবর্ণরেখা নদীতে জল প্রকল্পের কাজ শুরু হল সেই নদী থেকে ঝালদা শহরে জল সরবরাহ করা হবে। তাহলে ঝালদা শহরে জলের সমস্যা একেবারেই মিটে যাবে । সুবর্ণরেখা নদীর জল ছাড়া ঝালদা শহরের জল সমস্যা একেবারেই দূর করা সম্ভব হবে না । এ বিষয়েও শীর্ষ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন রেখেছি ।"