আসানসোল, 31 জানুয়ারি: মহাকুম্ভে পুণ্যস্নান করতে গিয়েছিলেন জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামের বাসিন্দা বিনোদ রুইদাস ৷ তবে ফিরল নিথর দেহ ৷ তাঁর সঙ্গে পুণ্যস্নানে যাওয়া তাঁর শ্যালকের দাবি, বুধবার ভোরে পদপিষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে বিনোদ রুইদাসের (47)। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, উত্তরপ্রদেশ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে মৃতদেহ এই রাজ্যে এল কোনও নথি ছাড়াই । মৃতদেহের সঙ্গে ছিল না মৃত্যুর কোনও শংসাপত্র, ছিল না ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ।
শুধুমাত্র হাসপাতালের একটি মেমো নম্বর দেওয়া কাগজ ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এক কনস্টেবলকে দিয়ে মৃতদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ । এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় । জামুড়িয়া থানার কেন্দা ফাঁড়িতে মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মৃতের পরিবার ও এলাকাবাসীরা । ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ক্ষতিপূরণ ও সঠিক তদন্তের দাবি করেছেন ।
মৃতের স্ত্রী শর্মিলা রুইদাস জানান, "গত সোমবার আমার স্বামী কুম্ভমেলার উদ্দেশে রওনা দেন । মঙ্গলবার রাতেও আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয় । আমার ভাই ছিল ওর সঙ্গে । বুধবার ভোরে তারা পুণ্যস্নানে যায় । তারপর থেকে আমার স্বামী নিখোঁজ । গতকাল আমার ভাই হাসপাতালে মৃতদেহ খুঁজে পায় । কিন্তু কোনও নথি ছাড়াই মৃতদেহটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় । আমার তিন সন্তান । বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর ও শাশুড়ি । আমার স্বামী একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন । কী করে চলবে আমাদের আগামী দিন । তাই সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়ে আমার পাশে দাঁড়াক ।"
অন্যদিকে, প্রত্যক্ষদর্শী তথা মৃতের শ্যালক বিষ্ণু রুইদাস জানান, "বুধবার ভোরে আমি আর আমার জামাইবাবু কুম্ভস্নান করতে যাই । সেখানে কোনও সুব্যস্থাই ছিল না । হুড়োহুড়িতে আমার জামাইবাবু পড়ে যায় । তারপর জামাইবাবুর কোনও খোঁজ পাইনি । বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ পাই জামাইবাবু মারা গিয়েছে । সেখান থেকে একটি পুলিশ কনস্টেবল দিয়ে আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । কোনও কাগজপত্র আমাকে দেওয়া হয়নি । এত চূড়ান্ত অব্যবস্থা আমি কখনও দেখিনি ।"
কিন্তু কাগজপত্র ছাড়াই একটি মৃতদেহ তিনটি রাজ্য পার করে এল কী করে এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ উত্তরপ্রদেশের যে পুলিশ কনস্টেবল মৃতদেহটি নিয়ে আসেন, সেই বদরুদ্দীন খান ইটিভি ভারতকে জানান, "আমি উচ্চ অধিকারিকের আদেশ পালন করেছি মাত্র । তিনটি রাজ্য কেন, আমাকে ভারতের যেখানে খুশি মৃতদেহ নিয়ে যেতে বলতে সেখানেই চলে যেতাম ৷ কাগজপত্র ছিল না কেন, সে বিষয়ে আমি বলতে পারব না । কোথায় মৃত্যু হয়েছে আমি সে বিষয়েও কিছু জানি না । আমি প্রয়াগের হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ নিয়ে এসেছি ।"
এই ঘটনার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও চলে আসেন জামুড়িয়ার কেন্দা ফাঁড়িতে । তাঁরা এই ঘটনার বিচার চাইছেন এবং যথার্থ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন । পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন চক্রবর্তী জানান, "ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ সরকার । তাই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে । অযথা প্রচার তুলে কুম্ভমেলাকে নিয়ে একটা হাইপ দেওয়া হয়েছে । আসলে ব্যবস্থা কিছুই নেই । বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে । যা ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে । আমরা আশ্চর্য, একটা মৃতদেহ চলে এল ডেথ সার্টিফিকেট বা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়াই । কীভাবে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায় সে বিষয়ে আমাদের সরকার উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলবে । তবে আমরা পরিবারটির পাশে আছি ।"
অন্যদিকে জামুড়িয়ার প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএম নেত্রী জাহানারা খান জানান, "অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনা । আমরা পরিবারটির পাশে আছি । পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিল এই বিনোদ রুইদাস । তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি ভেসে যাবে । আমরা দাবি করছি সঠিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক তাঁর পরিবারকে ।" এবিষয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত এই নিয়ে তাঁরা কোনও প্রতিক্রিয়া জানাবেন না ৷
দুপুরের পর জামুড়িয়া থানার পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটিকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায় । সঠিক ঘটনা জানার চেষ্টা করছে জামুড়িয়া থানার পুলিশ ।