পুরুলিয়া, 9 এপ্রিল: রেশন কার্ড বন্ধক থাকায় অনেক দিন ধরেই রাজ্য সরকারের নিঃশুল্ক রেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন পুরুলিয়ার ঝালদার সরজুমাতু গ্রামের বেশ কয়েকটি দুস্থ পরিবার । লকডাউনের এই মুহূর্তে সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের রেশনও পাচ্ছিলেন না তাঁরা । অনাহারেই দিন কাটছিল ওই দুস্থ পরিবারগুলির । খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন । স্থানীয় BDO পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে গিয়ে সুদ কারবারিদের কাছ থেকে রেশনকার্ডগুলি উদ্ধার করে উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেন ।
জানা গেছে, সরজুমাতু গ্রামে বেশ কয়েকটি দুস্থ, দিন আনা দিন খাওয়া কালিন্দী পরিবারের বাস । তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার কাজের তাগিদে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন । যাওয়ার সময় রেশন কার্ডগুলি গ্রামের সুদ কারবারিদের কাছে কিছু টাকার বিনিময়ে বন্ধক দিয়ে দেন । আবার কেউ মেয়ের বিয়ের জন্য, কেউ আবার অসুস্থ হলে কিছু টাকার প্রয়োজনে রেশন কার্ডগুলি বন্ধক দিয়ে দেন সুদ কারবারিদের কাছে । সেই ঋণ শোধ করতে না পারায় কার্ডও ফেরত পান না তাঁরা । ফলে তাঁদের সেই কার্ড দিয়েই গ্রামের ওই মহাজনরা বছর বছর ধরে রেশন তুলতেন । এদিকে বর্তমানে লকডাউনের প্রভাবে বন্ধ কাজ । তাই বিভিন্ন রাজ্যে কাজের জন্য যাওয়া ব্যক্তিরা ফিরে এসেছেন বাড়িতে । বর্তমানে একই কারণে জেলাতেও কাজ পাচ্ছেন না তাঁরা । অভাবই নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল । কোনওরকমে আধপেটা খেয়েই দিন যাপন করছিল ওই পরিবারগুলি । রেশন কার্ড না থাকায় বর্তমানে রাজ্য সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের রেশন সামগ্রী থেকেও বঞ্চিত হচ্ছিলেন । এই বিষয়ে প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানায় ওইসব দুস্থ পরিবারগুলি । এরপরেই মহাজনদের থেকে কার্ডগুলি ফেরত নিয়ে তাদের দেওয়ার ব্যবস্থা করেন BDO ।
ইন্দ্রা কালিন্দী, রাধা কালিন্দী, নিতাই কালিন্দীরা জানান, "মেয়ের বিয়ের জন্য, চিকিৎসার জন্য, অভাবের কারণে রেশন কার্ডগুলো 10 হাজার, 7 হাজার, 18 হাজার টাকার বিনিময়ে গ্রামের সুদ কারবারিদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম । তারপর আর টাকা শোধ দিতে পারিনি । মহাজনরাই আমাদের সমস্ত রেশন সামগ্রী তুলে নিতেন । এখন লকডাউনে আমাদের সমস্ত কাজও বন্ধ । খুবই অভাব দেখা দিয়েছে । এখন সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের রেশনও তুলতে পারছিলাম না কার্ড না থাকার কারণে । তাই BDO-র কাছে আবেদন করি, এই বিষয়টিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ।"
রেশন ডিলার অমরেশ মাহাত জানান, "যাঁরা রেশন কার্ড নিয়ে আসেন তাঁদের হাতেই রেশন সামগ্রী তুলে দেওয়া হয় । তাছাড়া কালিন্দী পরিবারগুলিও বলে গিয়েছিল ওই সুদ কারবারিদের হাতে রেশন তুলে দেওয়ার জন্য ।" এই বিষয়ে জেলা শাসক রাহুল মজুমদার জানান, "এই বিষয়ে আমাদের কাছে খবর আসতেই BDO-কে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় । BDO গ্রামে গিয়ে সুদ কারবারিদের কাছ থেকে রেশন কার্ডগুলি সংগ্রহ করেন । এরপর সেগুলি উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় । একইসঙ্গে দু'পক্ষকেই মুচলেকা দিয়ে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে ভবিষ্যতে এই ধরনের আইন বহির্ভূত কাজ করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে । "