দিঘা, ২০ অগাস্ট: গত আট বছরে রাজ্য সরকারের একাধিক পরিকল্পনায় দিঘা সেজে উঠেছে ৷ পর্যটকদের কাছে দিঘা এখন ভালোলাগার সহজ গন্তব্য । সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "দিঘায় লোকে অনেক সময় জায়গা পান না । আগে সবাই শনি-রবিবার দিঘা আসত । এখন রোজ ব্যস্ত দিন । এত মানুষ কোথায় যাবে? কাশ্মীরে কেউ যেতে পারছে না । কাশ্মীরে পর্যটকদের যাওয়া নিষিদ্ধ । আরও অনেক জায়গা আছে ঘোরার । তাঁরা সে জায়গাটা ঘুরে এসেছে । আবার অনেক জায়গা আছে ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা যেতে পারে না । দিঘা ঘরের কাছে সহজ গন্তব্য । এটা কিন্তু মনে রাখবেন । কলকাতা থেকে মাত্র তিন-সাড়ে তিন ঘন্টার পথ । রাস্তাটা চওড়া হচ্ছে । ট্রেনেও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে । হ্যালিকপ্টারেরও ব্যবস্থা হয়েছে ।"
গতবার জেলা সফরে এসে দিঘার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে গিয়েছিলেন, পুরীর আদলে গড়ে তোলা হবে দিঘার ছোট্ট জগন্নাথ মন্দিরটি । আজ সেই ঘোষণাতেই সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী । প্রকাশ করলেন মন্দিরের নকশা । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আপনারা যাঁরা 8-10 বছর আগে দিঘায় এসে কী দেখতেন ? কেউ তাকিয়ে দেখেনি । কিন্তু আমরা উন্নয়নের কাজ শুরু করেছি । আগামী দিনে জেনে রাখবেন এখানে 7 কিলোমিটার মেরিনা বিচ তৈরি হচ্ছে । দুটো ব্রিজ বাকি আছে । সাত মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে ।"
আগামী দিনে দিঘাকে আরও নতুন নতুন পরিকল্পনায় আরও পর্যটনমুখী করে তোলার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী । বলেন, "পরিবহন সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি । আমি চাই দিঘার বিচে সি-প্লেন নামুক । সি প্লেন নামলে দিঘা পর্যটনের আরও একটা বড় জায়গা হয়ে যাবে । সি প্লেন নামা মানে অনেক মানুষ এখানে আসতে পারবেন । এটা একটা ইউনিক আইডিয়া । এখানে অনেক গাড়ি আসে । সেগুলিকে রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মানের দুটি পার্কিং প্লাজাও তৈরি হবে।”
দিঘার কনভেনশন সেন্টারে শিল্পগোষ্ঠীগুলিকে আসার আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী । বলেন , "দিঘাশ্রীতে তো 63টা ঘর রয়েছে । সেমিনার বা সম্মেলনের জন্য প্যাকেজ পাওয়া যাবে । এই কনভেনশন সেন্টার বুক করলে সমুদ্র ফ্রি । সমুদ্র ফ্রি মানে নিঃশ্বাস ফ্রি । নিঃশ্বাস ফ্রি মানে পরিবেশ ফ্রি । আর পরিবেশ ফ্রি মানেই স্বাস্থ্যশ্রী । তাই সকলে আসুন দিঘাশ্রীতে ৷ ”
আজও কেন্দ্রকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী । কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালাচনা করে তিনি বলেন , " যাঁরা কেন্দ্রে জিতে এসেছে আমি চাই তারা তাদের মতো করে কাজ করুক, রাজ্যে যারা আছে তারা তাদের মতো কাজ করুক । যারা মনে করে, কোনও কাজ করব না, কিছু করব না, সারক্ষণ ফেট্টি বেঁধে, দুটো ডান্ডা আর ঝান্ডা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়বে, তাদের আমি বলি, আগুন নিয়ে খেলবেন না । মনে রাখবেন আপনি কেন্দ্রে রয়েছেন, আমি রাজ্যে রয়েছি । এসব করতে গেলে সকলেরই কিন্তু মুখ পুড়বে । "
দিঘার মানুষের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ কোনও পর্যটক যেন বিরক্ত না হন । লক্ষ্মীকে হাতছাড়া করবেন না । এই করে করে দার্জিলিংটা নষ্ট হয়েছে । আমি দার্জিলিং নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম । আমি দার্জিলিং নিয়ে অনেক ভাবতে চেয়েছিলাম । কিন্তু প্রতি 10 বছর ছাড়া ছাড়া যদি জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও হয়, তাহলে তা ভালো হয় না । আমি দিঘায় এখনও বলব, পর্যটক আসলে আপনার ঘরের ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থান বাড়বে । পর্যটক আসলে আপনার রোজগার, ব্যবসা বাড়বে,বিনিয়োগ বাড়বে । ঘটিভাজা বিক্রি করুন দেখবেন কত ইনকাম । একটা ভেজিটেবল চপের দোকান করুন, মোমোর দোকান করুন, দেখবেন কত রোজগার হচ্ছে।”
এদিকে তাজপুর বন্দরের কাজের জন্য রাজ্য যে আর কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকবে না তা-ও আজ স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী । বলেন," আমাদের আরেকটা বন্দর হবে । আমি চেয়েছিলাম সুন্দরবনে ভোরসাগর বন্দর হোক, আর তাজপুরে বন্দর হোক । সবকিছু ঠিক হয়ে গেছিল । তাও শেষ পর্যন্ত হয়নি৷"