বর্ধমান, 8 নভেম্বর: ব়্যাগিংয়ের ঘটনা ফের শিরোনামে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ৷ হস্টেলের আবাসিক এক ছাত্রীকে ব়্যাগিংয়ের এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেস কমিটির কয়েকজন সদস্য ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতার নাম জড়িয়েছে । ওই ছাত্রীর অভিযোগ, তাকে হস্টেল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে । এমনকি সে যাতে হস্টেলে খাবার না পায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে । বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি । যদিও মেস কমিটির ছাত্রীদের দাবি কোনও র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি । ওই ছাত্রী 6 বছর ধরে হস্টেলে ঘর দখল করে রয়েছেন ৷
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রীর বাড়ি বাঁকুড়ায় । তিনি প্রথমে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেছেন । পরে ফের উওমেন স্টাডিজে স্নাতকোত্তর করার জন্য ভর্তি হন । ছাত্রীর দাবি, তিনি তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত নিয়মিত ক্লাস করেছেন । চতুর্থ সেমিস্টারে ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য নিয়মিত ক্লাস করতে পারেননি । পরীক্ষাও দিতে পারেননি । কিন্তু গন্ডগোল বাধে হস্টেলে থাকা নিয়ে ।
অভিযোগকারী ছাত্রী বলেন, "আমি এম এড দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী । কিন্তু আমাই হস্টেলে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না । হস্টেলের যে মেস কমিটি আছে তারাই অত্যাচার করছে । বলা হচ্ছে হস্টেলে থাকতে গেলে সংসদের অনুমতি নিতে হবে । অথচ আমাকে হস্টেলে থাকার অনুমতি তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেবে । মেস কমিটির কয়েকজন ছাত্রী আছে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে হুমকি দিচ্ছে । একদিন খাবার টেবিলে আমাকে হুমকি দিয়ে অপমান করে বলা হয়েছে হস্টেল না ছাড়লে আমার জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হবে । দিন দু'য়েক আগে খাবার জন্য মিল চার্জ দিতে গেলেও তা নেওয়া হয়নি । এদিকে মিল চার্জ না দিলে আমি খাবার পাব না । এদিকে আমার হস্টেলে থাকার অধিকার আছে । তা সত্ত্বেও হস্টেল ছাড়ার জন্য আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে । আমি আতঙ্কে আছি । আমাকে বাড়ি চলে যেতে হচ্ছে কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে ।"
এই বিষয়ে মেস কমিটির সদস্য ছাত্রী অদিতি গুপ্ত বলেন, "বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকার নিয়ম অনুসারে কেউ যদি 2022 সালে হস্টেল পায় তাহলে সে তার শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী 2022-24 সাল পর্যন্ত থাকতে পারবে । অর্থাৎ, রেগুলার ছাত্রছাত্রীরাই হস্টেলে থাকতে পারবে । ওই দিদিকে বললাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার জন্য তার কাছে কী কাগজপত্র আছে সেটা দেখানোর জন্য । কিন্তু সে দেখাতে চায়নি । এরপর দুর্গাপুজোর ছুটি পড়ে যায় । ছুটির পর জুনিয়র স্টুডেন্টরা আসা শুরু করে । ফলে আগের রুম খালি করতে হয় । ওই দিদিকে ঘর ছাড়তে বলায় আমাদের হুমকি দিয়ে বলে, ক্ষমতা থাকলে হস্টেল থেকে বের করে দেখা । আমরা হস্টেলে এক বছর এসেছি । আর ওই দিদি হস্টেলে ছয় বছর আছে । তাহলে আমার কী ক্ষমতা আছে এক বছর হস্টেলে থেকে কাউকে হুমকি দেব কিংবা শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করব । আমরা অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিকে মেইল করে বিষয়টি জানিয়েছি ।"
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির কনভেনার পার্থ মিত্র বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির পক্ষে তিন সদস্য বিষয়টি খতিয়ে দেখছে । অভিযোগের তথ্য প্রমাণ আমরা পাইনি । সেটা ঠিক বা ভুল হতে পারে । দুই পক্ষের অভিযোগ শুনেছি । ছাত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি । যা অভিযোগ করেছে সেটা শুনেছি । আবার যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি । তাদের দাবি এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি । সমস্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে ।"