নয়াদিল্লি, 25 ডিসেম্বর: আজ বড়দিন ৷ তবে এছাড়াও 25 ডিসেম্বর ভারতবাসীর কাছে একটি বিশেষ দিন । কারণ এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ৷ আজ তাঁর 100তম জন্মবার্ষিকী ৷
ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তাঁকে একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের উত্তরণের স্থপতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, "ওই বিজেপি নেতা দৃঢ় সংস্কারের সূচনা করেছিলেন ৷ তিনি ভারতের অর্থনৈতিক উত্থানের মঞ্চ তৈরি করেছিলেন ।"
বাজপেয়ীর 100তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তাতে তিনি লিখেছেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁর দীর্ঘ সংসদীয় মেয়াদে বেশিরভাগটাই মূলত বিরোধী বেঞ্চে কাটিয়েছেন ৷ কিন্তু কখনও বিরোধীদের প্রতি তিক্ততার চিহ্নও বহন করেননি ৷ যদিও কংগ্রেস তাঁর শেষ সীমা পর্যন্ত নীচে নেমে গিয়ে বাজপেয়ীকে 'দেশদ্রোহী' বলে অভিহিত করেছেন বলে লিখেছেন নমো ।
মোদি বলেন, "অটল বিহারী বাজপেয়ী একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে শিড়দাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ তিনি এখনও অগণিত মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন ।" প্রধানমন্ত্রীর কথায়, "বাজপেয়ী এমন একটি সময়ে স্থিতিশীল এবং কার্যকর শাসন ব্যবস্থা প্রদান করেছিলেন, যখন নব্বই দশকের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জনগণ অধৈর্য এবং সরকারের ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছিল ৷ কারণ তখন প্রায় নয় বছরে চারটি লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ।"
তিনি আরও বলেন, "সাদামাটা শিকড় থেকে আসা বাজপেয়ী সাধারণ নাগরিকের সংগ্রাম এবং কার্যকর শাসনের রূপান্তরকারী শক্তি উপলব্ধি করেছিলেন ৷ তাঁর নেতৃত্বের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান । তাঁর যুগ তথ্য প্রযুক্তি, টেলিকম এবং যোগাযোগের জগতে একটি বিশাল পরিবর্তন চিহ্নিত করেছে ।"
মোদি বলেন, "অটলজির অধীনে এনডিএ সরকার নাগরিকদের কাছে প্রযুক্তি সহজগম্য করার জন্য প্রথম গুরুতর প্রচেষ্টা করেছিল । একই সময়ে, ভারতকে সংযুক্ত করার জন্য তাঁর দূরদর্শিতা ছিল । আজও, বেশিরভাগ মানুষ সুবর্ণ চতুর্ভুজ প্রকল্পের (Golden Quadrilateral Project) কথা স্মরণ করে, যা ভারতের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থকে সংযুক্ত করেছিল ৷"
তাঁর কথায়, "অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা এবং দিল্লি মেট্রোর জন্য ব্যাপক কাজ করেছেন ৷ বাজপেয়ী সরকার শুধু অর্থনৈতিক বৃদ্ধিই বাড়ায়নি, বরং দূরবর্তী অঞ্চলগুলোকে কাছাকাছি এনেছে, ঐক্য ও সংহতিকে উৎসাহিত করেছে ।"
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর বলেন, "সর্বশিক্ষা অভিযানের মতো একটি উদ্যোগ তুলে ধরে বাজপেয়ী এমন একটি ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে আধুনিক শিক্ষা সারা দেশের মানুষের কাছে, বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের কাছে সহজলভ্য । তাঁর সরকারের পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত এবং তার পরের পরিস্থিতি মোকাবিলা তাঁর নেতৃত্বের একটি চমৎকার উদাহরণ ।"
তিনি বলেন, "ভারতে পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ব হতবাক হয়ে গিয়েছিল এবং কোনও কারণ ছাড়াই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল । অন্য যে কোনও সাধারণ নেতা থাকলে ওই জায়গায় ঘাবড়ে যেতেন, নড়েচড়ে বসতেন, কিন্তু অটলজি অন্য ধাতু দিয়ে তৈরি ছিলেন । তার ফল কী হয়েছিল? ভারত দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিল ৷ সরকারের দুই দিন পরে 13 মে আরও একটি পারমাণবিক সেটের পরীক্ষা করে ।"
মোদি প্রবন্ধে লেখেন, বাজপেয়ী ভারতীয় গণতন্ত্র বুঝতেন এবং এটিকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনও বুঝতেন । তিনি এনডিএ গঠনের সভাপতিত্ব করেছিলেন, যা ভারতীয় রাজনীতিতে জোটকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিল এবং উন্নয়ন, জাতীয় অগ্রগতি এবং আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য একটি শক্তিতে পরিণত হয়েছিল ।
তাঁর সংযোজন, "বাজপেয়ীর রাজনৈতিক যাত্রা জুড়ে তাঁর সংসদীয় উজ্জ্বলতা দেখা গিয়েছে । তিনি এমন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যার কয়েকজন সাংসদ ছিল ৷ কিন্তু তাঁর কথাগুলি সেই সময় সর্বশক্তিমান কংগ্রেস পার্টির শক্তিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল । প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বিরোধীদের সমালোচনাকে স্টাইল ও সারবস্তু দিয়ে ভোঁতা করেছেন ৷"
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর লিখেছেন, "বাজপেয়ী সুবিধাবাদী উপায়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার মানুষ ছিলেন না । তিনি চতুরতার সঙ্গে কেনাবেচা এবং নোংরা রাজনীতির পথ অনুসরণ না করে 1996 সালে পদত্যাগ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিলেন ৷ 1999 সালে বাজপেয়ী সরকার এক ভোটের জন্য হেরে গিয়েছিল । তবে পরবর্তীতে তিনি জনগণের কাছ থেকে আরও শক্তিশালী ভেটের ব্যবধান নিয়ে ফিরে আসেন ।"